একমাত্র ভাই হত্যার বিচার চেয়ে বোনদের আহাজারি
আলফাডাঙ্গা (ফরিদপুর) প্রতিনিধি
প্রকাশ: ২১ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৫:৫২
তিন বোনের আদরের একমাত্র ছোট ভাই আমির হামজা। পড়াশোনা করত মাদ্রাসায়। পরিবারের স্বপ্ন ছিল বড় হয়ে সে হাল ধরবে, বোনদের মাথার ওপর ছায়া হয়ে দাঁড়াবে। কিন্তু এক নৃশংস হত্যাকাণ্ড সেই স্বপ্নকে ধুলোয় মিশিয়ে দিয়েছে। এখন তিন বোনের চোখে শুধুই অশ্রু আর খুনিদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি।
নিহত আমির হামজা ফরিদপুরের আলফাডাঙ্গা উপজেলার শুকুরহাটা গ্রামের সায়েমউদ্দিন বিশ্বাস ও মরিয়ম বেগম দম্পতির একমাত্র ছেলে। সে উপজেলার চান্দড়া তা’লিমুল কুরআন মাদ্রাসা ও এতিমখানার দ্বিতীয় জামাতের ছাত্র ছিল। গত ১৯ অক্টোবর মাদ্রাসা থেকে নিখোঁজ হওয়ার দুইদিন পর ২১ অক্টোবর সন্ধ্যায় মাদ্রাসার পার্শ্ববর্তী একটি ডোবা থেকে তার বস্তাবন্দি অর্ধগলিত মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ।
তিন বোনের কেন্দ্রবিন্দু ছিল এই ছোট ভাই। ভাইকে হারানোর শোক সইতে না পেরে বড় বোন সীমা খাতুন বিলাপ করে বলছিলেন, 'আমির হামজা শুধু আমাদের ভাই ছিল না, ও ছিল আমাদের কলিজার টুকরা। আমরা ওকে বড় আলেম বানানোর স্বপ্ন দেখতাম। ভেবেছিলাম বড় হয়ে ও আমাদের ছায়া হবে। খুনিরা শুধু আমার ভাইকে মারে নাই, আমাদের পুরো পরিবারকে জ্যান্ত কবর দিয়ে দিছে।'
শোকে পাথর হয়ে যাওয়া মেজো বোন মুসলিমা খানম বলেন, 'এই সমাজ কতটা নিষ্ঠুর হলে একটা শিশুকে বস্তাবন্দি করে ডোবায় ফেলে দিতে পারে! আমরা এই হত্যার পেছনে আর কারা আছে তাদের বিচার চাই। খুনিদের সর্বোচ্চ শাস্তি না দেখলে আমাদের আত্মা শান্তি পাবে না।'
ছোট বোন খাদিজা খানম ডুকরে কেঁদে উঠে বলেন, 'বাড়িতে এলেই ও আমাকে আপু বলে জড়িয়ে ধরত। এখন আমি কাকে ভাই বলে ডাকব? আমার ভাই তো কারো কোনো ক্ষতি করে নাই। আমি সরকারের কাছে বিচার চাই।'
আলফাডাঙ্গা থানা সূত্রে জানা গেছে, হত্যাকাণ্ডের রহস্য উদঘাটন করে পুলিশ ঘাতক সহপাঠী ফরহাদ রেজাকে (১৭) গ্রেপ্তার করেছে। আদালতে দেওয়া ১৬৪ ধারার জবানবন্দিতে ফরহাদ জানায়, পাওনা মাত্র ৫০ টাকা চাওয়া ও গালিগালাজ করায় ক্ষিপ্ত হয়ে সে হামজাকে শ্বাসরোধ করে হত্যা করে এবং পরে মরদেহ বস্তাবন্দি করে ডোবায় ফেলে দেয়।
তবে এই স্বীকারোক্তি নিয়ে তীব্র সংশয় প্রকাশ করেছেন নিহতের পরিবার। তাদের দাবি, একজন কিশোরের পক্ষে একা এত বড় নৃশংসতা চালানো ও মরদেহ গুম করা সম্ভব নয়। এই ঘটনার পেছনে আরও কেউ জড়িত থাকতে পারে বলে তারা সন্দেহ করছেন। তাই পরিবারটি মামলাটির অধিকতর ও নিবিড় তদন্তের জোর দাবি জানিয়েছে।
এ বিষয়ে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ও আলফাডাঙ্গা থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) শহিদুল ইসলাম জানান, 'তদন্ত অত্যন্ত গুরুত্বের সাথে চলছে। তবে ময়নাতদন্তের রিপোর্ট পেলে আমরা মৃত্যুর কারণ ও সময় সম্পর্কে আরও নিখুঁতভাবে নিশ্চিত হতে পারব। পরিবারের দাবি অনুযায়ী এই হত্যাকাণ্ডে অন্য কারও সংশ্লিষ্টতা আছে কি না, তাও গুরুত্বের সাথে খতিয়ে দেখা হচ্ছে।'
মিয়া রাকিবুল/এনএ

