Logo

সারাদেশ

চাকরির পিছু না ছুটে পেঁপে চাষে স্বাবলম্বী রেম্রাচাই

Icon

ছোটন বিশ্বাস, খাগড়াছড়ি

প্রকাশ: ২৪ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৮:৩১

চাকরির পিছু না ছুটে পেঁপে চাষে স্বাবলম্বী রেম্রাচাই

ছবি : বাংলাদেশের খবর

পার্বত্য জেলা খাগড়াছড়ির মানিকছড়িতে পেঁপে চাষ করে সাফল্য ও আর্থিক স্বচ্ছলতা পেয়েছেন তরুণ উদ্যোক্তা রেম্রাচাই মারমা। চাকরির পিছু না ছুটে বেছে নেওয়া এই পেশায় তার সাফল্য এখন গ্রামের অন্য মানুষদের জন্য অনুপ্রেরণা হয়ে দাঁড়িয়েছে। তার দেখাদেখি গ্রামের ৬০টি পরিবারের মধ্যে ৫০টিই এখন পেঁপে চাষের সঙ্গে যুক্ত।

মানিকছড়ি উপজেলা সদরের ১ নম্বর দুর্ছড়ি পাড়ার বাসিন্দা রেম্রাচাই মারমা। নিম্নআয়ের পরিবারে জন্ম নেওয়া রেম্রাচাই নবম শ্রেণি থেকেই ভাবতে শুরু করেন কীভাবে আর্থিকভাবে স্বাবলম্বী হওয়া যায়। ইন্টারনেট ও ইউটিউব থেকে পেঁপে চাষের বিষয়ে ধারণা নিয়ে তিনি এতে আগ্রহী হন।

রেম্রাচাই মারমা জানান, ২০২৩ সালে তিনি পরীক্ষামূলকভাবে এক একর জমিতে ‘রেড লেডি’ জাতের পেঁপে চাষ শুরু করেন। পেঁপের আকার বড় ও সুস্বাদু হওয়ায় স্থানীয় বাজারে তা দ্রুত জনপ্রিয়তা পায়। এসএসসি পাসের পর ২০২৫ সালে তিনি পূর্ণাঙ্গভাবে পেঁপে চাষে মনোনিবেশ করেন এবং ১০ একর পাহাড়ি জমিতে বাগান গড়ে তোলেন।

প্রথমদিকে তিনি পেঁপে মানিকছড়ির তিনটহরী বাজারে নিয়ে বিক্রি করতেন। পরে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে তার বাগান ও পেঁপের ছবি প্রকাশ করলে ঢাকার কারওয়ান বাজারের ব্যবসায়ীরা তার সঙ্গে যোগাযোগ করেন। এখন বাগান থেকেই ব্যবসায়ীরা প্রতি কেজি ৬০ টাকা দরে পেঁপে কিনে নিয়ে যান।

এবছর এখন পর্যন্ত প্রায় ২০ লক্ষ টাকার পেঁপে বিক্রি করেছেন তিনি। আরও ১০ থেকে ১৫ লক্ষ টাকার পেঁপে বিক্রির আশা করছেন বলে জানান তিনি। সপ্তাহে একবার ফলন সংগ্রহ করেন তিনি।

পাশের গ্রামের যুবক টনি মারমা বলেন, “রেম্রাচাই দাদার বাগানের কথা শুনে পরিদর্শনে এসেছি। বাগানটি বেশ বড় এবং ফলনও ভালো। আমার কিছু জমি ফাঁকা পড়ে আছে, সেখানে পেঁপে চাষের পরামর্শ নিতে এসেছি।”

স্থানীয় সমাজকর্মী ছদরখী আব্রে মারমা জানান, একসময় এই গ্রামের মানুষ জুম চাষের ওপর নির্ভরশীল ছিল, আর্থিক অবস্থা ভালো ছিল না। কিন্তু রেম্রাচাই মারমার সাফল্যে অনুপ্রাণিত হয়ে গ্রামের প্রায় ৯০ শতাংশ মানুষ এখন পেঁপে চাষে মন দিয়েছেন। ঢাকা-চট্টগ্রামসহ জেলার বাইরের ব্যবসায়ীরা সরাসরি এসে পেঁপে কিনে নিয়ে যাচ্ছেন। তবে পাহাড়ি এই চাষিদের সরকারি প্রণোদনা বা সহযোগিতা পেলে তারা আরও স্বাবলম্বী হতে পারতেন বলে মন্তব্য করেন তিনি।

খাগড়াছড়ি কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্যমতে, চলতি বছর জেলায় ২০ হাজার হেক্টর জমিতে বিভিন্ন ফলজ বাগান গড়ে উঠেছে। এর মধ্যে ৬৫০ হেক্টর জমিতে পেঁপের আবাদ হয়েছে। হেক্টরপ্রতি গড়ে ২০ দশমিক ৯৫ মেট্রিক টন হিসেবে মোট ১৩ হাজার ৬২০ মেট্রিক টন পেঁপে উৎপাদিত হয়েছে, যা জেলার চাহিদা মিটিয়ে সারাদেশে রপ্তানি করা হচ্ছে।

খাগড়াছড়ি কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মো. নাসির উদ্দিন জানান, পাহাড়ের মাটি পেঁপে চাষের জন্য উপযোগী হওয়ায় ফলন ভালো হচ্ছে। জেলার অনেক তরুণ এখন চাকরির পিছু না ছুটে অনাবাদি পাহাড়ি জমিতে পেঁপেসহ নানা ফলজ বাগান গড়ে তুলছেন। রেম্রাচাই মারমা তার উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। ২০২৩ সালে এক একর জমিতে শুরু করে লাভ দেখে তিনি এখন ১০ একর জমিতে চাষ করছেন। তার দেখাদেখি দুর্ছড়ি পাড়া গ্রামের ৫০টি পরিবার পেঁপে চাষে উদ্বুদ্ধ হয়েছেন, যা তাদের আর্থিক স্বচ্ছলতা এনেছে।

এআরএস

Logo
সম্পাদকমণ্ডলীর সভাপতি মোস্তফা কামাল মহীউদ্দীন ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক সৈয়দ মেজবাহ উদ্দিন প্রধান, ডিজিটাল সংস্করণ হাসনাত কাদীর