উত্তরের শৈত্যপ্রবাহ ও হিমেল হাওয়ায় শীতে বিপর্যস্ত পঞ্চগড়। শীত দুর্ভোগে পড়েছে সাধারণ মানুষের মতো কোমলমতি শিশুরা। দেশের উত্তরের হাজার হাজার প্রান্তিক কোমলমতি শিশুদের শীতের উষ্ণতা ছড়িয়ে দিচ্ছে শিশুস্বর্গ নামের এক স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন।
শুধু শীতের উষ্ণতা নয়, স্কুল ব্যাগ উপহারসহ এক বেলা খাবারও দিচ্ছে সংগঠনটি। স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের এমন কার্যক্রমে শিশুরা যেমন শীতের উষ্ণতা পাচ্ছে তেমনি শিক্ষা উপকরণ পেয়ে উপকৃত হচ্ছে পরিবারগুলোও।
শনিবার (২৭ ডিসেম্বর) দুপুরে জেলার মিলগেট চিনিকল উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে শিশুস্বর্গ ফাউন্ডেশনের আয়োজনে এভারেস্ট ফার্মাসিউটিক্যালসের সহযোগিতায় ১০টি স্কুলের সহস্রাধিক শিক্ষার্থীর মাঝে শীতবস্ত্র ও শিক্ষা উপকরণ বিতরণ করা হয়। নতুন পোশাক ও স্কুল ব্যাগ পেয়ে শিশুদের চোখেমুখে ছিল আনন্দের ঝলক।
পঞ্চগড় সুগার মিলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. আতিকুজ্জামানের সভাপতিত্বে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন পঞ্চগড় পুলিশ সুপার রবিউল ইসলাম। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সার্কেল) শাইমী ইমতিয়াজ, সদর থানার অফিসার ইনচার্জ আশরাফুল ইসলাম, ফুলতলা প্রি ক্যাডেট স্কুল অ্যান্ড কলেজের পরিচালক মো. তোজাম্মেল হক প্রধান, শিশুস্বর্গ ফাউন্ডেশনের মেন্টর অ্যাডভোকেট আহসান হাবিব সরকার, অ্যাডভোকেট মো. মনসুর আলী এবং শিশুস্বর্গের প্রতিষ্ঠাতা কবীর আহম্মেদ আকন্দ।
এছাড়াও প্রাথমিক প্রধান শিক্ষক আকরাম হোসেন জাকারিয়াসহ বিভিন্ন শিশুস্বর্গের সদস্য ও স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ উপস্থিত ছিলেন।
বক্তারা বলেন, ‘শিশুদের মুখে হাসি ফোটানো এবং তাদের শিক্ষা জীবনকে আরও আনন্দময় করে তোলা একটি মহৎ উদ্যোগ। শিশুস্বর্গ ফাউন্ডেশন এবং এভারেস্ট ফার্মাসিউটিক্যালসকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি অসাধারণ এ আয়োজনের জন্য। এটি অন্যান্য সংগঠনকেও অনুপ্রাণিত করবে বলে বিশ্বাস করি।’
জামা পেয়ে শিশুরা জানায়, ‘নতুন ব্যাগ আর নতুন জামা পেয়ে আমরা খুবই খুশি ও আনন্দিত। খুব ভালো লাগছে। এখন স্কুলে যেতে আরও আনন্দ হবে।’
অভিভাবকরা জানান, শীতের সময় এমন উপহার পেয়ে আমরা খুব খুশি। এতে আমাদের সোনামনিদের অনেক উপকার হলো। শিশুস্বর্গ ফাউন্ডেশনকে অনেক ধন্যবাদ।
কবীর আহম্মেদ আকন্দ জানান, ‘আমরা মূলত ২০১০ সালে তেঁতুলিয়া উপজেলার দর্জিপাড়া সীমান্তঘেঁষা এলাকায় সীমান্তে অবহেলিত, সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের স্কুলগামী করতে শিশুস্বর্গ প্রতিষ্ঠা করি। আমাদের শিক্ষাবৃত্তিতে ৬৫ জন শিক্ষার্থী পড়ালেখা করছে, যার মধ্যে ২৫ জন বর্তমানে দেশের নামিদামি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ছে। এ বছরও এভারেস্ট ফার্মাসিউটিক্যালসের সহযোগিতায় পঞ্চগড় জেলার ৭৩ টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ৭ হাজার ৫শ শিশুকে নতুন জামা ও স্কুল ব্যাগ দেওয়া হচ্ছে।
তিনি আরও জানান, ‘আমরা তৃতীয় ধাপে ১ হাজার ২শ শিশু-কিশোরের হাতে উপহার তুলে দিলাম আজ। পর্যায়ক্রমে বাকিদের হাতেও এই শীতের উপহার তুলে দেওয়া হবে। শিশুদের মাঝে শীতের নতুন কাপড় আর নতুন স্কুল ব্যাগ দিতে পেরে পারিবারিক আনন্দের সঙ্গে যোগ করেছে নতুন মাত্রা।’
শিশুস্বর্গ ফাউন্ডেশনের এমন উদ্যোগ কেবল শীতবস্ত্র বিতরণেই সীমাবদ্ধ নয়, তারা শিক্ষাবৃত্তি, স্বল্প শিক্ষিত বেকারদের কর্মসংস্থান, নারীদের স্বনির্ভরতা গড়ে তুলতে প্রশিক্ষণ, শিক্ষার্থীদের আইটি প্রশিক্ষণ এবং একটি মাধ্যমিক স্কুলও পরিচালনা করছে। তাদের এই নিরলস প্রচেষ্টা সত্যিই প্রশংসার দাবি রাখছে এমন মন্তব্য বিশিষ্ট নাগরিক মহলের।
এসকে দোয়েল/এনএ
