ঝিনাইদহে শিশুর লাশ নিয়ে মহাসড়ক অবরোধ, বিচার দাবি
ঝিনাইদহ প্রতিনিধি
প্রকাশ: ০৪ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৯:৪৩
ছবি : বাংলাদেশের খবর
ঝিনাইদহে সাইমা আক্তার সাবা নামের এক শিশুর হত্যার বিচারের দাবিতে স্থানীয়রা ঝিনাইদহ-মাগুরা মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেছেন। বৃহস্পতিবার (৪ ডিসেম্বর) দুপুর ১২টা থেকে আড়াইটা পর্যন্ত পবহাটি সিটি মোড়ে নিহত শিশুর লাশ সামনে রেখে এ অবরোধ চলে।
ঝিনাইদহ কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনাল-আরাপপুর বাসস্ট্যান্ড সংলগ্ন পবহাটি ঈদগাহ এলাকার মহাসড়কে গাছের গুড়ি ফেলে সড়ক অবরোধ করেন বিক্ষুব্ধরা। এতে রাস্তার দুই ধারে প্রায় ৩০০ যানবাহন আটকা পড়ে। পবহাটি এলাকার প্রায় ৫০০ নারী-পুরুষ এই বিক্ষোভে অংশ নেন। তারা শিশুটির মৃত্যুর জন্য দায়ী সন্দেহভাজন সান্ত্বনা খাতুনের ফাঁসির দাবি করেন এবং বিভিন্ন শ্লোগান দেন।
অবরোধে অংশ নেওয়া শিশুর মা ফাতেমা খাতুন বলেন, ‘আমার ছোট্ট মেয়েকে গলায় গামছা ঢুকিয়ে পা দিয়ে পিটিয়ে হত্যা করেছে। তারপর খাটের নিচে লুকিয়ে রেখেছিল। আমার বুক খালি করে দিয়েছে প্রতিবেশী সান্ত্বনা খাতুন। আমি ওর ফাঁসি চাই।’

সুলতানা খাতুন নামের এক নারী বলেন, ‘হত্যাকারী সান্ত্বনার ফাঁসি না হলে সে আরও মায়ের বুক খালি করবে। তাই আমরা তার ফাঁসি চাই।’
শিশুর বাবা সাইদুল ইসলাম বলেন, ‘আমার ফুটফুটে রাজকন্যাকে তারা মেরে ফেলে দিয়েছে। আমি ড. মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে দাবি জানাচ্ছি, তিনি যেন বিশেষ ট্রাইবুনালে আমার প্রতিবেশী সান্ত্বনাকে বিচার করেন। এছাড়া তার পরিবারের অন্য সদস্যরা এ ঘটনায় জড়িত কি না, পুলিশ সেটিও তদন্ত করবে।’
অবরোধের এক পর্যায়ে দুপুর দুইটার দিকে ঝিনাইদহ সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা হোসনে আরা ঘটনাস্থলে এসে ভুক্তভোগী পরিবারকে সঠিক বিচার পাওয়ার ব্যাপারে আশ্বস্ত করলে বিক্ষোভকারীরা সড়ক অবরোধ থেকে সরে যান।
মহাসড়ক অবরোধের কারণে উত্তরাঞ্চলের সঙ্গে যশোর-খুলনা, গোপালগঞ্জ-রংপুর-রাজশাহী গামী যানবাহন ও যাত্রীরা চরম ভোগান্তিতে পড়েন।
সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, ‘শিশু সাইমা হত্যায় জড়িত সন্দেহে এক নারীকে আটক করা হয়েছে। মরদেহ রাতেই ময়নাতদন্তের জন্য পাঠানো হয়েছে। পুলিশ এই ঘটনা গুরুত্বসহকারে দেখছে। তবু নিহত শিশুর স্বজনরা বিক্ষোভে সড়ক অবরোধ করেছেন।’
ট্রাক চালক রাজু আহমেদ বলেন, ‘যশোর থেকে সার লোড করে রংপুর যাচ্ছিলাম। এখানে এসে ১ ঘণ্টা ধরে আটকা আছি। সময়মতো পৌঁছাতে না পারলে মালিকের ক্ষতি হবে।’

নারী যাত্রী পিউলি বেগম বলেন, ‘শ্বশুর মারা যাওয়ায় গোপালগঞ্জ হয়ে পরিবারসহ রংপুর যাচ্ছিলাম। অবরোধের কারণে চরম ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে।’
গত বুধবার সকালেই নিখোঁজ হয় সাড়ে ৩ বছর বয়সী শিশু সাইমা আক্তার সাবা। এ ঘটনায় বাবা সাইদুল ইসলাম থানায় সাধারণ ডায়েরি করেন। পরে রাতেই প্রতিবেশী আক্তারুজ্জামান মাসুদের বাড়ি থেকে শিশুটির মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ।
ময়নাতদন্ত শেষে বৃহস্পতিবার দুপুরে পরিবারের কাছে লাশ হস্তান্তর করা হয়। এ ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে আক্তারুজ্জামান মাসুদের স্ত্রী সান্ত্বনা খাতুনকে (৩২) আটক করা হয়েছে।
লাশ হাতে পেলেই পরিবার ও এলাকাবাসী মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ শুরু করেন।
এম বুরহান উদ্দীন/এআরএস

