এসিসিএফ ব্যাংকের ম্যানেজার টাকা আত্মসাতের মামলায় গ্রেপ্তার
নীলফামারী প্রতিনিধি
প্রকাশ: ১০ ডিসেম্বর ২০২৫, ১১:৪২
নীলফামারীতে ইসলামি শরিয়াহভিত্তিক পরিচালিত আজিজ কো-অপারেটিভ কর্মাস অ্যান্ড ফাইন্যান্স ব্যাংক (এসিসিএফ) লিমিডেট এর ম্যানেজার জাহিদুজ্জামান শাহ ফকিরকে বৃহস্পতিবার (৪ ডিসেম্বর) জেলহাজতে পাঠিয়েছেন আদালত। জাহিদ সদরের ইটাখোলা ইউনিয়নের ফকির পাড়া গ্রামের জাকির হোসেন শাহের ছেলে।
মামলার বাদী শওকত আলী জানান, ‘আমার জমাকৃত আমানত আত্মসাতের মামলায় সে আগাম জামিন চাইতে গেলে তার জামিন আবেদন না মঞ্জুর করে জেলা জজ আদালতের চিপ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট এনামুল হক বসুনিয়া ৪ ডিসেম্বর বিকালে জেল হাজতে পাঠানোর আদেশ দেন।’
মামলা সূত্রে জানা যায়, কথিত ব্যাংকটি ২০১৮ সালে জাহিদ প্রথমে আলতাফ হোসেনসহ ছয়জন কর্মকর্তা ও কর্মচারী নিয়ে ব্যাংকিং কার্যক্রম চালু করেন। আকর্ষণীয় মুনাফার লোভ দেখিয়ে প্রতিষ্ঠানটি গ্রাহকদের কাছ থেকে কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে বলে দাবি করেন ভুক্তভোগীরা। আইনি জটিলতা থাকায় সাত বছর পেরিয়ে গেলেও আমানতের টাকা আজও ফেরত পায়নি।
ব্যাংকটি জেলা শহরের কিচেন মার্কেটস্থ এলাকায় সাব্বির ভিলার দ্বিতীয় তলায় অবস্থিত। ভুক্তভোগীরা বিভিন্ন অফিস আদালতে অভিযোগ দায়ের করেও কোনো সুরাহা মেলেনি। এ ঘটনায় ভুক্তভোগি শওকত আলী বাদী হয়ে আদালতে একটি মামলা দায়ের করেন।
ব্যাংকের ভাড়া বাসার মালিক সাব্বির আহমেদ বলেন, ‘আমি ম্যানেজারের কথায় লাভের আশায় ২ লাখ টাকা জমা রেখেছি। প্রথমদিকে তিন, চার মাসের লাভের টাকা দিলেও এখন বাসা ভাড়া ও আমানতের টাকা পাচ্ছি না।’ তিনি বলেন, ‘প্রায় পাঁচশতাধিক গ্রাহক কথিত ব্যাংকে টাকা রেখে পথে বসেছে।’
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন গ্রাহক জানান, ‘জাহিদ আমার প্রতিবেশী হওয়ায় তার কথার ওপর ভিত্তি করে ৮ লাখ টাকা আমানত রেখেছি। এখন মুনাফাও নাই আসল টাকাও নাই। প্রায় ৭ বছর ঘুরেও এক টাকাও তুলতে পারিনি। পরে স্থানীয় র্যাব ক্যাম্প, সমবায় অফিস, ডিসি অফিস, সদর থানায় ও এসপি অফিসে লিখিত অভিযোগ দিয়েও কোনো সমাধান মেলেনি। তার বিরুদ্ধে আদালতে একাধিক গ্রাহক মামলাও করেছে। সেই মামলায় আগাম জামিন চাইতে এসে গ্রেপ্তার হয়েছে। আমাদের আমানত ফেরতসহ তার শাস্তির দাবি জানাচ্ছি।’
একই ব্যাংকের গ্রাহক শামিম জানান, ‘লাভের আশায় আমরা তিন ভাই ৮ লাখ টাকা তার ব্যাংকে আমানত রাখি। এরমধ্যে শওকত আলীর ৩ লাখ। এছাড়াও, মানিকের ১০ লাখ, ওয়াজেদ আলী ৪ লাখ, সুরত আলী ৭ লাখ, আমিনুর রহমান ৩ লাখ, আরব আলীর এক লাখ ৮০ হাজার, আব্দুল মজিদ সাড়ে ৫ লাখ, নূরুজ্জামান বাবলু ৪ লাখ ও জহুরুল ইসলামের ৬০ হাজার, মাসুদ আলম ৩ লাখ ৭৬ হাজার, টাকাসহ একাধিক গ্রাহকের লাখ লাখ টাকা আত্মসাৎ করে জাহিদ।
এ ব্যাপারে, জেলা সমবায় কর্মকর্তা মশিউর রহমান জানান, ‘সারাদেশে এ ধরনের ব্যাংকের কোনও নিবন্ধন বা রেজিস্ট্রেশন নেই। পুরোটাই আইনকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে ঋণদান কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছিল কথিত ব্যাংকের ম্যানেজার জাহিদুজ্জান। যা সমবায় আইনে দণ্ডনীয় অপরাধ। এ ঘটনায় জেলা প্রশাসন থেকে আমাকে তদন্তের দায়িত্ব দেওয়া হলে আমি নিয়ম মেনে প্রকাশ্যে ও গোপনে তদন্ত করে একটি প্রতিবেদন জমা দিয়েছি।’
এ ব্যাপারে জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ নায়িরুজ্জামান ক্ষতিগ্রস্তদের আইনের আশ্রয় নেয়ার পরামর্শ দেন।
তৈয়ব আলী সরকার/এনএ

