Logo

সারাদেশ

থানচিতে অভিযানের পরদিনই অবৈধ ইটভাটা চালু, স্থানীয়দের ক্ষোভ

Icon

সোহেল কান্তি নাথ, বান্দরবান

প্রকাশ: ১৭ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৫:২৭

থানচিতে অভিযানের পরদিনই অবৈধ ইটভাটা চালু, স্থানীয়দের ক্ষোভ

ছবি : বাংলাদেশের খবর

বান্দরবানের থানচিতে উপজেলা প্রশাসনের অভিযানের মাত্র একদিন পরই পুনরায় চালু করা হয়েছে অবৈধ ইটভাটা। এ ঘটনায় স্থানীয়দের মধ্যে ক্ষোভ ও উদ্বেগ তৈরি হয়েছে এবং প্রশাসনের অভিযানের কার্যকারিতা নিয়ে সরব হচ্ছেন এলাকাবাসী।

জানা যায়, পরিবেশ অধিদপ্তরের কোনো ছাড়পত্র ও প্রয়োজনীয় অনুমোদন ছাড়াই দীর্ঘদিন ধরে থানচি উপজেলার একটি জনবসতিপূর্ণ এলাকা ও হেডম্যান পাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পাশে 'এবিএম' ইটভাটাটি পরিচালিত হয়ে আসছিল।

অভিযোগ রয়েছে, বিদ্যালয়, বসতবাড়ি ও কৃষিজমির অতি নিকটে অবস্থিত এই ভাটার কারণে পরিবেশ ও জনস্বাস্থ্যের মারাত্মক ক্ষতি হচ্ছে। এসব অভিযোগের প্রেক্ষিতে সম্প্রতি থানচি উপজেলা প্রশাসন ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করে ইটভাটাটির চুল্লি ভেঙে দেয় এবং ২ লাখ টাকা জরিমানা করে। কিন্তু অভিযানের পরের দিনই পুনরায় ইট পোড়ানো শুরু হওয়ায় স্থানীয়রা ক্ষুব্ধ।

থানচি হেডম্যান এলাকার বাসিন্দারা বলেন, ‘প্রশাসন লোক দেখানো অভিযান চালিয়ে চলে গেছে। পরদিনই আবার ভাটার ধোঁয়া উঠতে দেখি। মনে হচ্ছে, কারও ছত্রছায়ায় তারা আবার কাজ শুরু করেছে।’ তাদের অভিযোগ, ইটভাটার কারণে ফসলি জমির ক্ষতি হচ্ছে, শিশু ও বয়স্করা শ্বাসকষ্টসহ নানা রোগে ভুগছেন।

পরিবেশ সচেতন মহলের দাবি, অবৈধ ইটভাটার পুনরায় চালু হওয়া প্রশাসনিক দুর্বলতা ও নজরদারির অভাবকেই প্রতিফলিত করে। তারা অবিলম্বে ইটভাটাটি স্থায়ীভাবে বন্ধ করে জড়িতদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন।

এ বিষয়ে বান্দরবান পরিবেশ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক রেজাউল করিম বলেন, ‘অবৈধভাবে ইটভাটা পরিচালনার অভিযোগে আমরা ভাটাটি গুড়িয়ে দিয়ে জরিমানা করেছিলাম এবং ভবিষ্যতে কার্যক্রম না চালানোর সতর্ক করেছিলাম। তবে আবারও তারা কাজ শুরু করেছে বলে খবর পেয়েছি। আমরা শীঘ্রই কঠোর ব্যবস্থা নিয়ে মামলা করব।’

থানচি উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোহাম্মদ আবদুল্লাহ আল ফয়সাল বলেন, ‘ইটভাটার মালিকপক্ষ আইন অমান্য করে পুনরায় কার্যক্রম শুরু করেছে। যেহেতু সাধারণভাবে তাদের দমিয়ে রাখা যাচ্ছে না, তাই পরিবেশ অধিদপ্তরের মাধ্যমে মামলা করা হবে।’

গত কয়েক বছর ধরে থানচি সদর উপজেলার ডিম পাহাড় সড়কের পাশে হেডম্যান পাড়া স্কুল সংলগ্ন এলাকায় কোনো নিয়ম-নীতির তোয়াক্কা না করে গড়ে উঠেছে 'এবিএম' ইটভাটা। স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, এই ভাটার মালিকানা রয়েছে সাবেক আওয়ামী লীগের এক প্রভাবশালী নেতা আনিছুর রহমান সুজনের সাথে।

অভিযোগ রয়েছে, এই ইটভাটায় ইট তৈরির জন্য সরকারি বনের কাঠ পুড়িয়ে জ্বালানি হিসেবে ব্যবহার করা হয় এবং পাহাড় কেটে মাটি সংগ্রহ করা হয়। এতে ক্রমাগত উজাড় হচ্ছে বনভূমি ও ধ্বংস হচ্ছে পাহাড়। পরিবেশের পাশাপাশি শ্রমিকদের অধিকারও লঙ্ঘনের অভিযোগ রয়েছে; বলা হচ্ছে, কম মজুরিতে শিশু ও মিয়ানমার থেকে আসা রোহিঙ্গা শরণার্থীদের কাজে লাগানো হয়।

ইটভাটার কালো ধোঁয়ায় দূষিত হচ্ছে বাতাস, আর অতিরিক্ত ভারী ট্রাকের চলাচলে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে সড়ক। সবচেয়ে বেশি ভোগান্তিতে পড়েছে স্কুলের শিক্ষার্থীরা। স্কুল চলাকালীন সময়েও চিমনি থেকে বের হওয়া ঘন ধোঁয়ায় বিদ্যালয় প্রাঙ্গণ আচ্ছন্ন হয়ে পড়ে, ক্লাসরুমে আলো-বাতাস প্রবেশে বিঘ্ন ঘটে এবং শিক্ষার্থীরা শ্বাসকষ্টে ভোগে।

স্কুলের শিক্ষার্থী, অভিভাবক ও স্থানীয় জনগণ অবিলম্বে বিদ্যালয় সংলগ্ন এই অবৈধ ইটভাটা স্থায়ীভাবে বন্ধের দাবি জানিয়েছে। তাদের আশঙ্কা, প্রশাসনের প্রতি তোয়াক্কা না করে ভাটার কার্যক্রম চলতে থাকলে পরিবেশ ও স্বাস্থ্যঝুঁকি আরও প্রকট হবে।

এআরএস

প্রাসঙ্গিক সংবাদ পড়তে নিচের ট্যাগে ক্লিক করুন

উচ্ছেদ অভিযান জরিমানা

Logo
সম্পাদকমণ্ডলীর সভাপতি মোস্তফা কামাল মহীউদ্দীন ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক সৈয়দ মেজবাহ উদ্দিন প্রধান, ডিজিটাল সংস্করণ হাসনাত কাদীর