নওগাঁ বালুডাঙ্গা বাস টার্মিনাল, অব্যবস্থাপনা ও অবৈধ দখলে জিম্মি চার লেন
নওগাঁ প্রতিনিধি
প্রকাশ: ০৪ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৯:৫৮
ছবি : বাংলাদেশের খবর
নওগাঁ শহরের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ প্রবেশদ্বার বালুডাঙ্গা বাস টার্মিনাল সংলগ্ন সড়কটি যানজট নিরসনে চার লেনে প্রশস্ত করা হলেও, অবৈধ দখল ও অব্যবস্থাপনার কারণে সাধারণ মানুষ এখনও তার সুফল পাচ্ছে না। কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত এই সড়কও এখন দখলদারদের হাতে জিম্মি।
সম্প্রতি সড়ক ও জনপথ বিভাগ (সওজ) বালুডাঙ্গা বাসস্ট্যান্ড থেকে বরুনকান্দি মোড় পর্যন্ত প্রায় এক কিলোমিটার সড়ক চার লেনে উন্নীত করেছে। কিন্তু নগরবাসীর প্রত্যাশা পূরণে সড়কটি এখনও ব্যর্থ।
নওগাঁবাসীর অভিযোগ, প্রধান সমস্যা হলো যত্রতত্র গাড়ি রাখা এবং ফুটপাত দখল।
-6931933b474ac.jpg)
নগরবাসী রমজান বলেন, ‘আমরা ফোর লেনের জন্য খুব আশা করেছিলাম। সুবিধা বাড়ার কথা থাকলেও তা পাচ্ছি না। টমটম, রিকশা, স্থানীয় গ্যারেজ এবং ফুটপাতে দোকানপাটের কারণে প্রতিদিন পথচলা বিপজ্জনক হয়ে উঠছে, দুর্ঘটনার সম্ভাবনাও বেড়েছে।’
মো. রুস্তম আলী প্রশাসনের দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলেন, ‘সরকার কোটি কোটি টাকা খরচ করে রাস্তা তৈরি করেছে, কিন্তু এর দু'পাশ দখল করে বাস দাঁড়ানো থাকে। আমরা স্থানীয়ভাবে উদ্যোগ নিতে চাইলেও প্রশাসনের হস্তক্ষেপ ছাড়া সমস্যা সমাধান সম্ভব নয়।’
মোহাম্মদ বিপ্লব বলেন, ‘স্থানীয় উদ্যোগে মার্কেটের সামনের ফুটপাতের দোকানগুলো উঠানো হয়েছিল, কিন্তু কিছুদিন পর আবার বসে যায়। প্রশাসনের হস্তক্ষেপ ছাড়া সমস্যার স্থায়ী সমাধান হবে না। ফুটপাতে দোকানপাট ও রাস্তার সাইডে বাস, ট্রাক, টমটম থাকবে না-এটাই আমরা জোর দাবি জানাচ্ছি।’
লেদের দোকান মালিক সোহাগ বলেন, ‘লেদের দোকান মালিকদের সঙ্গে কথা বলে তাদের সীমানার মধ্যে কাজ করার নির্দেশনা জারি করা উচিত। এই রাস্তায় লেদের গাড়ির চেয়ে মালিক সমিতির বিভিন্ন গাড়ি বেশি ভরে থাকে। বাস টার্মিনালে পর্যাপ্ত জায়গা না থাকায় সেগুলো রাস্তার ওপর যানজট সৃষ্টি করছে। এটি জনগণের সুবিধার জন্য তৈরি রাস্তা, কারও বাস বা ট্রাক রাখার জন্য নয়। প্রশাসনের অবিলম্বে হস্তক্ষেপ প্রয়োজন।’
সড়ক দখলের মূল কারণ হিসেবে উঠে এসেছে বাস টার্মিনালের জরাজীর্ণ অবস্থা ও অপর্যাপ্ততা।
বাস চালক মো. করিম হোসেন বলেন, ‘টার্মিনালে জায়গা আছে, কিন্তু পরিবেশ ভালো না। ভবন ভাঙা, ভেতরে জায়গা নেই। এজন্য বাধ্য হয়ে রাস্তার পাশে গাড়ি রাখতে হয়। নতুন টার্মিনাল তৈরি হলে আমরা অবশ্যই ভেতরে গাড়ি চালাব। রাস্তার ওপর গাড়ি রাখলে জনগণ গালি দেয়, রাস্তা জ্যাম হয়-এটাই সমস্যা।’
-6931934f18268.jpg)
অটো রিকশা চালক আমজাদ হোসেন বলেন, ‘ফুটপাত দিয়ে আমরা চলাফেরা করি। নির্দিষ্ট কোনো জায়গা নেই। স্থায়ী টার্মিনাল বা স্ট্যান্ড থাকলে পরিবেশও ভালো হতো এবং চলাফেরার সুবিধা হতো।’
নওগাঁ জেলা মটর শ্রমিক ইউনিয়ন সভাপতি মোহাম্মদ আজহারুল ইসলাম বলেন, ‘গাড়ি রাখার জায়গা না থাকার কারণে কিছু গাড়ি রাস্তায় থাকে। টার্মিনালের পিছনের একটি জায়গা সংস্কার না হওয়ায় এই সমস্যা। ভবন ঝুঁকিপূর্ণ, দুর্ঘটনার আশঙ্কা রয়েছে। পৌর মেয়রকে বললেও এখন পর্যন্ত কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।’
ট্রাফিক সার্জন মো. লিটন বলেন, ‘টার্মিনালে পর্যাপ্ত জায়গা নেই, গাড়ির সংখ্যা বেশি। একসময় টার্মিনালটি পরিত্যক্ত ঘোষণা করা হয়েছিল। সংস্কার শেষ না হওয়ায় গাড়ি ভেতরে রাখা যায় না, যার কারণে রাস্তায় প্রতিবন্ধকতা তৈরি হয়। পর্যাপ্ত জায়গা ও সুশৃঙ্খল ব্যবস্থা থাকলে যানজট কমবে।’
নওগাঁ সড়ক ও জনপথ বিভাগের সড়ক বিভাগ নির্বাহী প্রকৌশলী মো. রাশেদুল হক বলেন, ‘রাস্তার পাশে বাস, গাড়ি মেরামতসহ সবকিছু হচ্ছে, যার ফলে রাস্তা সরু হয়ে জনদুর্ভোগ সৃষ্টি হচ্ছে। ট্রাফিক ম্যানেজমেন্ট, কনস্ট্রাকশন এবং ভেহিকেল ম্যানেজমেন্ট সচেতন হলে যানজট নিরসন সম্ভব হবে।’
চার লেন সড়ক তৈরির মাধ্যমে সরকার শহরবাসীকে স্বস্তি দিতে চেয়েছিল। কিন্তু অবৈধ দখল ও জরাজীর্ণ বাস টার্মিনাল সেই সুফল পাওয়া বাধাগ্রস্ত করছে। নগরবাসীর অভিযোগ, অবিলম্বে বাস টার্মিনাল সংস্কার করে পর্যাপ্ত জায়গা নিশ্চিত করা এবং প্রশাসনের পক্ষ থেকে অবৈধ দখলদারদের উচ্ছেদে কঠোর পদক্ষেপ নিতে হবে। অন্যথায় কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত সড়ক নগরবাসীর কাজে আসবে না।
- এম এ রাজ্জাক/এমআই

