মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উদ্বুদ্ধ হওয়ার আহ্বান
দেশজুড়ে গভীর শ্রদ্ধায় শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস পালিত
ডিজিটাল ডেস্ক
প্রকাশ: ১৪ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৯:৫৭
ছবি : বাংলাদেশের খবর
গভীর শ্রদ্ধা, শোক ও ভালোবাসার মিশেলে সারাদেশে যথাযোগ্য মর্যাদায় পালিত হয়েছে মহান শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস ২০২৫। রোববার (১৪ ডিসেম্বর) ১৯৭১ সালের এই দিনে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী ও তাদের দোসর আল-বদর, আল-শামস বাহিনীর দ্বারা দেশের শ্রেষ্ঠ সন্তান শিক্ষাবিদ, চিকিৎসক, সাংবাদিক, শিল্পী ও সংস্কৃতিকর্মীদের নির্মম হত্যাযজ্ঞের শোকস্মরণে জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে নানা কর্মসূচি পালন করা হয়। অনুষ্ঠানগুলোতে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ধারণ করে একটি উন্নত, অসাম্প্রদায়িক ও মেধাসম্পন্ন বাংলাদেশ গড়ে তোলার আহ্বান জানানো হয়। বাংলাদেশের খবর’র জেলা ও উপজেলা প্রতিনিধিদের পাঠানো প্রতিবেদনে বিস্তারিত।
খাগড়াছড়ি : খাগড়াছড়ি জেলা প্রশাসনের আয়োজনে জেলা প্রশাসক সম্মেলন কক্ষে এক আলোচনা সভায় ১৯৭১-এর বীভৎসতার কথা উঠে আসে। খাগড়াছড়ি পৌর প্রশাসক অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট হাসান মারুফ-এর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় প্রধান অতিথি জেলা প্রশাসক মো. আনোয়ার সাদাত বলেন, ‘বুদ্ধিজীবী হত্যার মাধ্যমে একটি জাতির মেরুদণ্ড ভেঙে দেওয়ার চেষ্টা করা হয়েছিল। কিন্তু তাদের আত্মত্যাগই আমাদের পথ দেখায়।’
পুলিশ সুপার মির্জা সায়েম মাহমুদ জাতিকে ঐক্যবদ্ধ থেকে অপশক্তির বিরুদ্ধে সতর্ক থাকার পরামর্শ দেন। বীর মুক্তিযোদ্ধা হেমদা রঞ্জন ত্রিপুরা সরাসরি স্মৃতিচারণ করে বলেন, কীভাবে পরিকল্পিতভাবে দেশের চিন্তাশীল মানুষদের টার্গেট করে হত্যা করা হয়েছিল। মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে রামগড় কোম্পানি কমান্ডার হিসেবে দায়িত্ব পালনকারী ত্রিপুরার বর্ণনায় উপস্থিত সকলের মন শোকে আর্দ্র হয়ে ওঠে। বিভাগীয় বন কর্মকর্তা মো. ফরিদ মিঞা, খাগড়াছড়ি প্রেসক্লাবের সহ-সভাপতি মো. জহুরুল আলম ও ইসলামিক ফাউন্ডেশনের উপ-পরিচালক আনোয়ার কবিরও বক্তব্য রাখেন।
সাভার (ঢাকা) : ঢাকার সাভারে এই দিনটি স্বতন্ত্র মাত্রা পায় কিশোর মুক্তিযোদ্ধা গোলাম দস্তগীর টিটো-র আত্মত্যাগের স্মরণে। ১৯৭১ সালের এই দিনে সাভার হানাদার মুক্ত হয় তার রক্তের বিনিময়ে। সকালে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ডেইরি গেট সংলগ্ন তার সমাধিতে উপজেলা প্রশাসনের পক্ষে সহকারী কমিশনার (ভূমি) আবদুল্লাহ আল আমিন পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন।
তিনি বলেন, ‘শহীদ টিটোর আত্মত্যাগ ইতিহাসের এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। তার রক্তেই স্বাধীন হয়েছিল সাভার।’ টেলিভিশন রিপোর্টার্স ক্লাব (টিআরসি)-র সদস্য সাংবাদিকরা আলাদাভাবে শ্রদ্ধা জানান।
টিআরসি আহ্বায়ক অপু ওহাব বলেন, ‘মানিকগঞ্জের এই কিশোর মুক্তিযোদ্ধা আশুলিয়ার গঙ্গারবাগে সম্মুখযুদ্ধে শাহাদতবরণ করেন। তার সাহস জাতির জন্য চিরপ্রেরণার উৎস।’ উল্লেখ্য, ১৯৯৯ সালের ৩০ ডিসেম্বর তৎকালীন সেনাপ্রধান লেফটেন্যান্ট জেনারেল মুহাম্মদ মুস্তাফিজুর রহমান টিটোর সমাধি ফলক উন্মোচন করেছিলেন।
