রামুতে লাভের লোভে ‘বিষবৃক্ষ’ চাষ বেড়ে দ্বিগুণ
রামু (কক্সবাজার) প্রতিনিধি
প্রকাশ: ২৬ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৫:২৫
ছবি : বাংলাদেশের খবর
কক্সবাজারের রামু উপজেলায় বনভূমি ও বাঁকখালী নদীর তীরে বন্ধ হচ্ছে না ‘বিষবৃক্ষ’ তামাক চাষ। কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের সচেতনতা কার্যক্রম সত্ত্বেও তামাক কোম্পানির প্রলোভনে সরকারি পদক্ষেপগুলো কার্যকর হচ্ছে না। গত বছরের তুলনায় এবার তামাক চাষ দিগুণ বেড়েছে বলে স্থানীয় কৃষকরা জানিয়েছেন।
স্থানীয় কৃষকদের দাবি, উপজেলার ১১টি ইউনিয়নে সরকারি খাস জমি ও বনভূমিতে এবার তামাক চাষ ব্যাপক হারে বেড়েছে। এতে পরিবেশ ও জলবায়ু ঝুঁকির মুখে পড়ছে।
বাঁকখালী বিটের বন কর্মকর্তা মুস্তাফিজুর রহমান বলেন, ‘কিছু প্রভাবশালী ব্যক্তি বনাঞ্চলের পরিত্যক্ত জমি দখল করে তামাক চাষ করছেন। উচ্ছেদের জন্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবগত করা হয়েছে। ডাক্তারকাটা ও গোলডেবা এলাকা থেকে কিছু অবৈধ স্থাপনা ইতিমধ্যে উচ্ছেদ করা হয়েছে।’
সরেজমিনে দেখা যায়, কচ্ছপিয়া, ঈদগড়, কাউয়ারখোপ, রাজারকূল ও ফতেখাঁরকূল ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকায় ব্যক্তি মালিকানাধীন জমির পাশাপাশি বাঁকখালী নদীর তীরে, সরকারি খাস জমি, বনাঞ্চল ও সামাজিক বনায়নের জমিতে অবৈধভাবে তামাক চাষ করা হচ্ছে।
স্থানীয়রা জানান, তামাক পাতা পোড়ানোর জন্য হাজার হাজার চুল্লি বসানো হয়েছে। তামাক চাষ স্বাস্থ্য ও পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর জেনেও অধিক মুনাফার আশায় কৃষকরা এ দিকে ঝুঁকছেন। তামাক কোম্পানিগুলো সহজ শর্তে ঋণ দিয়ে তাদের উদ্বুদ্ধ করছে।
ডাক্তারকাটা এলাকার জমির মালিক মোহাম্মদ ইলিয়াছ বলেন, ‘জলবায়ু পরিবর্তন রোধে ফলজ ও বনজ গাছ রোপণ করা জরুরি। সরকারি নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও তামাক কোম্পানির প্ররোচনায় চাষ বাড়ছে। এতে ভবিষ্যতে জলবায়ু ঝুঁকি আরও বাড়বে।’
কৃষকরা আরও জানান, সবজি বা অন্যান্য ফসল চাষে সার না মিললেও তামাক চাষে সার নিশ্চিত করা হয়। তামাক পাতা চড়া দামে বিক্রি হয় বলে অনেকেই এই চাষে আগ্রহী হচ্ছেন। এতে কাউয়ারখোপ ও গর্জনিয়া-কচ্ছপিয়া ইউনিয়নে বর্গা জমির দাম বেড়ে এক কানিতে ৩০–৩৫ হাজার টাকায় পৌঁছেছে।
কচ্ছপিয়া ইউনিয়নের কৃষক আবু তালেব বলেন, ‘তামাক চাষে অতিরিক্ত ইউরিয়া সার ব্যবহার হয়, যা জমির উর্বরতা নষ্ট করে। তামাক পোড়ানোর চুল্লিতে কাঠ পোড়ানোয় বনাঞ্চলও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।’
সচেতন মহল প্রশাসনের কঠোর পদক্ষেপ ও তামাকবিরোধী কার্যক্রম জোরদারের আহ্বান জানিয়েছেন।
কামাল শিশির/এআরএস

