Logo

সারাদেশ

জন্ম থেকেই হার্টের জটিল রোগে মাহিন

অর্থের অভাবে চিকিৎসা বঞ্চিত

Icon

সুনামগঞ্জ প্রতিনিধি

প্রকাশ: ২৪ নভেম্বর ২০২৫, ১২:৪৭

জন্ম থেকেই হার্টের জটিল রোগে মাহিন

বাংলাদেশের খবর

মাত্র ছয় বছরের ফুটফুটে শিশু আরাফাত রহমান মাহিন। বয়সটি যেখানে বন্ধুদের সঙ্গে হাসি-আনন্দে স্কুলের মাঠে দাপিয়ে বেড়ানোর কথা, সেখানে জন্মগত হার্টের মারাত্মক জটিলতায় আজ প্রাণ নিয়ে টানাটানি তার।

বুকে তীব্র ব্যথা, নিঃশ্বাসের কষ্ট আর নীল হয়ে যাওয়া শরীর, এই যন্ত্রণা নিয়েই দিনের পর দিন বেঁচে আছে ছোট্ট মাহিন। চিকিৎসকদের মতে, দ্রুত অপারেশন না হলে যে কোনো মুহূর্তে নিভে যেতে পারে তার জীবন প্রদীপ।

জন্মের পর থেকেই নানা শারীরিক সমস্যা ছিল মাহিনের। আঠারো মাস বয়সে আকস্মিক অসুস্থতার পর বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষায় জানা যায় তার হার্টে দুটি ছিদ্র রয়েছে এবং হার্টের একটি বাল্বে গুরুতর ত্রুটি ধরা পড়ে। চিকিৎসা ব্যাহত হওয়ায় সময়ের সঙ্গে সঙ্গে পরিস্থিতি আরও জটিল হয়ে উঠেছে। সঠিক চিকিৎসার অভাবে শিশুটির পিঠও ক্রমশ কুঁজো হয়ে যাচ্ছে।

চিকিৎসকরা জানান, মাহিন Tertalogy of Fallot (TOF) নামক জন্মগত হার্ট রোগে ভুগছে। বাঁচাতে হলে দ্রুত ব্যয়বহুল হৃদ্‌যন্ত্রের অপারেশন প্রয়োজন। অথচ দরিদ্র পরিবারটির পক্ষে এ অপারেশনের খরচ বহন করা অসম্ভব হয়ে দাঁড়িয়েছে।

মাহিনের মা সজিদা বেগম অভাব-অনটনের সঙ্গে লড়ে ছেলের চিকিৎসা চালিয়ে যেতে চেষ্টা করেছেন। স্বামীর সংসারে নানা সংকটের কারণে টিকতে না পেরে তিনি আশ্রয় নিয়েছেন সুনামগঞ্জের গৌরারং ইউনিয়নের লালপুর গ্রামে বাবার বাড়িতে। সেখানে সেলাইয়ের কাজ করে কোনোমতে সংসার ও ছেলের চিকিৎসা চালিয়ে যাচ্ছেন তিনি।

কান্নাজড়িত কণ্ঠে সজিদা বেগম বলেন, ‘আমার ছেলের হার্টে দুটি ছিদ্র। বাল্ব ছোট হয়ে গেছে। সামান্য হাঁটাহাঁটি করলেই পুরো শরীর নীল হয়ে যায়, অজ্ঞান হয়ে পড়ে। ডাক্তাররা বলেছে দ্রুত অপারেশন করতে হবে। কিন্তু এত টাকা জোগাড় করার সামর্থ্য আমার নেই। মানুষের কাছে হাত পাতছি ছেলে বাঁচানোর জন্য।

মাহিনের নানা শাহজাহান মিয়া বলেন, ‘আমার নাতির চিকিৎসার খরচ জোগানো আমার পক্ষে সম্ভব নয়। সবাইকে অনুরোধ করছি, যদি সাহায্য করেন, আল্লাহ হয়ত তাকে সুস্থ করে দেবেন।”

প্রতিবেশী মোছা. মমতাজ খাতুন জানান, ‘দিন-রাত সেলাইয়ের কাজ করে ছেলের চিকিৎসা চালাচ্ছে সজিদা। কিন্তু এত বড় অপারেশনের খরচ বহন করার মতো সামর্থ্য তাদের নেই।’

স্থানীয় কয়েকটি সামাজিক সংগঠন শিশুটির পাশে দাঁড়িয়েছে। তারা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সহায়তার আবেদন জানাচ্ছেন এবং স্থানীয়ভাবে চাঁদা তুলছেন। তবে প্রয়োজনীয় অর্থের তুলনায় তা খুবই অপ্রতুল।

লালপুর যুব কল্যাণ ঐক্যফ্রন্টের সভাপতি মো. আলাউর হোসেন বলেন, ‘মাহিনের পরিবার অত্যন্ত অসহায়। আমরা চাঁদা তুলে সহায়তার চেষ্টা করছি। সবাই একটু একটু করে এগিয়ে এলে অপারেশন করানো সম্ভব হবে।’

সাযুক সংঘের সাধারণ সম্পাদক মো. শাহীন আহমদ বলেন, ‘বিত্তবান ও প্রবাসীরা সহযোগিতা করলে শিশুটির জীবন বাঁচানো যাবে ইতোমধ্যে কিছু প্রবাসী তাদের জাকাতের অংশ দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।’

সাম্য যুব কল্যাণ সংঘের সভাপতি মো. শফিকুল ইসলাম জনি বলেন, ‘দেশ-বিদেশের সবাইকে মাহিনের জন্য এগিয়ে আসার অনুরোধ করছি। শিশুটি চিকিৎসার অভাবে মারা গেলে আমরা বিবেকের কাছে দায়ী থাকব।’

শিশু বিশেষজ্ঞ ডা. সৈকত দাস বলেন, ‘মাহিনের অবস্থা জটিল। তার জরুরি ভিত্তিতে হার্টের অপারেশন প্রয়োজন। দেরি হলে ঝুঁকি মারাত্মক।’

মো. আব্দুল হালিম/এনএ

Logo
সম্পাদকমণ্ডলীর সভাপতি মোস্তফা কামাল মহীউদ্দীন ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক সৈয়দ মেজবাহ উদ্দিন প্রধান, ডিজিটাল সংস্করণ হাসনাত কাদীর