Logo

সারাদেশ

মাদ্রাসাছাত্র আমির হামজা হত্যা মামলায় অধিক তদন্তের দাবি পরিবারের

Icon

আলফাডাঙ্গা (ফরিদপুর) প্রতিনিধি

প্রকাশ: ১১ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৭:২০

মাদ্রাসাছাত্র আমির হামজা হত্যা মামলায় অধিক তদন্তের দাবি পরিবারের

ফরিদপুরের আলফাডাঙ্গা উপজেলায় মাদ্রাসাছাত্র আমির হামজা হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় গ্রেপ্তারকৃত একমাত্র আসামি ফরহাদ রেজার স্বীকারোক্তি নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছেন নিহতের পরিবার। একমাত্র ছেলেকে হারানো শোকাহত বাবা-মা জোরালো দাবি জানিয়েছেন, এ নৃশংস হত্যাকাণ্ডে ফরহাদ রেজা একা নন, আরও কেউ জড়িত থাকতে পারে। পরিবারের পক্ষ থেকে মামলাটির আরও গভীর ও অধিকতর তদন্তের দাবি জানানো হয়েছে।

নিহত আমির হামজার বাবা সায়েমউদ্দিন বিশ্বাস ফরহাদ রেজার ১৬৪ ধারার জবানবন্দি মেনে নিতে পারছেন না। ফরহাদ জবানবন্দিতে শ্বাসরোধ করে হত্যার কথা স্বীকার করলেও সায়েমউদ্দিন বিশ্বাস বলেন, ‘মরদেহ জানাজা হওয়ার আগে ছেলেকে নিজে গোসল করিয়েছি। তখন তার মাথাসহ শরীরের বিভিন্ন স্থানে আঘাতের স্পষ্ট চিহ্ন দেখেছি। এমনকি তার একটি দাঁত ভাঙা দেখেছি। তাই আমার ছেলেকে খুনিরা শুধু শ্বাসরোধ করে মেরে ফেলে নি, তাকে আঘাত দিয়ে হত্যা করা হয়েছে। পুলিশ যেন এই আঘাতের কারণ খুঁজে বের করতে অধিকতর ও নিরপেক্ষ তদন্ত করে।’

অন্যদিকে ফরহাদ রেজা জবানবন্দিতে ৫০ টাকার তুচ্ছ বিরোধে আমির হামজাকে হত্যার যে যুক্তি দেখিয়েছেন, তা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। চান্দড়া নূরানী তালিমুল কুরআন মাদ্রাসা ও এতিমখানার মুহতামিম মাওলানা মো. আমিনউল্লাহ বলেন, ‘ঘটনার আগে ফরহাদ রেজা হেফজ বিভাগের সাজেদুল ইসলাম নামের এক ছাত্রের কাছে ৩৫০ টাকা গচ্ছিত রেখেছিলেন। এমতাবস্থায় ৫০ টাকা পরিশোধের সামর্থ্য থাকা সত্ত্বেও কেন সে সামান্য টাকার জন্য একজনের জীবন কেড়ে নেবে, তা বুঝে ওঠা কঠিন।’

নিহতের মা মরিয়ম বেগম একটি গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘আমির হামজার মরদেহ যে ডোবা থেকে উদ্ধার হয়েছিল, সেই জায়গা থেকে ঘটনার প্রায় ১০ দিন পর প্রায় ৪০০ মিটার পূর্বে একটি ঘাসের জমির মধ্যে তার ব্যবহৃত টুপি, স্যান্ডেল ও একটি লাঠির সন্ধানি পাওয়া গেছে।’

পরিবারের ধারণা, প্রথমে ওই ঘাসের জমিতেই আমির হামজাকে আঘাত করে হত্যা করা হয়েছিল। এরপর মরদেহটি বস্তাবন্দি করে ডোবায় ফেলা হয়েছে। তাদের সন্দেহ, ফরহাদ রেজার পক্ষে একা মরদেহ বস্তাবন্দি করে প্রায় ৪০০ মিটার দূরে ডোবায় ফেলা সম্ভব নয়। এ দীর্ঘ পথ পাড়ি দিতে সে অন্য কারো সহায়তা নিতে পারে। পরিবার মনে করছে, এ আলামত ও দূরত্ব মামলার মোড় ঘুরিয়ে দিতে পারে।

জানা গেছে, উপজেলার শুকুরহাটা গ্রামের সায়েমউদ্দিন বিশ্বাস ও মরিয়ম বেগম দম্পতির একমাত্র ছেলে আমির হামজা (১৩)। গত ২১ অক্টোবর সন্ধ্যায় চান্দড়া তা’লিমুল কুরআন মাদ্রাসা সংলগ্ন একটি ডোবা থেকে বস্তাবন্দি অবস্থায় তার অর্ধগলিত মরদেহ উদ্ধার হয়। লাশ ডুবিয়ে রাখার জন্য বস্তার ভেতর ইট রাখা ছিল। 

দ্রুত তদন্তে আলফাডাঙ্গা থানা পুলিশ মাত্র ২৪ ঘণ্টার মধ্যে হত্যাকাণ্ডের রহস্য উদঘাটন করে এবং ঘাতক সহপাঠী ফরহাদ রেজাকে (১৭) গ্রেপ্তার করে। ফরহাদ স্বীকার করেছে যে, পাওনা ৫০ টাকা চাওয়া এবং গালিগালাজ করায় ক্ষিপ্ত হয়ে সে আমির হামজাকে শ্বাসরোধ করে হত্যা করেছে। পরে মরদেহ বস্তাবন্দি করে ডোবায় ফেলে দিয়েছে।

এ বিষয়ে আলফাডাঙ্গা থানা উপপরিদর্শক (এসআই) ও মামলার তদন্ত কর্মকর্তা শহিদুল ইসলাম বলেন, ‘আমরা মামলাটির তদন্ত কার্যক্রম অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে পরিচালনা করছি। পরিবারের দাবি অনুযায়ী, এ হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে আরও কেউ জড়িত আছে কিনা, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।’

মিয়া রাকিবুল/এমবি 

প্রাসঙ্গিক সংবাদ পড়তে নিচের ট্যাগে ক্লিক করুন

হত্যা / খুন

Logo
সম্পাদকমণ্ডলীর সভাপতি মোস্তফা কামাল মহীউদ্দীন ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক সৈয়দ মেজবাহ উদ্দিন প্রধান, ডিজিটাল সংস্করণ হাসনাত কাদীর