বান্দরবানে পাহাড়ের চূড়ায় অনুমোদনহীন কটেজের ছড়াছড়ি, বড় দুর্ঘটনার শঙ্কা
সোহেল কান্তি নাথ, বান্দরবান
প্রকাশ: ২৫ নভেম্বর ২০২৫, ১৩:৩৪
ছবি : বাংলাদেশের খবর
বান্দরবানের লামা উপজেলায় সুউচ্চ পাহাড়ের চূড়ায় অনুমোদন ছাড়াই গড়ে উঠছে একের পর এক কটেজ ও ইকো রিসোর্ট। গহীন অরণ্যে খাড়া ও নরম পাহাড়ি ঢালে নিরাপত্তাহীনভাবে এসব স্থাপনা নির্মাণ করায় যেকোনো সময় বড় ধরনের দুর্ঘটনার আশঙ্কা করছেন স্থানীয়রা।
সরেজমিনে দেখা যায়, পর্যটকদের আকর্ষণ করতে লামা মিরিঞ্জা এলাকার গভীর অরণ্যে কাঠ, বাঁশ, টিনসহ হালকা নির্মাণসামগ্রী দিয়ে কটেজ তৈরি করছেন উদ্যোক্তারা। বেশিরভাগ স্থাপনাতেই নেই শক্ত ভিত্তি, রিটেইনিং ওয়াল বা স্থায়ী পিলার। কোথাও কোথাও এমন স্থানে কটেজ নির্মাণ হয়েছে যেখানে সামান্য পাহাড়ধস, অতিবৃষ্টি বা প্রবল বাতাসেই ধসে পড়ার ঝুঁকি রয়েছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক স্থানীয় বাসিন্দা বলেন, ‘এখন চোখ বন্ধ করলেই পাহাড়চূড়ায় কটেজ দেখা যায়। অনেক কটেজ এমন স্থানে তৈরি হয়েছে যেখানে দাঁড়াতেই ভয় লাগে।’
তিনি অভিযোগ করেন, প্রশাসনকে প্রভাবিত করে কিছু কটেজে রাত যাপনের আড়ালে চলছে জুয়া, মদপানসহ নানা অনৈতিক কর্মকাণ্ড। তার মতে, প্রাকৃতিক দুর্যোগ হলে এসব স্থাপনায় বড় ধরনের দুর্ঘটনা বা প্রাণহানির ঘটনাও ঘটতে পারে।
পরিবেশবিদরা বলছেন, পাহাড়ের চূড়ায় এ ধরনের অনিয়ন্ত্রিত ও অনুমোদনহীন নির্মাণ পরিবেশের ভারসাম্য নষ্ট করছে। পাহাড় কাটার ফলে ভূমিধসের ঝুঁকি বাড়ছে; পাশাপাশি হুমকিতে পড়ছে স্থানীয় জীববৈচিত্র্য ও পাহাড়ি ইকোসিস্টেম।
-69255bc544c77.jpg)
লামা মিরিঞ্জা এলাকার মিরিঞ্জা ভ্যালি রিসোর্ট অ্যান্ড রেস্টুরেন্টের মালিক মো. জিয়া বলেন, ‘শুরুতে এলাকায় আমার রিসোর্টটিই ছিল। এখন বিভিন্ন পাহাড়চূড়ায় প্রায় একশর মতো কটেজ গড়ে উঠেছে। এসবের বড় অংশই ঝুঁকিপূর্ণ, সামান্য বৃষ্টি বা ভূমিধসেও ভয়াবহ দুর্ঘটনা ঘটতে পারে।’
বান্দরবান পরিবেশ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক রেজাউল করিম বলেন, ‘ঝুঁকিপূর্ণ কটেজগুলো সম্পর্কে আমরা অবগত। কয়েকজন মালিক পরিবেশ ছাড়পত্রের জন্য আবেদন করেছিলেন, কিন্তু প্রয়োজনীয় কাগজপত্র না থাকায় তা বাতিল করা হয়েছে।’
তিনি জানান, পাহাড়চূড়ায় নির্মিত এসব স্থাপনা শুধু বিপজ্জনকই নয়, আশপাশের প্রাকৃতিক পরিবেশকেও মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করছে।
তিনি আরও বলেন, ‘অবৈধ কটেজের বিরুদ্ধে কয়েকবার অভিযান চালিয়ে জরিমানা করা হয়েছে। খুব দ্রুতই আবারও পরিদর্শন করে অনুমোদনবিহীন ও বিপজ্জনক স্থাপনার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
এদিকে পর্যটন মৌসুম সামনে রেখে কটেজ মালিকরা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রচারণা চালাচ্ছেন। কিন্তু নিরাপত্তা ঝুঁকি থাকা সত্ত্বেও এসব স্থাপনায় পর্যটকদের ভিড় বাড়তে থাকায় বড় ধরনের দুর্ঘটনার আশঙ্কা উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না।
স্থানীয় সূত্র বলছে, গত তিন থেকে চার বছরে লামা মিরিঞ্জা এলাকায় বিভিন্ন পাহাড়ের চূড়ায় ঝুঁকিপূর্ণভাবে ৬৫টির বেশি কটেজ ও ইকো রিসোর্ট গড়ে উঠেছে।
এআরএস

