Logo

সারাদেশ

নয়াপাড়া আশ্রয়ণ প্রকল্প : ‘ঘর আছে, মানুষ নেই’

Icon

আতাউর রহমান সোহেল, শ্রীপুর (গাজীপুর)

প্রকাশ: ২৭ নভেম্বর ২০২৫, ১৭:৪৯

নয়াপাড়া আশ্রয়ণ প্রকল্প : ‘ঘর আছে, মানুষ নেই’

ছবি : বাংলাদেশের খবর

গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলার নয়াপাড়া সরকারি আশ্রয়ণ প্রকল্পে ঘর রয়েছে, কিন্তু সেগুলোতে বাস করছেন খুব কম মানুষ।

সরেজমিন পরিদর্শনে দেখা গেছে, অধিকাংশ ঘরের দরজায় তালা ঝুলছে, বাড়ছে ঝোপঝাড়।

২০২৩ সালের ২৩ মার্চ নয়াপাড়া গ্রামের ৮ একর ৯ শতাংশ জমির ওপর ১৪২টি পাকাঘর নির্মাণ করা হয়। সুবিধাভোগীদের মধ্যে এসব ঘর এবং দুই শতাংশ জমির দলিল হস্তান্তর করা হয়। উদ্বোধনের পর অনেক পরিবার ঘরে উঠলেও কয়েক মাসের মধ্যে অনেকে অন্যত্র চলে যান।

স্থানীয়দের অভিযোগ, ১৪২টির মধ্যে ৬৭টি ঘর তালাবদ্ধ। প্রায় ৭৫টি ঘরে নিয়মিত মানুষ থাকলেও বাকি ঘরগুলোর দুই-একটিতে মাঝে মাঝে কেউ আসে। খালি ঘরগুলোতে জন্মেছে ঝোপঝাড় এবং তালাবদ্ধ বারান্দায় সন্ধ্যার পর মাদকসেবীদের আড্ডা চলে।

স্থানীয়দের মতে, আশ্রয়ণ প্রকল্প এলাকায় কাজের সুযোগ ও শিক্ষা-সুবিধার অভাবে অনেক পরিবার স্থায়ীভাবে থাকতে আগ্রহী হন না। ফলে প্রকল্পের পরিবেশ নষ্ট হওয়ার পাশাপাশি স্থানীয় মসজিদের ইমামের বেতন পরিশোধেও চাপ পড়ছে।

সরেজমিনে দেখা যায়, ঘর পাওয়া অনেকেরই নিজস্ব বাড়িঘর রয়েছে। প্রকৃত ভূমিহীনরা অভিযোগ করেছেন, বারবার আবেদন করেও তারা ঘর পাননি। বরাদ্দপ্রাপ্ত কয়েকজন পার্শ্ববর্তী বাড়িতে বসবাস করলেও ঘরটি তালাবদ্ধ রেখেছেন।

নগরহাওলা গ্রামের কাজল মিয়ার বরাদ্দপ্রাপ্ত ৩৩ নম্বর ঘর এ প্রকল্পের অনিয়মের অন্যতম উদাহরণ। তার নিজস্ব বাড়ি থাকা সত্ত্বেও তিনি মাসে লাখ টাকার বেশি ভাড়া পান বলে অভিযোগ রয়েছে। যদিও কাজল মিয়া দাবি করেছেন, ‘কাগজপত্র যাচাই-বাছাই করেই আমাকে ঘর দেওয়া হয়েছে।’

স্থানীয়রা জানিয়েছেন, ১২৬ নম্বর ঘরের মালিক সোহাগ, ২৯ নম্বর ঘরের মালিক রিমা আক্তারসহ একাধিক বরাদ্দপ্রাপ্ত ব্যক্তি উদ্বোধনের পর থেকে এখানে বসবাস করছেন না। এছাড়া ৩৩, ৩৫, ৩৭, ৩৮, ৮৭ ও ১১৮ নম্বর ঘর দীর্ঘদিন ধরে তালাবদ্ধ।

নয়াপাড়া আশ্রয়ণ প্রকল্পের সভাপতি আব্দুল লতিফের স্ত্রী নাজমা আক্তার বলেন, ‘রাতে তালাবদ্ধ ঘরের বারান্দায় মাদকসেবীরা আড্ডা দেয়। এছাড়া ঘরে মানুষ না থাকায় মসজিদের ইমামের বেতন পরিশোধের বোঝা অল্প কয়েকজন বাসিন্দার ওপর চাপছে। ফাঁকা ঘরগুলো প্রকৃত ভূমিহীনদের মাঝে পুনর্বণ্টন করা হোক।’

শ্রীপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সজীব আহমেদ বলেন, ‘আশ্রয়ণ প্রকল্প এলাকায় সরকারি বরাদ্দে স্কুল নির্মাণ করা হয়নি, এটি ব্যক্তি উদ্যোগে হয়েছে। কারও বিরুদ্ধে অনিয়ম বা প্রভাব খাটিয়ে ঘর নেওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেলে তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

উদ্দেশ্য ছিল ভূমিহীনদের পুনর্বাসন, কিন্তু বর্তমানে ‘ঘর আছে, মানুষ নেই’ পরিস্থিতি প্রকল্পের মূল লক্ষ্যকে ব্যাহত করছে। স্থানীয়রা দাবি করছেন, তদারকি বাড়ানো, অনিয়ম তদন্ত এবং তালাবদ্ধ ঘরগুলো প্রকৃত ভূমিহীনদের মাঝে পুনর্বণ্টন করলে প্রকল্পে শৃঙ্খলা ও প্রাণ ফিরে আসবে।

এআরএস

Logo
সম্পাদকমণ্ডলীর সভাপতি মোস্তফা কামাল মহীউদ্দীন ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক সৈয়দ মেজবাহ উদ্দিন প্রধান, ডিজিটাল সংস্করণ হাসনাত কাদীর