Logo

সারাদেশ

রূপগঞ্জে শীতের আগমনী বার্তা, খেজুর রস সংগ্রহে ব্যস্ত গাছিরা

Icon

এনবি আকাশ, রূপগঞ্জ (নারায়ণগঞ্জ)

প্রকাশ: ২৫ নভেম্বর ২০২৫, ১৪:৫৩

রূপগঞ্জে শীতের আগমনী বার্তা, খেজুর রস সংগ্রহে ব্যস্ত গাছিরা

ছবি : বাংলাদেশের খবর

ChatGPT said:

শীতের আগমনী বার্তা জানাচ্ছে নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ উপজেলা। দিনের তাপমাত্রা কমলেও সন্ধ্যার পর কুয়াশা নেমে আসে, আর ভোরের আগে প্রকৃতিতে ছড়িয়ে পড়ে শীতের স্নিগ্ধতা।

ধানক্ষেতের শিশির, পুকুরপাড়ের ঠান্ডা বাতাস, গ্রামীণ পথে পাতার কাঁপুনি—সবই যেন পিঠা-পুলির মৌসুমের আগমনী সংকেত দিচ্ছে। এ শীতের বার্তার সঙ্গে রূপগঞ্জের খেজুর রস সংগ্রহকারীদের ব্যস্ততা দেখা যাচ্ছে।

উপজেলার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায়—জমির আইল, গ্রামীণ রাস্তা, পুকুরপাড়, বাড়ির আঙিনা—যেখানে খেজুর গাছ আছে, সেখানেই চলছে ‘কাম দেওয়ার’ প্রস্তুতি।

স্থানীয় গাছিরা রশি বেঁধে উঁচু গাছে চড়ে শাখা-প্রশাখা ছেঁচে পরিষ্কার করছেন। স্থানীয় ভাষায় এই প্রক্রিয়াকে ‘কাম দেওয়া’ বলা হয়। প্রথম পর্যায়ের ছেঁচা শুকিয়ে গেলে আবারও নলি লাগানো হবে। এরপরই শীতের প্রথম মিষ্টি রস ঝরে পড়বে।

রস ঝরতে শুরু করলে শুধু রূপগঞ্জ নয়, আশপাশের এলাকা এবং রাজধানী ঢাকা থেকেও প্রতিদিন সন্ধ্যা থেকে ভোর পর্যন্ত ছুটে আসেন রসপ্রেমীরা। খেজুর রসের স্বাদ উপভোগ করতে গড়ে ওঠে উৎসবমুখর পরিবেশ।

হাটাবো টেকপাড়া এলাকার রস ব্যবসায়ী মোশারফ মিয়া বলেন, ‘এবার ৫০টি খেজুর গাছ কাম দিয়েছি। সবই নিজের। প্রতিটি গাছ থেকে প্রতিদিন ৮–১০ লিটার রস পাওয়ার আশা। রস বিক্রি করে ভালো আয় হয়। পুরো প্রস্তুতি শেষ, এখন শুধু রস ঝরার অপেক্ষা।’

সোহাগ নামে এক গাছি বলেন, ‘আগের মতো এখন আর খেজুর গাছ নেই, রসও কম পাওয়া যায়। তবে এ বছর ৩০টি গাছ ঠিকা নিয়েছি। আশা করছি ভালো পরিমাণ রস পাবো।’

মধুখালী গ্রামের গাছি জসিম উদ্দিন বলেন, ‘২০টি গাছ থেকে রস তুলব। এর মধ্যে ১০টি নিজের, ১০টি ঠিকা নেওয়া। প্রতি বছর শীতের মৌসুমে ব্যস্ত হয়ে যাই। গাছের পরিচর্যার অভাবে অনেক গাছ নষ্ট হয়ে গেছে।’

নরাবো এলাকার খায়রুল ইসলাম জানান, ‘নিজের ৩০টি গাছ আছে, ঠিকা নিয়েছি আরও ১৫টি। মৌসুম শেষে মালিককে ১৫ হাজার টাকা দিতে হবে। গত বছর গুড়ের দাম ৮০–১০০ টাকা কেজি, নালির দাম ১০০–১২০ টাকা। দাম ঠিক থাকলে প্রতিদিনই কয়েকশো থেকে হাজার টাকা লাভ হয়।’

হাটাবো এলাকার ওমর ফারুক বলেন, ‘শীতের এই সময় আশপাশের গ্রামে উৎসবমুখর পরিবেশ তৈরি হয়। রসের দোকানের সামনে মোটরসাইকেল সারি, চায়ের দোকানে আড্ডা, ভোরের কুয়াশায় রস খেতে মানুষের ভিড়—সব মিলিয়ে শীতবন্দনা উৎসব। রস বিক্রি করে স্থানীয় ছেলেরা কর্মসংস্থান পান এবং আর্থিকভাবে লাভবান হন।’

রূপগঞ্জ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আফরোজা সুলতানা জানান, ‘উপজেলায় প্রায় ২ হাজার খেজুর গাছ রয়েছে। গাছের সংখ্যা কিছুটা কম হলেও এবার উৎপাদনের সম্ভাবনা ভালো। খেজুর গাছ আলাদা পরিচর্যার প্রয়োজন হয় না। বাড়ির আশপাশ, জমির আইল বা রাস্তার ধারে গাছ লাগালে কৃষকরা আরও লাভবান হবেন।’

শীত বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে রসপ্রেমীদের ভিড় আরও জমজমাট হবে বলে আশা স্থানীয়দের। রূপগঞ্জের খেজুর রস শুধু গ্রামীণ ঐতিহ্য নয়, এটি শীতের এক ব্যতিক্রমী উৎসব, যা মানুষকে দূর দূরান্ত থেকে টেনে আনে। অনেকে রস সরাসরি বাজারে বিক্রি করেন, কেউ তা পাটালি বা দানা গুড়ে পরিণত করেন। কুয়াশাঘেরা ভোরে রস ঝরার শব্দ, পাটালি তৈরির মিষ্টি ঘ্রাণ আর গুড় জ্বালানোর ধোঁয়া—সব মিলিয়ে রূপগঞ্জে শীতের জাদুকরী আবহ সৃষ্টি করে।

গাছিরাও রস বিক্রিতে খুশি। তারা বলেন, রাত বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে রসপ্রেমীদের সংখ্যা বাড়ে, অনেক সময় ভোর পর্যন্ত বিক্রি করতে হয়। এতে আয়ও বাড়ে, খেজুর রসের ঐতিহ্যও টিকে থাকে।

এআরএস

Logo
সম্পাদকমণ্ডলীর সভাপতি মোস্তফা কামাল মহীউদ্দীন ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক সৈয়দ মেজবাহ উদ্দিন প্রধান, ডিজিটাল সংস্করণ হাসনাত কাদীর