বাগেরহাটে খাল-পুকুর দখল ও লবণাক্ততায় কৃষি ও জনজীবন হুমকির মুখে
বাগেরহাট প্রতিনিধি
প্রকাশ: ৩০ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৮:৪৬
ছবি : বাংলাদেশের খবর
বাগেরহাট ও রামপাল উপজেলায় তীব্র পানিসংকট, লবণাক্ততা বৃদ্ধি এবং সরকারি খাল ও খাস পুকুর দখলের ফলে কৃষি, পরিবেশ ও জনজীবন মারাত্মক হুমকির মুখে পড়েছে। এ পরিস্থিতি থেকে উত্তরণে অবিলম্বে সরকারি খাল ও খাস পুকুর অবমুক্ত করার দাবিতে বাগেরহাট প্রেস ক্লাবে সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছে।
মঙ্গলবার (৩০ ডিসেম্বর) সকালে এক্টিভিস্টা বাগেরহাট ও রামপালের আয়োজনে এ সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানানো হয়।
বক্তারা জানান, বাগেরহাট জেলা একটি প্রাচীন ও ঐতিহ্যবাহী জনপদ। প্রায় ১৪০০ শতকে হজরত খানজাহান আলী (রহ.) এই অঞ্চলে কৃষি ও জনজীবনের উন্নয়নে অসংখ্য খাল, দিঘি ও জলাধার খনন করেছিলেন। এসব জলব্যবস্থা একসময় কৃষি উৎপাদন ও সুপেয় পানির প্রধান উৎস ছিল। তবে বর্তমানে দখল, দূষণ ও অপরিকল্পিত ব্যবস্থাপনার কারণে অধিকাংশ খাল ও পুকুর অস্তিত্ব সংকটে পড়েছে।
বাগেরহাট উপকূলীয় জেলা হওয়ায় বাগেরহাট ও রামপালে লবণাক্ততার মাত্রা দিন দিন বাড়ছে। সরকারি খাল ও পুকুর দখলের ফলে নদী ও ভূগর্ভস্থ পানিতে লবণাক্ততা বৃদ্ধি পাচ্ছে, সৃষ্টি হচ্ছে পানির তীব্র সংকট। এর ফলে বিস্তীর্ণ কৃষিজমি অনাবাদি হয়ে পড়ছে। শুধু রামপাল উপজেলাতেই প্রায় ২৭ হাজার ৬৪৪ হেক্টর জমি বর্তমানে অনাবাদি।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থাপিত পরিসংখ্যান অনুযায়ী, বাগেরহাট জেলায় মোট আবাদযোগ্য জমির পরিমাণ ১ লাখ ২২ হাজার ২৩১ হেক্টর। এর মধ্যে আবাদ হচ্ছে ১ লাখ ৪ হাজার ৪৭৩ হেক্টর জমিতে। পতিত জমির পরিমাণ ৮ হাজার ৭০৭ হেক্টর এবং সারা বছর পানির নিচে থাকে প্রায় ১৫ হাজার ৫৯২ হেক্টর জমি।
সংবাদ সম্মেলনে আরও জানানো হয়, বাগেরহাট সদর উপজেলার মাদারতলা, খুনতাকাটা, শশিখালী, গোদাড়ার খালসহ বহু গুরুত্বপূর্ণ খাল দখল হয়ে যাওয়ায় জলাবদ্ধতা ও পরিবেশের ভারসাম্য নষ্ট হচ্ছে। একইভাবে সরকারি পুকুর লিজ দিয়ে মাছ চাষ করায় সাধারণ মানুষ সুপেয় পানি থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।
সংবাদ সম্মেলন থেকে অবিলম্বে অবৈধ দখল উচ্ছেদ, খাল ও নদী পুনঃখনন, টেকসই সেচব্যবস্থা গড়ে তোলা এবং লবণাক্ততা-সহনশীল ফসল চাষের উদ্যোগ নেওয়ার দাবি জানানো হয়। বক্তারা বলেন, সকলের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় সরকারি খাল ও খাস পুকুর অবমুক্ত করা গেলে এই অঞ্চলকে আবারও চাষযোগ্য ও সবুজ করে তোলা সম্ভব।
এ বিষয়ে বাগেরহাটের জেলা প্রশাসক গোলাম মো. বাতেন বলেন, ‘সরকারি পুকুর ও খাস পুকুর রাষ্ট্রের সম্পদ। এই সম্পদ রক্ষা করা আমাদের প্রধান দায়িত্ব। আমি ইতোমধ্যে জানতে পেরেছি, কিছু অসাধু ব্যক্তি এই খাল ও পুকুর দখল করে মাছ চাষ করছে। আমি এগুলো খুব দ্রুত সময়ের মধ্যে দখলমুক্ত করব। খাস পুকুরগুলো দখলমুক্ত করে নতুন প্রকল্প নিয়ে সংস্কার করে সুপেয় পানি নিশ্চিত করব।’
শেখ আবু তালেব/এআরএস

