বুড়ি তিস্তা নদী খনন প্রকল্পে হাজারো কৃষকের প্রতিবাদ ও মশাল মিছিল
ডিমলা (নীলফামারী) প্রতিনিধি
প্রকাশ: ০৬ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৩:৫৮
নীলফামারীর ডিমলা উপজেলায় বুড়ি তিস্তা নদী খনন প্রকল্পের প্রতিবাদে স্থানীয়রা মশাল মিছিল করেছে। শুক্রবার (৫ ডিসেম্বর) সন্ধ্যার পর ডিমলা, ডোমার ও জলঢাকা এই তিন উপজেলার বুড়ি তিস্তা এলাকার পাঁচটি মৌজার প্রায় ৭৫০টি পরিবারের প্রায় চার হাজার নারী-পুরুষ মশাল হাতে বিক্ষোভে অংশ নেন।
বিক্ষোভকারীরা দাবি করেন, নদী খননের পরিকল্পনা বাস্তবায়ন হলে অন্তত ৭৫০ টি পরিবার তাদের ভিটেমাটি হারিয়ে নিঃস্ব হয়ে যাবে। বর্তমানে এই জমিতে ধান, ভুট্টা, আলু, মরিচ, বাদাম ও পেঁয়াজসহ বছরে তিন থেকে চারটি ফসল হয়।
২০০৯ সাল থেকে এই নদী নিয়ে দুই পক্ষের বিরোধ ও বহু মামলা চলমান রয়েছে। তারা প্রকল্প বাতিল ও মামলার প্রত্যাহারের দাবি জানান।
এলাকাবাসীর মুখপাত্র মো. আব্দুল আলিম বলেন, ‘সরকার অনুমোদিত একটি ভুল প্রকল্পের বিরুদ্ধেই আমরা এই আন্দোলন করছি। জমির মালিকানা আমাদের হাতে থাকা সত্ত্বেও পানি উন্নয়ন বোর্ড তিন ফসলি জমি নষ্ট করতে চায়। আমরা এই প্রকল্প বাস্তবায়ন হতে দেবো না।’
স্থানীয় কৃষক হেকিম আরও বলেন, ‘পাঁচ মৌজার হাজার হাজার মানুষের জীবিকা নদীর দুই পাড়ের জমির ওপর নির্ভরশীল। আমরা হুমকি-ধমকির মুখে জীবন কাটাচ্ছি। মশাল মিছিলের মাধ্যমে আমরা আমাদের দুর্ভোগ দেশবাসীর কাছে, সরকারের কাছে তুলে ধরতে চাই।’
জাহিদুল ইসলাম নামের এক কৃষক জানান, ‘তারা নদী খননের পক্ষে থাকলেও মাঝখানে খনন করা হলে চারপাশের জমি হারাতে হবে। পুরো ৭৬ কিলোমিটার খনন হলে আমরা আমাদের জমি ছাড়তে রাজি ‘
তিনি আরও বলেন, ‘তবে ২০১৮ সাল থেকে কৃষকদের নামে ১১টি মামলায় ৭৫০ জন কৃষককে ভুগতে হচ্ছে। এ কারণে আমরা সিভিল মামলা করেছি।’
২০২২ সালের ডিসেম্বরেও নদী খনন নিয়ে বেশ উত্তেজনা সৃষ্টি হয়েছিল। চলতি মাসের ২ ডিসেম্বর নতুন ভাবে আবারও নদী খননের জন্য প্রয়োজনীয় খননযন্ত্র ও সরঞ্জাম বুড়ি তিস্তা ব্যারাজ এলাকায় আনা হলে এলাকাবাসী বাধা দেয় এবং ব্যাপক উত্তেজনা ও ক্ষোভের সৃষ্টি হয়। পরে পুলিশ, আনসার ও সেনাবাহিনী মোতায়েন করা হয়।
আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর আনুষ্ঠানিক মন্তব্য এখনও পাওয়া যায়নি। তবে পরিস্থিতি নজরদারিতে রাখা হয়েছে। নীলফামারী পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আতিকুর রহমান জানান, ‘আমরা শুধুমাত্র অধিগ্রহণকৃত জায়গায় জলাধার পুনঃখনন করবো। কিছু ব্যক্তি বিভ্রান্তিকর তথ্য ছড়াচ্ছেন। ১,২১৭ একর জমির মধ্যে ৬৬৭ একর জমিতে খননের কাজ হবে। এতে কৃষকরা স্বল্প খরচে সেচের সুবিধা পাবেন এবং পরিবেশও রক্ষা পাবে।
রাসেদ খান/এনএ

