ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা
কুমিল্লায় ৫ বছর লড়াইয়ের পর মুক্ত দুই সাংবাদিক
সোহাইবুল ইসলাম সোহাগ, কুমিল্লা
প্রকাশ: ০১ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৫:০৫
ছবি : সংগৃহীত
কুমিল্লার নানুয়ার দিঘির পাড়ে আলোচিত ঘটনায় সংবাদ প্রকাশের দায়ে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে দায়ের হওয়া মামলায় অবশেষে খালাস পেয়েছেন সাংবাদিক সাজ্জাদ হোসেন শিমুল ও তার ভাই ফয়সাল মুবিন পলাশ।
প্রায় পাঁচ বছর ধরে চলা হয়রানি ও দীর্ঘ আইনি লড়াইয়ের পর বৃহস্পতিবার ট্রাইব্যুনাল তাদের বিরুদ্ধে দায়ের হওয়া অভিযোগের প্রসিডিংস ড্রপ করে। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন মামলার আইনজীবী অ্যাডভোকেট আরিফুর রহমান।
শিমুল ও পলাশ কুমিল্লার মুরাদনগর উপজেলার বাঙ্গরা গ্রামের সাবেক সেনা কর্মকর্তা নজরুল ইসলামের সন্তান। শিমুল বর্তমানে এশিয়ান টিভি কুমিল্লা উত্তর প্রতিনিধি ও দৈনিক বাংলা’র মুরাদনগর প্রতিনিধি হিসেবে কর্মরত।
মামলার প্রেক্ষাপট অনুযায়ী, ২০২১ সালের অক্টোবর মাসে কুমিল্লার নানুয়ার দিঘির পাড়ের পূজামণ্ডপে ধর্ম অবমাননার গুজব ছড়িয়ে হামলা, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে। এ সংবাদ প্রকাশের জেরে সিআইডি কুমিল্লা শিমুল ও পলাশকে আটক করে এবং ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা দায়ের করে। শিমুলকে ১১ মাস কারাভোগ করতে হয়। জামিনে মুক্তি পেলেও মামলার জটিলতায় তিন বছর ধরে আইনি প্রক্রিয়ায় ঝুলে ছিলেন দুই ভাই।
দীর্ঘ বৈধ প্রক্রিয়ার পর অবশেষে মামলার ইতি টানায় স্বস্তিতে দুই সাংবাদিকের পরিবার। ঘটনার পর থেকে আর্থিক, মানসিক ও সামাজিকভাবে বিপর্যস্ত অবস্থায় থাকা পরিবার এখন স্বাভাবিক জীবনে ফিরে যাওয়ার আশা করছেন।
আদালতের রায়ে স্পষ্ট হয়েছে, কথিত ‘ধর্ম অবমাননা’কে কেন্দ্র করে সৃষ্ট বিতর্কিত ঘটনার সঙ্গে সাংবাদিকদের কোনো অপরাধ সম্পর্কিত নয়। সংবাদ প্রকাশের স্বাধীনতা অপরাধ নয়।
একই মামলার অপর আসামি মোহাম্মদ ইকবাল হোসেনও (গদা ইকবাল) বিনা ফিতে আইনি সহায়তা পেয়েছেন এবং খালাস পেয়েছেন।
সাজ্জাদ হোসেন শিমুল বলেন, ‘সত্য ও দায়িত্বশীল সাংবাদিকতার পথে কাজ করছিলাম। সেই দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে আমাকে ও আমার পরিবারকে অযথা ভুগতে হয়েছে। ১১ মাস কারাগারে কাটিয়েছি। আজ ন্যায়বিচার পেলাম—এটাই সবচেয়ে বড় প্রাপ্তি।’
তার ভাই ফয়সাল মুবিন পলাশ বলেন, ‘এই মামলার কারণে আমাদের জীবন থমকে গিয়েছিল। ভয়, আতঙ্ক ও অনিশ্চয়তায় কাটিয়েছি বছরগুলো। আদালতের রায়ে সত্য প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। যারা সবসময় পাশে ছিলেন, তাদের প্রতি আমরা কৃতজ্ঞ।’
মামলার আইনজীবী অ্যাডভোকেট আরিফুর রহমান জানান, ‘আজ সরকার প্রণীত গেজেট অনুযায়ী সাইবার সুরক্ষা অধ্যাদেশ ২০২৫–এর ধারা ৫০(৪ ক) অনুযায়ী মামলার প্রসিডিংস ড্রপের আবেদন করি। আদালত আবেদন মঞ্জুর করে দুই ভাইকে সম্পূর্ণ খালাস দেন। এতে দীর্ঘ পাঁচ বছরের অবর্ণনীয় হয়রানির অবসান ঘটে।’
এআরএস

