রূপগঞ্জে বিল্ডিং কোড উপেক্ষা, ভূমিকম্পে ঝুঁকিতে হাজারো ভবন
রূপগঞ্জ (নারায়ণগঞ্জ) প্রতিনিধি
প্রকাশ: ২৬ নভেম্বর ২০২৫, ১৫:৫২
রাজধানী ঢাকার উপকণ্ঠে নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে ভবন নির্মাণে বিল্ডিং কোড অমান্য এখন চরম পর্যায়ে পৌঁছেছে। তারাবো, বরপা, ভুলতা, গোলাকান্দাইল, কাঞ্চনসহ অধিক জনবহুল এলাকায় শিল্পকারখানা ও আবাসিক ভবন নির্মাণ চলছে নিয়ম-নীতি উপেক্ষা করে। সাম্প্রতিক ভূমিকম্পে বহু স্থাপনায় ফাটল দেখা দিলেও সেগুলো জোড়া-তালি দিয়ে পুনরায় ব্যবহারের কলাকৌশল চলছে। ফলে বড় মাত্রার ভূমিকম্প হলে প্রাণহানি ও ব্যাপক ধসের আশঙ্কা করছেন বিশেষজ্ঞরা।
সরেজমিনে দেখা গেছে, রূপগঞ্জের বিভিন্ন এলাকায় ছোট-বড় মিলিয়ে এক হাজারেরও বেশি শিল্পকারখানা গড়ে উঠেছে। শিল্পায়নকে কেন্দ্র করে আবাসিক বাড়িঘর নির্মাণও বেড়েছে কয়েকগুণ। কিন্তু বিল্ডিং কোড অনুযায়ী সঠিক নকশা, উপযুক্ত রড-ইট-বালু-সিমেন্ট ব্যবহার না করেই এসব স্থাপনা নির্মাণ করা হচ্ছে।
গত ২১ নভেম্বরের ভূমিকম্পে বেশ কয়েকটি কারখানা, বাড়িঘর, মন্দিরসহ বিভিন্ন স্থাপনার দেয়ালে ফাটল দেখা দেয়। যে কারণে গোলাকান্দাইল দক্ষিণপাড়া ইসলামবাগ এলাকায় দেয়াল ধসে দশ মাস বয়সী ফাতেমা আক্তার নামের এক শিশুর মৃত্যু হয়।
এলাকাবাসীর অভিযোগ, বড় ধরনের ভূমিকম্প হলে রূপগঞ্জে হাজারো ভবন ধসে পড়তে পারে। নকশাবহির্ভূত ভবন নির্ণয়ে প্রশাসন ও রাজউকের অভিযান থাকলেও তা যথেষ্ট কার্যকর নয়। স্থানীয় কর্তৃপক্ষের অনুমতি নিয়ে অনেক কারখানা কর্তৃপক্ষ ইচ্ছেমতো ভবন নির্মাণ করছে।
সম্প্রতি ভূমিকম্পে এওয়ান পোলার, আবুল খায়ের গ্রুপের রবিনটেক্স, ম্যাক্স স্যুয়েটারসহ বিভিন্ন কারখানার ভবনে বড় ধরনের ফাটল দেখা গেছে; মাটির বাড়ির দেয়ালও ফেটে গেছে।
২০২৩ সালের ২৫ এপ্রিল রূপগঞ্জের তারাবো এলাকায় উৎপত্তিস্থল নিয়ে ৪ মাত্রার ভূমিকম্প অনুভূত হয়। একই বছরের ১৭ এপ্রিল ডহরগাঁও এলাকায় উৎপত্তিস্থল নিয়ে আরও একটি ভূমিকম্প আঘাত হানে, যার মাত্রা ছিল ৪.৩।
ভূতাত্ত্বিকভাবে সক্রিয় এই অঞ্চলে বড় ধরনের ভূমিকম্প হলে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির আশঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্টরা।
রূপগঞ্জে প্রায় ৫,৫০০-এর বেশি বহুতল ভবন রয়েছে। এর বৃহত্তম অংশ তারাবো ও কাঞ্চন পৌরসভা, ভুলতা এবং গোলাকান্দাইল এলাকায় অবস্থিত। অধিকাংশ ভবনই জরুরি সিঁড়ি, অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা, অনুমোদিত নকশা কোনোটিই মানা ছাড়াই নির্মিত হয়েছে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, রূপগঞ্জে দ্রুত ঝুঁকিপূর্ণ ভবন শনাক্ত, রেট্রোফিটিং, অপসারণ এবং জনসচেতনতা বৃদ্ধি না হলে একটি মাঝারি মাত্রার ভূমিকম্পও পরিণত হতে পারে ভয়াবহ মানবিক বিপর্যয়ে। এখনই কঠোর ব্যবস্থা না নিলে ভবিষ্যৎ ক্ষতি থামানো দুরূহ হয়ে পড়বে। কাজেই এ ব্যাপারে অবহেলা করার সুযোগ নেই।
নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক গোলাম ফারুক খোকন বলেন, রূপগঞ্জে অনেক পুরানো ভবন রয়েছে। তারাবো চনপাড়া ঘনবসতিপূর্ন এলাকা। এগুলোর প্রায় সিংহভাগই ঝুঁকিপূর্ণ। নতুন অনেক ভবনও ভূমিকম্প প্রতিরোধী নকশা ছাড়া নির্মাণ করা হচ্ছে।
ফায়ার সার্ভিসের সহকারী পরিচালক আনোয়ার হোসেন বলেন, অপরিকল্পিত ভবন নির্মাণ,নিম্নমানের নির্মাণ সামগ্রীর ব্যবহারে ভবনগুলো আরও দুর্বল হয়ে পড়ছে।
রাজউকের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট লিটন সরকার বলেন, নকশা ও অনুমোদনবিহীন ভবন তৈরির পাশাপাশি নির্দিষ্ট মাপের জায়গা না রেখেই অনেকে ভবন নির্মাণ করা হচ্ছে। ইমারত নির্মাণ আইন লঙ্ঘনসহ নানা অনিয়মের অভিযোগে নির্মাণাধীন ভবনগুলোর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে। এই অভিযান চলমান রয়েছে। কিন্তু সুফল হচ্ছে না।
রূপগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. সাইফুল ইসলাম বলেন, ভূমিকম্পে ফেটে যাওয়া ভবন সরকারি ও বেসকারি প্রকৌশলী দলের পরিদর্শন অব্যাহত রয়েছে। ভবনের কোন কোন অংশে ফাটল দেখা দিলেও কাঠামোগতভাবে জুঁকিপূর্ণ নয়। ধর্য্য ও তথ্যের সততা যাচাই দুর্যোগে আমাদের সবচেয়ে বড় সুরক্ষা। যাচাই-বাচাই ছাড়া কোন তথ্য সামাজিক মাধ্যমে প্রচার বন্ধ করতে হবে। গুজব ছড়িয়ে মানুষকে আতঙ্কিত করা দন্ডনীয় অপরাধ। গুজব দুর্যোগের চেয়েও ভয়াভহ। আতঙ্ক নয়, সচেতনতা বৃদ্ধি করতে হবে।
এন বি আকাশ/আইএইচ

