Logo

সারাদেশ

মেডিকেলে চান্স পেয়ে ভ্যানচালক বাবার স্বপ্ন পূরণ করলেন সানাউল্লাহ

Icon

আতাউর রহমান সোহেল, শ্রীপুর (গাজীপুর)

প্রকাশ: ১৭ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৭:০৩

মেডিকেলে চান্স পেয়ে ভ্যানচালক বাবার স্বপ্ন পূরণ করলেন সানাউল্লাহ

অভাবের কাছে হার মানেননি ভ্যানচালক সুরুজ আলী। সীমাহীন কষ্ট, ত্যাগ আর অদম্য ইচ্ছাশক্তির জোরে তিনি গড়ে তুলেছেন সন্তানের স্বপ্নের সিঁড়ি। গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলার মাওনা উত্তর পাড়া এলাকায় ভ্যান চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করা সুরুজ আলীর ছোট ছেলে সানাউল্লাহ ২০২৫–২৬ শিক্ষাবর্ষে এমবিবিএস-বিডিএস ভর্তি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজে ভর্তির সুযোগ পেয়েছে।

নেত্রকোনা জেলার কলমাকান্দা উপজেলার লেংগুরা গ্রামের বাসিন্দা সুরুজ আলী দীর্ঘদিন ধরে শ্রীপুর উপজেলার মাওনা উত্তর পাড়া এলাকায় ভাড়া বাসায় বসবাস করছেন। স্ত্রী অফুজা খাতুন, দুই ছেলে ও এক মেয়েকে নিয়ে পাঁচ সদস্যের পরিবার তার। পৈতৃক ভিটেমাটি, একটি ভ্যান ও সামান্য চাষের জমি ছাড়া উল্লেখযোগ্য কোনো সম্পদ নেই তার। পরিবারের একমাত্র আয়ের উৎস ছিল ভ্যান চালানো।

অভাবের কারণে বড় ছেলে ও মেয়েকে কলেজের গণ্ডির পর আর পড়াতে পারেননি তিনি। তবে বড় সন্তানদের পরামর্শে ছোট ছেলেকে ঘিরে নতুন করে স্বপ্ন দেখেন সুরুজ আলী। সীমিত আয়ে সংসার চালানো এবং সন্তানের পড়াশোনার খরচ বহন করা ছিল তার জন্য কঠিন সংগ্রাম। একপর্যায়ে সংসারের হাল ধরতে স্ত্রী অফুজা খাতুন গার্মেন্টসে চাকরি নিতে বাধ্য হন।

বর্তমানে পরিবারের বড় ছেলে অলিউল্লাহ মৌলভীবাজার পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটে ডিপ্লোমা ইন ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে অধ্যয়নরত। একমাত্র মেয়ে আমিরুননেচ্ছা ময়মনসিংহের আনন্দমোহন কলেজে অনার্স তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী। আর ছোট ছেলে সানাউল্লাহর মেডিকেলে ভর্তির সাফল্য পরিবারটিকে এনে দিয়েছে নতুন আশার আলো।

সানাউল্লাহ হাজী ছোট কলিম স্কুল অ্যান্ড কলেজ থেকে এসএসসি এবং ময়মনসিংহের সৈয়দ নজরুল ইসলাম কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করেন। শিক্ষক ও সহপাঠীরা জানান, ছোটবেলা থেকেই তিনি ছিলেন অত্যন্ত মেধাবী ও মনোযোগী শিক্ষার্থী।

হাজী ছোট কলিম স্কুল অ্যান্ড কলেজের সহকারী শিক্ষক মনির হোসেন বলেন, সানাউল্লাহ আমাদের গর্ব। সে ডাক্তার হয়ে নিজ এলাকার দরিদ্র মানুষের সেবায় কাজ করবে এটাই আমাদের প্রত্যাশা।

আরেক শিক্ষক আতাউর রহমান বলেন, সে ছিল অত্যন্ত মেধাবী। স্কুলের পক্ষ থেকে তাকে বিনা বেতনে পড়াশোনার সুযোগ দেওয়া হয়েছিল।

প্রতিষ্ঠানটির অধ্যক্ষ আবদুল হান্নান সজল বলেন, কৃতি শিক্ষার্থীদের তালিকায় সানাউল্লাহর নাম যুক্ত হতে যাচ্ছে। আমরা আশা করি, সে একজন মানবিক চিকিৎসক হিসেবে সমাজে অবদান রাখবে।

মেডিকেলে চান্সপ্রাপ্ত সানাউল্লাহ বলেন, আমার এই সাফল্যের জন্য মহান আল্লাহর কাছে শুকরিয়া। বাবার অনুপ্রেরণা ছাড়া এটি সম্ভব হতো না। দারিদ্র্য কখনো সফলতার অন্তরায় হতে পারে না স্বপ্ন আর পরিশ্রম থাকলে সবই সম্ভব।

তার মা অফুজা খাতুন বলেন, অনেকে বলত এত পড়াশোনা করিয়ে কী হবে। কিন্তু আমরা বিশ্বাস রেখেছিলাম। আজ আমাদের স্বপ্নের যাত্রা শুরু হলো।

সুরুজ আলী বলেন, ছেলের ডাক্তার হওয়ার স্বপ্ন ছিল আমার নিজের স্বপ্ন। এখন আমার সম্বল শুধু ভ্যান আর ভিটেমাটি। তারপরও আমি আজ সবচেয়ে সুখী মানুষ। তবে ডাক্তারি পড়াশোনা ব্যয়বহুল সরকারি সহায়তা পেলে কষ্ট কিছুটা কমবে।

ভ্যানচালকের ঘাম ঝরানো পরিশ্রম আর সন্তানের অদম্য অধ্যবসায় আজ শ্রীপুরসহ আশপাশের এলাকায় অনুপ্রেরণার গল্প হয়ে উঠেছে।

আইএইচ/ 


Logo
সম্পাদকমণ্ডলীর সভাপতি মোস্তফা কামাল মহীউদ্দীন ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক সৈয়দ মেজবাহ উদ্দিন প্রধান, ডিজিটাল সংস্করণ হাসনাত কাদীর