Logo

সারাদেশ

চার দশক ধরে সাইকেলে হাঁস-মুরগির ওষুধ বিক্রি করে ৬৫ বছরের আজিজ

Icon

নড়াইল প্রতিনিধি

প্রকাশ: ২৯ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৪:৫৯

চার দশক ধরে সাইকেলে হাঁস-মুরগির ওষুধ বিক্রি করে ৬৫ বছরের আজিজ

ভোরের আলো ফুটতে না ফুটতেই সাইকেল নিয়ে বেরিয়ে পড়েন ৬৫ বছরের আজিজ শেখ। সাইকেলের পেছনের ক্যারিয়ারে রাখা ব্যাটারি, সামনে ঝোলানো হ্যান্ড মাইক আর ব্যাগভর্তি হাঁস, মুরগি ও কবুতরের নানা রোগের ওষুধ— এই তাঁর নিত্যসঙ্গী। প্রায় চার দশক ধরে নড়াইলের গ্রামে গ্রামে ঘুরে এভাবেই জীবিকা নির্বাহ করছেন তিনি।

আজিজ শেখের আদি বাড়ি সাতক্ষীরায়। প্রায় ৪০ বছর আগে কাজের সন্ধানে নড়াইলে আসেন। শুরুতে শহরের ভওয়াখালী এলাকায় ভাড়া বাসায় থাকতেন। দীর্ঘ সংগ্রামের পর বর্তমানে সদর উপজেলার উজিরপুর গ্রামে পাঁচ শতক জমি কিনে টিনের ঘরে বসবাস করছেন। স্ত্রী ও দুই সন্তান নিয়ে তাঁর চার সদস্যের সংসার।

বুধবার (২৪ ডিসেম্বর) দুপুরে নড়াইল সদর উপজেলার আগদিয়া গ্রামে কথা হয় আজিজের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘সকাল ছয়টার দিকে বাড়ি থেকে বের হই। কোনো দিন আটটা, কোনো দিন নয়টার আগে ফিরি না। ওষুধ নিজেই বানাই, নিজেই বিক্রি করি। হাঁস, মুরগি, কবুতর আর মানুষের চুলকানির ওষুধও রাখি।’

যশোর ও সাতক্ষীরা থেকে কাঁচামাল কিনে এনে নিজের হাতে ওষুধ তৈরি করেন আজিজ। বহু বছর ধরে গ্রামে গ্রামে ঘোরার কারণে অধিকাংশ মানুষই তাঁকে চেনেন। ভালোবাসা ও বিশ্বাস থেকেই অনেক খামারি তাঁর কাছ থেকে ওষুধ কেনেন বলে জানান তিনি।

আজিজ বলেন, ‘একসময় তাঁর ব্যবসা ভালোই চলত। ২০–২৫ বছর আগে প্রতিদিন ৬০০ থেকে ৮০০ টাকার ওষুধ বিক্রি হতো। এখন দোকানে নানা কোম্পানির ওষুধ আসায় চাহিদা কমে গেছে।’ বর্তমানে তাঁর দৈনিক আয় গড়ে ৩০০ থেকে ৪০০ টাকা।’

এই আয়ে কোনোমতে চলে সংসার। বড় ছেলে আলামিন শারীরিক প্রতিবন্ধী। ছোট ছেলে রাজমিস্ত্রির কাজ করেন। স্ত্রী সংসারের কাজ সামলান। আজিজ বলেন, ‘অনেক কষ্ট করে পাঁচ শতক জমি কিনতে পেরেছি। সরকারি একটা ঘর পেলে শেষ বয়সটা একটু শান্তিতে কাটাতে পারতাম।’

গ্রামে ঢুকলেই আজিজের সাইকেলের মাইকে ভেসে আসে পরিচিত ঘোষণা। সেই শব্দ শুনেই বাড়ির আঙিনা থেকে বেরিয়ে আসেন হাঁস-মুরগি পালন করা নারীরা। কারও মুরগি অসুস্থ, কারও হাঁস খাওয়া বন্ধ করেছে, আবার কারও কবুতরে রোগ— সব সমস্যার সমাধানে তাদের প্রথম ভরসা আজিজ।

আগদিয়া গ্রামের স্বপ্না বিশ্বাস বলেন, ‘হাঁস মুরগির কোনো সমস্যা হলে আজিজ ভাইয়ের ঔষধে ঠিক হয়ে যায়। তাই তার ঔষধ আমরা কিনে ঘরে রেখে দি। হাঁস মুরগির কোনো রকম সমস্যা হলে আমরা তার ঔষধ ব্যবহার করি।’

শিমুলিয়া গ্রামের আরেক খামারি মফিজ শেখ। তিনি বলেন, ‘আজিজের তৈরি ঔষধ মুরগিদের খাওয়ালে রোগ ঠিক হয়ে 

যায়। এ গ্রামের সবাই হাঁস, মুরগি, কবুতর পালনে তার তৈরি ঔষধ ব্যবহার করেন। 

কৃপা বিশ্বাস/এনএ

Logo
সম্পাদকমণ্ডলীর সভাপতি মোস্তফা কামাল মহীউদ্দীন ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক সৈয়দ মেজবাহ উদ্দিন প্রধান, ডিজিটাল সংস্করণ হাসনাত কাদীর