শিল্পদূষণে বিপর্যয়
৪০০ কারখানার দূষণে মৃত্যুর প্রহর গুনছে ময়মনসিংহের খীরু নদী
রোমান আহমেদ নকিব, ভালুকা (ময়মনসিংহ)
প্রকাশ: ২৭ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৬:৫৮
ছবি : বাংলাদেশের খবর
ময়মনসিংহের ভালুকা উপজেলার ঐতিহ্যবাহী খীরু নদী এখন চরম পরিবেশগত বিপর্যয়ের মুখে পড়েছে। উপজেলায় গড়ে উঠা চার শতাধিক শিল্পকারখানার অপরিশোধিত রাসায়নিক ও তরল বর্জ্য সরাসরি নদীতে ফেলায় এর পানি পরিণত হয়েছে বিষাক্ত কালো তরলে। একসময়ের প্রাণবন্ত এই জলধারা আজ মৃতপ্রায়।
স্থানীয় বাসিন্দা ও পরিবেশকর্মীদের অভিযোগ, বেশিরভাগ কারখানায় ইটিপি (এফ্লুয়েন্ট ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট) না থাকা বা থাকলেও তা নিয়মিত ব্যবহার না করার কারণে দূষণের মাত্রা আশঙ্কাজনক হারে বেড়েছে। নদীর পানি এখন আলকাতরার মতো কালো ও দুর্গন্ধযুক্ত, যা কৃষি বা গৃহস্থালি কোনো কাজেই ব্যবহারের অযোগ্য।
একদিকে শিল্পবর্জ্য, অন্যদিকে নদী দখল ও ভরাট হওয়ার ফলে খীরু তার মূল চরিত্রই হারিয়েছে। অনেক স্থানে নদীর প্রস্থ এতটাই সংকুচিত যে তা ডোবা বা নর্দমার মতো দেখতে। নদীতে কোনো জলজপ্রাণী বা মাছের অস্তিত্ব এখন আর নেই বললেই চলে।

পরিবেশ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, ভালুকার প্রায় ৪০০ শিল্পকারখানার মধ্যে মাত্র ৩০টির মতো প্রতিষ্ঠানে ইটিপি সচল রয়েছে। যদিও বিভাগীয় পরিবেশ অধিদপ্তরের দাবি, দূষণ নিয়ন্ত্রণে তারা কারখানাগুলোতে আইপি ক্যামেরার মাধ্যমে মনিটরিং ব্যবস্থা চালু করছে।
স্থানীয় কৃষক শফিকুল ইসলাম বলেন, ‘আগে এই নদীর পানি দিয়ে আমরা জমির সেচ দিতাম, গবাদিপশু গোসল করাতাম। এখন এই পানিতে হাত দিলেও চুলকানি শুরু হয়। নদীটাকে যেন মৃত্যুর দিকে ঠেলে দেওয়া হয়েছে।’
বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) ভালুকা শাখার নেতা কামরুল হাসান পাঠান কামাল বলেন, ‘এটি শুধু একটি নদীর মৃত্যু নয়, পুরো একটি অঞ্চলের পরিবেশগত বিপর্যয়। আমরা দাবি করছি, প্রতিটি কারখানায় বাধ্যতামূলক ইটিপি স্থাপন করতে হবে এবং দূষণকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিতে হবে।’
ময়মনসিংহ বিভাগীয় পরিবেশ অধিদপ্তরের পরিচালক শেখ মো. নাজমুল হুদা বলেন, ‘আমরা বিষয়টি গুরুত্বের সাথে পর্যবেক্ষণ করছি। দূষণ নিয়ন্ত্রণে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে এবং অপরাধীদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা অব্যাহত থাকবে।’
নদী দূষণ রোধে তদারকি জোরদার এবং দূষণকারী শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলোর বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানিয়েছে স্থানীয় পরিবেশ সচেতন মহল।
রোমান আহমেদ নকিব/এআরএস

