বগুড়ায় স্ত্রী-সন্তান হত্যার ঘটনায় মামলা, স্বামী গ্রেপ্তার
বগুড়া প্রতিনিধি
প্রকাশ: ২৭ নভেম্বর ২০২৫, ২০:৪৯
ছবি : বাংলাদেশের খবর
বগুড়ার শাজাহানপুর উপজেলার খলিশাকান্দি গ্রামে মা ও দুই শিশুকে নৃশংসভাবে হত্যার ঘটনায় নিহত সাদিয়া মোস্তারিনের স্বামী সেনাসদস্য শাহাদাত হোসেন কাজলকে (২৭) প্রধান আসামি করে মামলা দায়ের করা হয়েছে।
বৃহস্পতিবার (২৭ নভেম্বর) সাদিয়ার মা রাবেয়া সুলতানা শাজাহানপুর থানায় মামলাটি করেন। পরে তাকে আদালতে সোপর্দ করা হলে বিচারক শাহাদাতকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন।
বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন শাজাহানপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শফিকুল ইসলাম।
 - 2025-11-27T204821-692864ee02378.jpg)
তিনি জানান, মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ৯টার দিকে খলিশাকান্দি দহপাড়ার একটি টিনসেট ঘর থেকে সাদিয়া মোস্তারিন (২২), তার তিন বছরের মেয়ে সাইফা এবং সাত মাসের ছেলে সাইফের মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। দুই শিশুর গলা কাটা ছিল এবং সাদিয়ার গলায় ওড়না প্যাঁচানোর দাগ পাওয়া যায়। এ মর্মান্তিক ঘটনাকে কেন্দ্র করে পুরো এলাকায় শোক, আতঙ্ক ও ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে।
ঘটনার পরদিনই পুলিশ শাহাদাত হোসেনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য হেফাজতে নেয়। তিনি ময়মনসিংহ সেনানিবাসে কর্মরত ছিলেন এবং কয়েকদিন আগে ছুটি নিয়ে বাড়িতে আসেন।
মামলার এজাহারে রাবেয়া সুলতানা উল্লেখ করেছেন, গত তিন বছর ধরে শাহাদাত তার মেয়ের ওপর নিয়মিত শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন চালাতেন। জমি বিক্রির টাকা ও মোটরসাইকেল কেনার জন্য তিন লাখ টাকা দাবি করেন তিনি। ঘটনার আগের দিনও শাহাদাত ফোনে টাকা দাবি করেন এবং সাদিয়াকে মারধরের কথা জানান। রাবেয়ার দাবি, ২৪ নভেম্বর সন্ধ্যা থেকে পরদিন দুপুরের মধ্যে শাহাদাত ও অজ্ঞাত সহযোগীরা ধারালো অস্ত্র দিয়ে দুই শিশুকে এবং সাদিয়াকে শ্বাসরোধে হত্যা করে ঘটনাটিকে আত্মহত্যা হিসেবে সাজানোর চেষ্টা করেন।
ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিবারের সদস্যরা রক্তাক্ত লাশের পাশে রক্তবিহীন একটি লোহার বটি দেখতে পান-যা তাদের মতে পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ডের ইঙ্গিত বহন করে।
অন্যদিকে শাহাদাতের পরিবারের দাবি, সাদিয়া মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছিলেন এবং আগেও আত্মহত্যার চেষ্টা করেছিলেন। তাদের মতে, সাদিয়া দুই সন্তানকে হত্যার পর নিজেই আত্মহত্যা করেছেন। তবে নিহতের পরিবার এই দাবি দৃঢ়ভাবে প্রত্যাখ্যান করেছে।
স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, দরজা ভেঙে ঘরে প্রবেশের পর একসঙ্গে তিনটি লাশের দৃশ্য দেখে হতবাক হয়ে যান সবাই। আশপাশে কোনো শব্দ না পাওয়ায় ঘটনাটি আরও রহস্যজনক বলে মনে হচ্ছে।
ওসি শফিকুল ইসলাম বলেন, ‘হত্যা নাকি আত্মহত্যা-এ মুহূর্তে নিশ্চিত করে বলা যাচ্ছে না। মামলাটি গুরুত্বসহকারে তদন্ত করা হচ্ছে। প্রয়োজনে আসামিকে রিমান্ডে এনে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে।’
ময়নাতদন্ত শেষে সাদিয়ার লাশ তার গ্রামের বাড়ি ভান্ডারপাইকায় এবং দুই শিশুর লাশ খলিশাকান্দিতে দাফন করা হয়। নৃশংস এ ঘটনার বিচার দাবিতে এলাকাবাসীর মধ্যে তীব্র ক্ষোভ বিরাজ করছে।
- জুয়েল হাসান/এমআই

