অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ চট্টগ্রামের ভারতীয় ভিসা সেন্টার
চট্টগ্রাম ব্যুরো
প্রকাশ: ২১ ডিসেম্বর ২০২৫, ১২:১৫
বাংলাদেশের খবর
দ্বিপক্ষীয় কূটনৈতিক মিশনের নিরাপত্তা ও সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় চট্টগ্রামের ভারতীয় ভিসা আবেদন কেন্দ্র (আইভ্যাক) অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। আজ রোববার (২১ ডিসেম্বর) থেকে পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত কেন্দ্রটির সব কার্যক্রম সাময়িকভাবে স্থগিত থাকবে বলে জানিয়েছে চট্টগ্রামে অবস্থিত ভারতীয় সহকারী হাইকমিশন।
কর্তৃপক্ষ জানায়, চলমান নিরাপত্তা পরিস্থিতির প্রেক্ষাপটে সতর্কতামূলক ব্যবস্থা হিসেবেই এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। যেসব আবেদনকারীর ভিসা অ্যাপয়েন্টমেন্ট নির্ধারিত ছিল, পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে তাদের জন্য নতুন তারিখ নির্ধারণ করা হবে। এ সংক্রান্ত সব তথ্য অফিসিয়াল নোটিশ, এসএমএস ও ই-মেইলের মাধ্যমে জানানো হবে।
চট্টগ্রাম কেন্দ্র বন্ধ থাকায় ভিসা প্রত্যাশীদের পাশাপাশি ট্রাভেল ও ট্যুরিজম খাতেও নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। চিকিৎসা, শিক্ষা, ব্যবসা ও পারিবারিক প্রয়োজনে ভারতে যাতায়াত করতে ইচ্ছুক অসংখ্য মানুষ চরম অনিশ্চয়তার মুখে পড়েছেন। হঠাৎ করে কার্যক্রম স্থগিত হওয়ায় ভ্রমণ পরিকল্পনা, চিকিৎসা সূচি এবং আর্থিক ব্যবস্থাপনায় বড় ধরনের সংকট তৈরি হয়েছে।
চিকিৎসাজনিত ভোগান্তির কথা তুলে ধরে কোলন ক্যানসারে আক্রান্ত আয়েশা বেগম বলেন, ‘কিছু মানুষ দেশের পরিস্থিতিকে উত্তেজিত করে অপ্রয়োজনীয় ঝামেলা সৃষ্টি করেছে এবং ভিসা সেন্টারে হামলার চেষ্টা করেছে। এর খেসারত দিচ্ছি আমরা সাধারণ মানুষ। আমার অপারেশনের জন্য দ্রুত ভারতে যাওয়া জরুরি, কিন্তু ভিসা সেন্টার কবে খুলবে এ নিয়ে কোনো নিশ্চয়তা নেই। এই অনিশ্চয়তায় আমরা মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছি।’
একইভাবে হৃদরোগে আক্রান্ত ভিসা প্রত্যাশী মোহাম্মদ রফিকুল ইসলাম ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন,‘নিরাপত্তার অজুহাতে ভিসা সেন্টার বন্ধ রাখা হলেও এর দায় আমাদের মতো অসুস্থ মানুষকেই নিতে হচ্ছে। চিকিৎসার নির্ধারিত সময় পেরিয়ে যাচ্ছে, অথচ কবে ভিসা মিলবে কেউ স্পষ্ট করে কিছু বলছে না। দুই দেশের কূটনৈতিক পরিস্থিতির প্রভাব যদি সাধারণ রোগীদের জীবনেই পড়ে, তাহলে সেটা অত্যন্ত দুঃখজনক।’
ভিসা কার্যক্রম বন্ধের সরাসরি প্রভাব পড়েছে ট্রাভেল ব্যবসায়ও। বেরাইন্না ট্যুর অ্যান্ড ট্রাভেলস-এর পরিচালক উষমেল বড়ুয়া বলেন, ‘আমাদের ট্রাভেল এজেন্সির ব্যবসা মূলত ভারতকেন্দ্রিক। এই অবস্থায় ভিসা সেন্টার কবে খুলবে, তার ওপরই আমাদের ব্যবসার গতি নির্ভর করছে। দীর্ঘদিন বন্ধ থাকলে এই খাতের সঙ্গে জড়িত অনেক মানুষ মারাত্মক আর্থিক সংকটে পড়বেন।’
উল্লেখ্য, এর আগে একই ধরনের নিরাপত্তা উদ্বেগের কারণে ঢাকায় অবস্থিত ভারতীয় ভিসা আবেদন কেন্দ্রের কার্যক্রমও সাময়িকভাবে স্থগিত করা হয়েছিল। সে সময় কর্তৃপক্ষ জানিয়েছিল, পরিস্থিতি অনুকূলে এলে পুনরায় কার্যক্রম শুরু করা হবে এবং আবেদনকারীদের নতুন তারিখ জানানো হবে।
কূটনৈতিক সূত্রগুলো মনে করছে, বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যকার বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক ও পারস্পরিক সহযোগিতার ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে নিরাপত্তার পাশাপাশি মানবিক ও অর্থনৈতিক বিষয়গুলোও সমান গুরুত্ব দিয়ে বিবেচনা করা প্রয়োজন। এই প্রেক্ষাপটে দ্রুত সমন্বয়ের মাধ্যমে ভিসা কার্যক্রম পুনরায় চালুর দাবি জানিয়েছেন ভুক্তভোগী রোগী ও সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা।
সানাউল্লাহ/এনএ

