'মাটি খেকো' সিন্ডিকেট
লালমনিরহাটে ইটভাটার থাবায় ধ্বংস ফসলি জমি
রাহেবুল ইসলাম টিটুল, লালমনিরহাট
প্রকাশ: ২৭ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৬:৩১
ছবি : বাংলাদেশের খবর
আমন ধান কাটার পর থেকেই লালমনিরহাটের বিভিন্ন উপজেলায় ফসলি জমি থেকে মাটি কাটার 'মহোৎসব' শুরু হয়েছে। কালীগঞ্জ, আদিতমারী, হাতিবান্ধা, পাটগ্রাম ও লালমনিরহাট সদর উপজেলার কৃষিজমি থেকে মাটি কেটে স্থানীয় ইটভাটাগুলোতে নেওয়া হচ্ছে। এতে হুমকির মুখে পড়ছে জমির উর্বরতা ও ফসল উৎপাদন।
সরকারি তথ্য অনুযায়ী, জেলায় নিবন্ধিত ইটভাটা ২০টির কিছু বেশি হলেও বর্তমানে কমপক্ষে ৩৪টি ভাটা সক্রিয় রয়েছে। প্রশাসন মাঝেমধ্যে অভিযান চালালেও ‘মাটি খেকো’ সিন্ডিকেটের তৎপরতা থামছে না। স্থানীয়দের অভিযোগ, প্রশাসনের চোখের সামনেই জমি থেকে মাটি কাটা ও পরিবহন করা হচ্ছে।
কালীগঞ্জ উপজেলার চামটারহাট এলাকার কৃষক শফিকুল ইসলাম বলেন, ‘পাশের জমির মালিকরা মাটি বিক্রি করে দিচ্ছেন। তাদের জমি নিচু হয়ে যাওয়ায় আমার জমি উঁচু থেকে যাচ্ছে, ফলে সেচের পানি উঠছে না। ক্ষতি জেনেও মাটি বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছি।’
একই সমস্যার কথা জানান চন্দ্রপুর ইউনিয়নের কৃষক মাজেদুল ইসলাম। তিনি বলেন, ‘মাটি বিক্রি না করলে জমি উঁচু থাকে, ফসল হয় না। আবার মাটি কাটলে নতুন করে ফসল ফলানো কষ্টকর। আমরা চাই ইটভাটাগুলো যেন কৃষিজমির মাটি না কাটে।’
কৃষি বিশেষজ্ঞরা জানান, মাটির ওপরের ৮-১০ ইঞ্চি স্তর (টপ সয়েল) ফসলের জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। এই স্তরে জৈব পদার্থ ও পুষ্টি উপাদান থাকে। টপ সয়েল কেটে নেওয়া হলে জমির উর্বরতা মারাত্মকভাবে কমে যায় এবং পুনরুদ্ধারে দীর্ঘ সময় লাগে। এতে জমি ধীরে ধীরে অনাবাদি হয়ে যাওয়ার ঝুঁকি তৈরি হয়।
লালমনিরহাট কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত উপ-পরিচালক (কৃষিবিদ) মো. মতিউর রহমান বলেন, ‘জেলার মানুষের প্রধান আয়ের উৎস কৃষি। ইটভাটার কারণে আবাদি জমি কমছে। কৃষকদের মাটি বিক্রি না করতে উদ্বুদ্ধ করছি। মাটির উর্বর স্তর একবার নষ্ট হলে পূরণ করা খুবই কঠিন।’
স্থানীয় সচেতন মহল মনে করে, ফসলি জমি রক্ষায় প্রশাসনের কঠোর ও স্থায়ী পদক্ষেপ প্রয়োজন।
এআরএস

