এবার নীলফামারীতে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ৫ হেক্টর জমির ফসল কমেছে
নীলফামারী প্রতিনিধি
প্রকাশ: ২০ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৪:০৪
নীলফামারীতে সোনালি ফসল আমন ধান কাটা ও মাড়াইয়ের ধুম পরেছে। ধান মাড়াইয়ে কিষান কিষাণীরা ব্যস্ত সময় পার করছেন। কেউ মাঠে ধান কাটছেন কেউবা ধানের আঁটি (বোঝা) মাথায় নিয়ে বাড়ি ফিরছেন।
এবার আমন ধান প্রাকৃতিক দুর্যোগের ফলে জমিতে ধান গাছ নুয়ে পড়ায় কিছুটা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে কৃষক। শেষ দিকে পোকার আক্রমণসহ বাজারের দাম কম হওয়ায় কৃষকের কপালে ভাঁজ পড়েছে। এখন গ্রামের পাড়া মহল্লায় চলছে ধান মাড়াইয়ের কাজ। গত বছরের চেয়ে কার্তিক ও অগ্রহায়ণ মাসে আবহাওয়া ছিল প্রতিকূলে। ফলে ফলন কম হওয়ায় হতাশ কৃষক।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্র জানায়, জেলায় আমন ধানের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল, এক লাখ ১৩ হাজার ২২০ হেক্টর। লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে চলতি মৌসুমে অর্জিত জমির পরিমাণ এক লাখ ১৩ হাজার ২১৫ হেক্টর। এবার প্রাকৃতিক দুর্যোগের ফলে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ৫ হেক্টর জমির ফসল কম হয়েছে। আবহাওয়া বিপর্যয়ের ফলে বিঘায় ফলন হয়েছে ১৬-১৭ মন ধান। অথচ গত মৌসুমে বিঘায় ফলন হয়েছিল ১৮-২০ মন।
এর মধ্যে উফশী ৮৮ হাজার ৯৯৬ হেক্টর, স্থানীয় জাত ৬৯ হেক্টর, ও হাইব্রিড ২৪ হাজার ১৫৫ হেক্টর। এতে চাল উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল ৩ লাখ ৬৭ হাজার ৯২০ মেট্রিকটন। আর অর্জিত চালের পরিমাণ ৩ লাখ ৬৭ হাজার ৯১৫ মেট্রিক টন। এতে ৫ মেট্রিকটন চাল ঘাটতি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। স্থানীয় কৃষকরা জানিয়েছেন, ধান কাটা শেষ এখন চলছে পাড়ায় পাড়ায় মাড়াইয়ের কাজ।
সদরের টুপামারী ইউনিয়নের চৌধুরি পাড়ার কৃষক সিরাজুল ইসলাম জানান, ‘এবার বর্ষায় তিন বিঘা জমিতে হাইব্রিড জাতের ধান রোপণ করি। আল্লাহর রহমতে বর্ষায় প্রচুর বৃষ্টি নামায় রোগ বালাই ছাড়াই ধানের ফলন হয়েছে। তবে নভেম্বরের শেষ দিকে রংপুর বিভাগের আট জেলায় বয়ে যাওয়া ঝড়ে জমির ধান নুয়ে পড়ায় ব্যাপক ক্ষতি হয়। তিনি বলেন, বাজারে দাম ভাল থাকলে ক্ষতি পুষিয়ে নেয়া যাবে।’
পলাশবাড়ী ইউনিয়নের কৃষক মুশফিকুর রহমান ও শফিউর রহমান জানান, ‘এবার ৭ বিঘা জমিতে উফশী জাতের ধান রোপণ করেছি। আবহাওয়া বিপর্যয়ের ফলে গত বছরের চেয়ে বিঘায় এক থেকে দেড় মন ধান কম ফলন হয়। যার কারণে বিঘায় ১৭ থেকে ১৮ মন ধান হয়েছে। ধান আবাদে কৃষকের খানিকটা আনন্দের ভাটা পড়েছে। আশা করি, বাজারে দাম ভাল পেলে সাময়িকভাবে ক্ষতি পুষিয়ে লাভবান হতে পারবো। প্রকার ভেদে প্রতিমণ (৪০ কেজি) ধান এক হাজার ১০০ টাকা থেকে এক হাজার ২০০ টাকা পর্যন্ত চলছে।’
সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. আতিক আহমেদ জানান, ‘এবার সদরে ২৮ হাজার ৩৬৭ হেক্টর জমিতে আমন ধানের চাষ করা হয়েছে। শেষ পর্যন্ত প্রতিকূল আবহাওয়ায় ফলন কিছুটা কম হয়। তবে বাজার দর ভাল হলে ওই ঘাটতি কাটিয়ে উঠতে পারবে কৃষক।’
নীলফামারী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মঞ্জুর রহমান বলেন, ‘ধান কাটার পূর্ব মুহূর্তে প্রাকৃতিক দুর্যোগে কিছুটা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। জেলায় এক লাখ ১৩ হাজার ২১৫ হেক্টর জমিতে বিভিন্ন জাতের ধানের চাষ হয়েছে। মাঠ পর্যায়ে উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তারা জমিতে জমে থাকা পানি নিষ্কাশনে পরামর্শ দিয়ে ক্ষতির পরিমাণ কম হয়েছে। স্থানীয় জাত, উফশী ও হাইব্রিডসহ এবার ৫ হেক্টর জমিতে কম চাষ হয়েছে। তবে আশা করি, বাজার দর ভাল হলে ক্ষতি পুষিয়ে নিতে পারবে কৃষক। এছাড়াও সরকার ন্যায্য মূল্যে ধান ক্রয় অভিযান চালু করলে সাময়িক ওই সমস্যা কেটে যাবে।’
তৈয়ব আলী সরকার/এনএ

