মাসব্যাপী রহস্যের অবসান
ঠাকুরগাঁও-২ আসনে বিএনপির প্রার্থী ডা. আব্দুস সালাম
আবু সালেহ, ঠাকুরগাঁও
প্রকাশ: ০৪ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৯:১০
গ্রাফিক্স : বাংলাদেশের খবর
দীর্ঘ জল্পনা-কল্পনার অবসান ঘটিয়ে অবশেষে ঠাকুরগাঁও-২ আসনে প্রার্থী ঘোষণা করল বিএনপি। দলটির মনোনয়ন পেয়েছেন ডক্টর্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ড্যাব)-এর সাবেক মহাসচিব ও বালিয়াডাঙ্গী উপজেলা বিএনপির সাবেক সিনিয়র সহসভাপতি ডা. আব্দুস সালাম।
বৃহস্পতিবার (৪ ডিসেম্বর) বিকেলে গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দ্বিতীয় দফায় প্রার্থীদের নাম ঘোষণা করেন দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। এ ঘোষণার মধ্য দিয়ে বহুদিন ধরে এ আসনকে কেন্দ্র করে চলা নানা আলোচনা-গুঞ্জনেরও অবসান হয়।
দলীয় সূত্র জানায়, চিকিৎসা পেশায় দীর্ঘ অভিজ্ঞতা, সংগঠনী ভূমিকা ও এলাকাভিত্তিক গ্রহণযোগ্যতার সমন্বয়েই ডা. সালামের নাম চূড়ান্ত করা হয়েছে।
মনোনয়ন ঘোষণার পরই ঠাকুরগাঁও-২ আসনের রাজনৈতিক অঙ্গনে নতুন সজীবতা ফিরে আসে। দীর্ঘ নীরবতার পর তৃণমূল নেতাকর্মীরা আবার সক্রিয় হয়ে উঠেছেন। ইউনিয়ন-ওয়ার্ড পর্যায়ে শুরু হয়েছে বৈঠক, বিশ্লেষণ ও নির্বাচনী প্রস্তুতি।
এর আগে সোমবার (৩ নভেম্বর) বিএনপি প্রথম দফায় ২৩৭ আসনে প্রার্থী ঘোষণা করে। সেই তালিকায় ঠাকুরগাঁও-১ ও ৩ থাকলেও ২ নম্বর আসনটি শূন্য রাখা হয়। এতে নেতাকর্মীদের মধ্যে হতাশা তৈরি হয়; বিক্ষোভ-মানববন্ধনও হয়। জোটের কাছে আসনটি ছাড়ার গুঞ্জন ছড়ায়। বিশেষ করে গণঅধিকার পরিষদের সহসভাপতি ফারুক হাসানকে নিয়ে এলাকায় নানা বিশ্লেষণ চলছিল। পাশাপাশি মাঠে সক্রিয় হয়ে ওঠেন জামায়াতের সম্ভাব্য প্রার্থীরা। এ অবস্থায় পুরো জেলা রাজনৈতিক অনিশ্চয়তায় ছিল।
শেষ পর্যন্ত বিএনপির ঘোষণায় সব জল্পনার অবসান ঘটে। ডা. আব্দুস সালামের নাম ঘোষণায় নেতাকর্মীদের মধ্যে নতুন উদ্দীপনা ফিরে আসে। দীর্ঘ অপেক্ষা, হতাশা ও সংশয়ের জায়গায় এখন এসেছে নির্বাচনী প্রস্তুতির গতি।
উপজেলা বিএনপি নেতা মান্নান বলেন, এই ঘোষণাই ছিল আমাদের সবচেয়ে প্রত্যাশিত। দল যাকে মনোনয়ন দিয়েছে, তাকে নিয়েই আমরা সর্বশক্তি নিয়ে মাঠে নামব। ডা. সালাম দীর্ঘদিন ধরে এলাকার মানুষের সঙ্গে যুক্ত। তার নাম ঘোষণায় নেতাকর্মীরা আত্মবিশ্বাস ফিরে পেয়েছেন।
উপজেলা যুবদল নেতা হাবিব বলেন, মনোনয়ন নিয়ে গুঞ্জন সংগঠনচর্চাকে দুর্বল করছিল। ঘোষণার পর আবার নতুন করে দাঁড়ানোর সুযোগ এসেছে। এখন আর কোনো দ্বিধা নেই, মাঠের প্রস্তুতিও জোরদার হয়েছে।
ছাত্রদল নেতা ইলিয়াস আলী বলেন, এই ঘোষণায় রাজনৈতিক বিভ্রান্তির অবসান হয়েছে। বিএনপি কখনো মাঠ ছাড়ে না—এ মনোনয়ন তার প্রমাণ। ডা. সালাম পরিচ্ছন্ন, শিক্ষিত ও গ্রহণযোগ্য ব্যক্তিত্ব। তাকে ঘিরে কর্মীদের মধ্যে নতুন আশার সৃষ্টি হয়েছে।
ঠাকুরগাঁও-২ আসনে বিএনপির প্রার্থী ডা. আব্দুস সালামের প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে থাকছেন জামায়াতের মাওলানা আব্দুল হাকিম এবং গণঅধিকার পরিষদের ফারুক হাসান।
নির্বাচন কমিশনের তথ্য অনুযায়ী, ঠাকুরগাঁও-২ আসনটি বালিয়াডাঙ্গী, হরিপুর এবং রানীশংকৈল উপজেলার ধর্মগড় ও কাশিপুর ইউনিয়ন নিয়ে গঠিত। এ আসনে মোট ভোটার সংখ্যা ৩ লাখ ৬৮ হাজার ২৫ জন। এর মধ্যে—বালিয়াডাঙ্গীতে ১ লাখ ৫৬ হাজার ৭৬৫ জন, হরিপুরে ১ লাখ ১০ হাজার ১৬৬ জন এবং রানীশংকৈলের দুই ইউনিয়নে ৩৯ হাজার ৮৯৪ জন ভোটার রয়েছেন।
ঠাকুরগাঁও জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মো. ওয়ালিউল্লাহ বলেন, কমিশনের নির্দেশনা অনুযায়ী নির্বাচন প্রস্তুতি প্রায় চূড়ান্ত। প্রার্থী তালিকা থেকে শুরু করে দায়িত্ব বণ্টন—সবকিছুই পরিকল্পনা অনুযায়ী চলছে। ভোটারদের জন্য নিরাপদ ও সুষ্ঠু পরিবেশ নিশ্চিত করাই মূল লক্ষ্য। নিয়ম অনুযায়ী সবার জন্য সমান সুযোগ থাকবে।
এআরএস