ফেনী : ফেনীতে ফেনী সরকারি কলেজ বধ্যভূমিতে সর্বস্তরের মানুষ ও সংগঠনের পুষ্পস্তবক অর্পণের মধ্য দিয়ে দিনটি শুরু হয়। জেলা প্রশাসক মনিরা হক, পুলিশ সুপার মো. শফিকুল ইসলাম এবং জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদ কমান্ডারের আহ্বায়ক আবু নাছের চৌধুরী যৌথভাবে শ্রদ্ধা জানান। পরে জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে আলোচনা সভায় বক্তারা শহীদ বুদ্ধিজীবী হত্যার সঠিক বিচার দাবি করেন। মুক্তিযোদ্ধা আবদুল মোতালেব ও ডা. আলা উদ্দিন বলেন, ‘বুদ্ধিজীবীরা ছিলেন দেশের মেরুদণ্ড। তাদের হত্যা ছিল বাংলাদেশকে পঙ্গু করে দেওয়ার ষড়যন্ত্র।’ ফেনী জেলা বিএনপি'র আহ্বায়ক শেখ ফরিদ বাহার এবং ইসলামী আন্দোলনের সাধারণ সম্পাদক মাওলানা একরামুল হক-ও এই হত্যাযজ্ঞের নিন্দা করেন ও জাতীয় ঐক্যের আহ্বান জানান। সকল উপাসনালয়ে বিশেষ প্রার্থনার আয়োজন করা হয়।
পঞ্চগড় : মুক্তিযোদ্ধা স্মৃতি স্তম্ভ ও জেলা পরিষদ চত্বরের বধ্যভূমিতে শ্রদ্ধা নিবেদনের পর জেলা প্রশাসক কাজী সায়েমুজ্জামান-এর সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় পুলিশ সুপার রবিউল ইসলাম ও মুক্তিযোদ্ধারা অংশ নেন।
জামালপুর : জেলা বিএনপি কর্তৃক আয়োজিত শ্রদ্ধাঞ্জলি মিছিল শহীদ বুদ্ধিজীবীদের প্রতি গভীর সম্মান প্রদর্শন করে। অ্যাডভোকেট শাহ মো. ওয়ারেছ আলী মামুন এই হত্যাকাণ্ডকে ‘জাতীয় ইতিহাসের বেদনাবিধুর দিন’ আখ্যা দেন।
ঝালকাঠির রাজাপুর ও নলছিটি : রাজাপুরে বাগড়ি থানা ঘাটের বধ্যভূমিতে এবং নলছিটিতে ফেরিঘাট বধ্যভূমিতে উপজেলা প্রশাসন, পুলিশ ও মুক্তিযোদ্ধারা শ্রদ্ধা জানান। নলছিটি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. জোবায়ের হাবিব বলেন, ‘বুদ্ধিজীবীদের আত্মদানের ফলেই আমরা আলোর পথ পেয়েছি।’
গাজীপুরের (শ্রীপুর) : শ্রীপুর সরকারি কলেজ শহীদ বেদি ও ঐতিহাসিক সাতখামাইর বধ্যভূমিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ করা হয়। বক্তারা একটি সমৃদ্ধ, মানবিক ও অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ গড়ার অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করেন।
বান্দরবানের (লামা) : উপজেলা পরিষদ স্মৃতিস্তম্ভে শ্রদ্ধা জানানোর পর আলোচনা সভায় ইউএনও মো. মঈন উদ্দিন নতুন প্রজন্মকে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উদ্বুদ্ধ হওয়ার পাশাপাশি জুমার খুতবায় গণতান্ত্রিক নির্বাচনী আচরণবিধি সম্পর্কে আলোচনার জন্য ইমামদের প্রতি আহ্বান জানান।
বগুড়ার (শেরপুর) : দড়িমুকুন্দ ও কল্যাণী গণকবরে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এম. আব্দুল্লাহ ইবনে মাসুদ আহমেদ-এর নেতৃত্বে শ্রদ্ধা জানানো হয়। বক্তারা নতুন প্রজন্মের কাছে স্বাধীনতার সঠিক ইতিহাস পৌঁছে দেওয়ার তাগিদ দেন।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ (নাচোল) : ১৯৭১ সালে থানায় দায়িত্ব পালনরত অবস্থায় শহীদ তিন কনস্টেবল মেছের আলী, আব্দুল মালেক ও সিরাজুল ইসলাম-এর সমাধিতে বিশেষ শ্রদ্ধা জানানো হয়। প্রত্যক্ষদর্শী সহকারী কমিশনার (ভূমি) সুলতানা রাজিয়া স্মৃতিচারণ করেন।
চট্টগ্রাম (সীতাকুণ্ড) : কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে শ্রদ্ধার্ঘ অর্পণ শেষে আলোচনা সভায় বীর মুক্তিযোদ্ধা সৈয়দ আবুল মনসুর ও মাস্টার আব্দুল মান্নান বক্তব্য রাখেন। তারা স্বাধীনতাবিরোধী চক্র সম্পর্কে সর্বদা সজাগ থাকতে এবং মুক্তিযুদ্ধের চেতনার সমাজ বিনির্মাণে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার ডাক দেন।
এআরএস

