নীলফামারীতে হাড়কাঁপানো শীতে জবুথবু খেটে খাওয়া মানুষ
নীলফামারী প্রতিনিধি
প্রকাশ: ২৭ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৭:০৪
ছবি : বাংলাদেশের খবর
পৌষ মাসের মাঝামাঝিতে হাড়কাঁপানো শীতে জবুথবু হয়ে পড়েছেন নীলফামারীর ছিন্নমূল ও শীতার্ত মানুষ। নিম্ন আয়ের খেটে খাওয়া মানুষজন শীতের দাপটে কাহিল। খড়কুটো জ্বালিয়ে শীত নিবারণের চেষ্টা করছেন তারা।
শনিবার (২৭ ডিসেম্বর) সৈয়দপুর বিমানবন্দর আবহাওয়া কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, সকালে জেলায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ১৩ দশমিক শূন্য ডিগ্রি সেলসিয়াস ও সর্বোচ্চ ১৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস। বাতাসের আর্দ্রতা ৯৬ শতাংশ এবং বাতাসের গতিবেগ নেই বললেই চলে।
তবে কয়েক দিনের তুলনায় কুয়াশার ঘনত্ব বেড়ে যাওয়ায় দৃষ্টিসীমা ছিল ২০০ থেকে ৩০০ মিটারের মধ্যে। এবার শীতে পারদ ১০ থেকে ১৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় ওঠানামা করছে।
সৈয়দপুর বিমানবন্দর আবহাওয়া কার্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. লোকমান হাকিম জানান, আগামী এক সপ্তাহ নীলফামারী সদর, ডোমার, ডিমলা ও জলঢাকা উপজেলায় একই রকম তাপমাত্রা অব্যাহত থাকতে পারে। তিনি বলেন, জেলায় হঠাৎ শীতের তীব্রতা বাড়ায় বিপাকে পড়েছেন রিকশাচালক, ভ্যানচালক, কৃষি শ্রমিক, কুলি ও জুতার কারিগর (মুচি)।
-694fbd2b0b780.jpg)
জেলা শহরের বড় বাজার ট্রাফিক মোড়ের জুতার কারিগর প্রভাস রায় (৪৮) জানান, ‘কনকনে ঠাণ্ডায় সকালবেলা জুতার কাজ করা খুবই কঠিন। কিন্তু হাতের এই কাজ না করলে পেটে ভাত জোটে না। বাধ্য হয়ে পেটের দায়ে সেলাই ও পলিশের কাজ করতে হয়। আমাদের কষ্ট দেখার কেউ নেই।’
জেলা শহরের নিউ বাবুপাড়ার দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী মাহতাব আলী (৬০) জানান, ‘কয়েক দিন ধরে কনকনে ঠাণ্ডায় আমার অবস্থা খারাপ হয়ে গেছে। এ ঠাণ্ডায় ঘরে থাকি, বাইরে যাওয়া হয় না। গায়ে গরম কাপড় নেই, হাতে টাকা-পয়সা নেই। কাপড় কিনবো কি দিয়ে? অন্ধ মানুষ কাজে যেতে পারি না, জীবন আর চলে না আমার।’
ডিমলা উপজেলার খগাখড়িবাড়ী গ্রামের বাসিন্দা আলীজন বেগম (৫৬) জানান, ‘ভাঙা ঘরের চাটাই (বেড়া) দিয়ে হু হু করে বাতাস ঢোকে। আমার কপালে শীতের কাপড়ই জোটে না। গতবার মেম্বার একটি কম্বল দিয়েছিলেন, পুরোনো কম্বলটি ছিঁড়ে গেছে। এবার আশায় আছি কেউ যদি একটি কম্বল দেয়, তাহলে এবার ঠাণ্ডা কোনোরকমে কাটানোর পাই।’
সদর উপজেলার পঞ্চপুকুর ইউনিয়নের দিঘলটারী গ্রামের কৃষি শ্রমিক আশরাফ আলী (৫৫) বলেন, ‘আজ যে ঠাণ্ডা পড়েছে, খেত-খামারে কাজ করা যায় না। আগুন তাপেও ঠাণ্ডা কমে না।” একই পাড়ার আব্দুল আজিজ (৬৫) বলেন, “ঠাণ্ডায় কাহিল হয়ে গেছি বাবা। এ ঠাণ্ডা সহ্য করতে পারছি না। আর দুই-এক দিন এমন ঠাণ্ডা থাকলে কাজ বন্ধ হবে।’
উত্তরের জেলা নীলফামারী কৃষিনির্ভর। সেচনির্ভর বোরো মৌসুমে কৃষকরা বীজতলা প্রস্তুত, বীজ বপন ও জমি তৈরি করতে কঠিন পরিস্থিতির মুখোমুখি হয়েছেন। শীতের তীব্রতায় গ্রামের হাটবাজার ও শহরে লোকসমাগম একেবারে কমে গেছে। সন্ধ্যা নামতেই হকার ও পথচারীরা বাড়ি ফিরছেন।
এদিকে দিনের বেলাতেও যানবাহনের হেডলাইট জ্বালিয়ে প্রয়োজনীয় কাজে যাতায়াত করছেন মানুষ। সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত সূর্যের দেখা মিলছে না। খেটে খাওয়া মানুষ হাত গুটিয়ে বসে আছেন। কেউবা আগুন তাপিয়ে শীত নিবারণের চেষ্টা করছেন। গৃহস্থবাড়ির লোকজন গবাদিপশুকে চট মোড়িয়ে ঠাণ্ডা বাতাস থেকে রক্ষা করছেন।
জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা মনোয়ারুল ইসলাম জানান, পর্যাপ্ত গরম কাপড়ের ব্যবস্থা রয়েছে। সরকারিভাবে কম্বল ক্রয়ের জন্য ৩৬ লাখ টাকা বরাদ্দ পাওয়া গেছে, এর মধ্যে ১০ হাজার ৩৮৮টি কম্বল ক্রয় করা হয়েছে। এছাড়া প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিল থেকে ৭ হাজার ৫০০টি কম্বল পাওয়া গেছে। মোট ১৭ হাজার ৮৮৮টি কম্বলের মধ্যে ইতোমধ্যে জেলার ছয় উপজেলায় ৬ হাজার কম্বল বিতরণ করা হয়েছে।
তৈয়ব আলী সরকার/এআরএস

