নদীতে ভাসমান হাসপাতাল, ১০ টাকায় মিলছে চিকিৎসাসেবা
ধুনট (বগুড়া) প্রতিনিধি
প্রকাশ: ০১ ডিসেম্বর ২০২৫, ১২:৩৩
বাংলাদেশের খবর
বগুড়ার ধুনট উপজেলার শিমুলবাড়ী যমুনা নদীর তীরে আবারও নোঙর করেছে লাইফবয় ফ্রেন্ডশিপ ভাসমান হাসপাতাল। যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন চরাঞ্চলের মানুষের জন্য এটি এখন আধুনিক চিকিৎসার বড় ভরসাস্থল। মাত্র ১০ টাকা (নারী) ও ২০ টাকায় (পুরুষ) মিলছে চিকিৎসক পরামর্শ, পরীক্ষা-নিরীক্ষা এবং প্রয়োজনীয় ওষুধসহ সব সেবা।
বেসরকারি সংস্থা ফ্রেন্ডশিপ ও ইউনিলিভার বাংলাদেশ পরিচালিত এ জাহাজ হাসপাতালে রয়েছে ডিজিটাল এক্স-রে, ইসিজি, আল্ট্রাসনোগ্রামসহ সব ধরনের আধুনিক প্যাথলজি সেবা। মুমূর্ষু রোগীদের আনা–নেওয়ার জন্য সার্বক্ষণিক প্রস্তুত থাকে নৌ অ্যাম্বুলেন্স। হাসপাতালটি শুক্রবার সহ সপ্তাহের সবদিনই সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত চিকিৎসক, নার্স ও টেকনিশিয়ানসহ ৩৬ জন কর্মী সেবা প্রদান করেন।
শিমুলবাড়ী গ্রামের সোলায়মান হোসেন মণ্ডল দীর্ঘদিন ধরে চোখের সমস্যায় ভুগছিলেন। অর্থাভাবে শহরে গিয়ে চিকিৎসা করানো তার পক্ষে সম্ভব ছিল না। তিনি বলেন, ‘শহরে যেতে অনেক খরচ লাগে। এখন বাড়ির পাশেই জাহাজ হাসপাতালে চিকিৎসা ও ওষুধ পাচ্ছি। ধীরে ধীরে সুস্থ হয়ে উঠছি।’
ভাণ্ডারবাড়ী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান বেলাল হোসেন বাবু বলেন, ‘ভাসমান হাসপাতাল যমুনা পাড়ের দরিদ্র মানুষের চিকিৎসা সেবায় নতুন দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। অল্প টাকায় ভালো সেবা পেয়ে মানুষের মনে আশার আলো ফুটে উঠেছে।’
তার মতো কাজিপুর উপজেলার মেঘাই গ্রামের কোরবানি আলী, সারিয়াকান্দির ছফুরা খাতুন, কালাইপাড়ার চানবানু, ভাণ্ডারবাড়ী ইউনিয়নের ক্ষিতীশ মণ্ডলসহ বিভিন্ন এলাকার মানুষ এ হাসপাতাল থেকে নিয়মিত সেবা নিচ্ছেন।
চোখের সমস্যা নিয়ে চিকিৎসা নিতে আসা ভাণ্ডারবাড়ীর জাহিদ হাসান সাগর বলেন, ‘এত কম টাকায় এত ভালো চিকিৎসাসেবা আগে কোথাও পাইনি। হাসপাতাল এখন আমাদের বাড়ির কাছেই।’
ভাণ্ডারবাড়ী ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান আতিকুর করিম আপেল বলেন, ‘চরাঞ্চলের মানুষ মূল ভূখণ্ড থেকে অনেকটাই বিচ্ছিন্ন। মুমূর্ষু রোগীদের সময়মতো হাসপাতালে নেওয়া কঠিন হয়ে পড়ে। ভাসমান হাসপাতাল এসে মানুষের জীবন বাঁচাতে বড় ভূমিকা রাখছে।’
লাইফবয় ফ্রেন্ডশিপ ভাসমান হাসপাতালের প্রোগ্রাম ম্যানেজার (স্বাস্থ্য) ডা. শফিউল আজিম বলেন, ‘চরাঞ্চলে চিকিৎসার সুবিধা নেই বললেই চলে। ওষুধের দোকানও নেই। তাই মানুষের দোরগোড়ায় সেবা পৌঁছানোই আমাদের মূল লক্ষ্য। প্রতিদিন কমপক্ষে ২০০ রোগী চিকিৎসা নিচ্ছেন, যার মধ্যে চোখের রোগীর সংখ্যা সবচেয়ে বেশি।’
যমুনা পাড়ের চরাঞ্চলের মানুষের দীর্ঘদিনের চিকিৎসা বঞ্চনার অবসান ঘটিয়ে নতুন আশার আলো নিয়ে এসেছে এই ভাসমান হাসপাতাল। সাশ্রয়ী ও সহজলভ্য স্বাস্থ্যসেবা এখন মানুষের ঘরেই পৌঁছে যাচ্ছে।
মিনহাজ উদ্দিন/এনএ

