ফেনীতে ভাঙা সেতুর উপর বাঁশের সাঁকো, দুর্ভোগে ২০ হাজার গ্রামবাসী
ফেনী প্রতিনিধি
প্রকাশ: ০১ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৩:৫০
বাংলাদেশের খবর
ভয়াবহ বন্যায় উজান থেকে নেমে আসা পানির তীব্র স্রোতে ভেঙে যাওয়া সেতুর উপর ৩ বছর ধরে বাঁশের সাঁকো ব্যবহার করে চলাচল করছে পরশুরামের চিথলিয়া ইউনিয়নে ৮ নং ওয়ার্ডে নোয়াপুর গ্রামের মানুষ। এই ঝুঁকি পূর্ণ সাঁকোই বর্তমানে তাদের একমাত্র ভরসা।
২০২৩ সালে ভয়াবহ বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত এ রাস্তাটিই ২০ হাজার মানুষের চলাচলের একমাত্র ভরসা। কিন্তু বন্যার তিন বছর পরেও মেরামত করার কোনো খবর নেই কর্তৃ পক্ষের।
ভেঙে যাওয়ার পর স্থানীয় বাসিন্দারা নিজেরা বাঁশ দিয়ে তৈরি করেছে এই সাঁকো। প্রতিদিন জীবনের ঝুঁকি নিয়ে সাঁকো পার হচ্ছে শত শত স্কুলশিক্ষার্থী, ব্যবসায়ী, কৃষক ও বৃদ্ধসহ সাধারণ মানুষ।
স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, ‘রাস্তাটি ভেঙে যাওয়ার পর জরুরি প্রয়োজনে যানবাহন চলাচল করতে না পারায় চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। কৃষকরা শাকসবজি ও ক্ষেতের ফসল কাঁধে নিয়ে এই সাঁকো দিয়েই পারাপার হতে হয়। যেকোনো সময় ঘটতে পারে দুর্ঘটনা। বৃষ্টির সময় সাঁকো পানির নিচে তলিয়ে যায়, তখন চলাচল পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যায়।
ধনিকুন্ডা প্রাইমারী স্কুল, ধনিকুন্ডা হোসনে আরা উচ্চ বিদ্যালয়, আলা উদ্দিন আহমেদ চৌধুরী দাখিল মাদ্রাসা, নোয়াপুর হাফিজিয়া মাদ্রাসার শিক্ষার্থীরা প্রতিদিন এই বাঁশের সাঁকো পার হয়ে বিদ্যালয়ে যান।
নবম শ্রেণির এক শিক্ষার্থী জানান, ‘ছোট ছাত্র ছাত্রীরা একা সাঁকো পার হতে পারে না। অন্যের সহযোগিতায় পার হতে হয়। বৃষ্টি এলে পানি বেড়ে যায় তখন বিকল্প রাস্তা ব্যবহার করে যাতায়াত করতে হয়। বিকল্প রাস্তা ব্যবহার করার জন্য অনেক সময় নষ্ট করতে হয়।
স্থানীয় বাসিন্দা রহিম জানান, ‘অনেক সময় সাঁকো থেকে পড়ে কেউ কেউ আহত হয়েছে।’
নোয়া পুর গ্রামের জসিম চৌধুরী জানান, ‘বর্ষার সময় প্রবল স্রোতে সাঁকো ডুবে যায় তখন ছেলে মেয়েদের স্কুলে পাঠানো অসম্ভব হয়ে যায়। ব্যবসায়ীদের ব্যবসা বন্ধ করে বসে থাকতে হয়। সাকোঁ দিয়ে যাতায়াত বন্ধ থাকায় দিন মজুরদের অনাহারে দিন কাটে।’
আবু হাসনাত মামুন বলেন, ‘এই রাস্তা ২০২৩ সালে বন্যায় ভেঙে যায়। প্রায় ৩ বছর হয়ে গেছে কিন্তু মেরামত করার জন্য কেউই এখন আসে নাই। এখন সবাই পায়ে হেঁটে পার হচ্ছেন। কোন গাড়ি চলাচল করতে পারে না।’
মাসুম চৌধুরী জানান, ‘বছরের পর বছর যানবাহন চলাচল বন্ধ থাকায় হাট বাজার, হাসপাতাল, স্কুল কলেজ, মাদ্রাসায় যাতায়াতের জন্য সীমাহীন দুর্ভোগ পোহাচ্ছে অন্তত ১৫ হাজার মানুষ। একাধিকবার কর্তৃপক্ষ কে জানানো হলেও কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।’
ইউনিয়ন পরিষদের সচিব আইয়ুব জানান, ‘আমাকে এই বিষয়ে কেউ বলেনি। টাকার বাজেট আসলে নতুন বরাদ্দ দেওয়া হবে।’
এ বিষয়ে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি) পরশুরাম উপজেলা নির্বাহী প্রকৌশলী শাহ আলম ভূঁইয়া জানান, ‘এ বিষয়ে আমার জানা নেই। আমি আজকে জানলাম। আমি সরেজমিনে ঘুরে আসব। এবং দ্রুত বরাদ্দ নিয়ে কাজ করার চেষ্টা করব।’
তিনি আরও জানান, ‘নতুন বরাদ্দ এলে দ্রুত কাজ আরম্ভ করা হবে। একটি নতুন সেতু নির্মাণের জন্য প্রস্তাব উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নিকট পাঠানো হবে। অনুমোদন পেলে কাজ আরম্ভ করা হবে।’
এম. এমরান পাটোয়ারী/এনএ

