ফেনীতে শৈত্যপ্রবাহে বিপর্যস্ত জনজীবন, বাড়ছে নিউমোনিয়া-শ্বাসকষ্টের রোগী
ফেনী প্রতিনিধি
প্রকাশ: ৩০ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৮:৪৩
ছবি : বাংলাদেশের খবর
ফেনীর পরশুরামে গত কয়েক দিনের শৈত্যপ্রবাহ জনজীবনকে স্থবির করে দিয়েছে। প্রয়োজন ছাড়া কেউ বাইরে বের হচ্ছেন না। সারাদিন সূর্যের দেখা না মেলায় তীব্র শীত অনুভূত হচ্ছে।
শ্রমজীবী মানুষেরা কর্মহীন হয়ে পড়েছেন। অতিরিক্ত শীতে শিশুদের নিউমোনিয়া, শ্বাসকষ্ট, জ্বর-সর্দি, ফুসফুসে পানি জমা ও ডায়রিয়াসহ নানা রোগে আক্রান্ত হওয়ার সংখ্যা বাড়ছে।
সরেজমিনে পরশুরাম উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ঘুরে দেখা যায়, শৈত্যপ্রবাহের কারণে ঠান্ডাজনিত রোগ—বিশেষ করে শ্বাসকষ্ট, নিউমোনিয়া ও ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে গত এক সপ্তাহে প্রতিদিন ১২ থেকে ১৫ জন রোগী ভর্তি হচ্ছেন।
এছাড়া আরও অনেক রোগী চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে বাড়িতেই চিকিৎসা নিচ্ছেন। যাদের অবস্থা গুরুতর, শুধু তাদেরকেই হাসপাতালে ভর্তি রেখে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। অতিরিক্ত ঠান্ডার প্রভাবে শিশুরাই সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত হচ্ছে।
এ বিষয়ে খোন্দকিয়া গ্রামের মিটন দাস জানান, ‘আমার শিশুর সর্দি-কাশি-জ্বর নিয়ে সাত দিন ধরে ভুগছে। স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি আছে, এখনো পুরোপুরি সুস্থ হয়নি। ডাক্তার বলেছেন আরও কয়েকদিন থাকতে হবে। আগের চেয়ে একটু ভালো আছে।’
তাহমিনা আক্তার নামের ১৪ মাস বয়সী এক শিশুর মা আয়েশা আক্তার বলেন, ‘শীত শুরুর পর থেকেই আমার বাচ্চার জ্বর, সর্দি, গলা ব্যথা ছিল। ডাক্তার দেখাতে এনে ভর্তি করানো হয়েছে। ডাক্তার বলেছেন, অতিরিক্ত ঠান্ডার কারণে নিউমোনিয়া হয়েছে এবং বুকের ডান পাশে কফ জমেছে। আরও কয়েকদিন হাসপাতালে রাখতে হবে।’
ফাতেমা নামে এক শিশুর মা বলেন, ‘আমার বাচ্চার ঠান্ডা লেগে সর্দি-কাশি ও শ্বাসকষ্ট শুরু হয়। ডাক্তার বলেছেন, তীব্র শীতের কারণে নিউমোনিয়া হয়েছে, তাই প্রতিদিন নিবিড় পর্যবেক্ষণে রাখতে হচ্ছে। আরও কিছুদিন চিকিৎসা নিতে হবে।’
পরশুরাম উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সূত্র জানায়, গত কয়েক দিনের তীব্র শীতের কারণে শিশুদের মধ্যে স্বাস্থ্যগত সমস্যা বেশি দেখা দিচ্ছে। বেশিরভাগই ঠান্ডাজনিত রোগ নিয়ে ভর্তি হচ্ছে। শীতজনিত রোগীর সংখ্যা বিবেচনায় শিশু ওয়ার্ডের বেড সংখ্যা বাড়ানোর ব্যবস্থা করা হবে। যদিও জনবল সংকট রয়েছে, তবে থাকা জনবল দিয়েই সর্বোচ্চ সেবা দেওয়ার চেষ্টা চলছে।
এ বিষয়ে পরশুরাম স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা. ইফতেখার আহমেদ বলেন, "গত কয়েক দিনের শৈত্যপ্রবাহে ঠান্ডাজনিত রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। এদের মধ্যে শিশুর সংখ্যাই বেশি। গত ২৪ ঘণ্টায় বহু শিশু ভর্তি হয়েছে, কয়েকজন চিকিৎসা নিয়ে বাড়ি ফিরেছেন। প্রায় সবাই নিউমোনিয়া, শ্বাসকষ্ট ও ডায়রিয়াসহ ঠান্ডাজনিত রোগে ভুগছে। আশা করা হচ্ছে, দুই-চার দিন পর শৈত্যপ্রবাহ কমলে রোগীর সংখ্যাও কমে যাবে।’
এম. এমরান পাটোয়ারী/এআরএস

