Logo

সারাদেশ

শ্রীপুরে লাউ চাষে কৃষক দম্পতির ভাগ্যবদল

Icon

আতাউর রহমান সোহেল, শ্রীপুর (গাজীপুর)

প্রকাশ: ৩০ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৯:২৮

শ্রীপুরে লাউ চাষে কৃষক দম্পতির ভাগ্যবদল

ছবি : বাংলাদেশের খবর

গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলার তেলিহাটি ইউনিয়নের টেংরা উত্তর পাড়া গ্রামে লাউ চাষ করে স্বাবলম্বী হয়েছেন কৃষক আক্তারুজ্জামান ও তার স্ত্রী মর্জিনা আক্তার। ডাইনা ও মেটাল জাতের লাউ চাষ করে পাঁচ বিঘা জমিতে গড়ে তুলেছেন একটি সফল সবজি বাগান। বাড়ির আঙিনা, পুকুরপাড় ও পতিত জমিজুড়ে বাঁশের মাচায় সারি সারি লাউ ঝুলছে।

চার বছর আগে গাজীপুরের কালিয়াকৈর উপজেলার ফুলবাড়িয়া এলাকা থেকে মাত্র ২০টি লাউয়ের চারা এনে বাড়ির পাশে রোপণ করেছিলেন আক্তারুজ্জামান। সে বছর পারিবারিক চাহিদা মিটিয়েও প্রায় ২৫ হাজার টাকার লাউ বিক্রি হয়। সেখান থেকেই লাউ চাষে আগ্রহ বাড়ে। পরের বছর পাঁচ কাঠা জমিতে, এরপর দুই বিঘা এবং চলতি মৌসুমে পাঁচ বিঘা জমিতে লাউ চাষ করছেন তিনি।

আক্তারুজ্জামান জানান, চাষের শুরুতে ছত্রাকজনিত রোগ ও বর্ষার অতিরিক্ত বৃষ্টির কারণে প্রায় এক হাজার গাছ নষ্ট হয়ে যায়। পরে পুনরায় এক হাজার ২০০টি চারা রোপণ করেন। তিনি শ্রীপুর উপজেলার সাখাওয়াত হোসেনের বীজ ঘর থেকে বীজ সংগ্রহ করেন। পোকা দমনে বিষটোপ ও জৈব বালাইনাশক ফেরোমন ফাঁদ ব্যবহার করায় কীটনাশকের ব্যবহার উল্লেখযোগ্যভাবে কমেছে। সার হিসেবে ডিএপি ও জৈব সার ব্যবহার করা হয়েছে।

চলতি মৌসুমে লাউ চাষ শুরু করতে প্রায় এক লাখ টাকা খরচ হয়েছে বলে জানান তিনি। ইতোমধ্যে প্রায় তিন লাখ টাকার লাউ বিক্রি করেছেন। আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে এ মৌসুমে ২৫ লাখ টাকা পর্যন্ত বিক্রির আশা করছেন। গত বছর চার বিঘা জমিতে লাউ চাষ করে প্রায় ১৮ লাখ টাকার সবজি বিক্রি করেছিলেন।

লাউ চাষে সার্বিকভাবে সহযোগিতা করছেন তাঁর স্ত্রী মর্জিনা আক্তার। তিনি বলেন, “চারা আনার পর থেকে গাছ রোপণ, সেচ, আগাছা পরিষ্কারসহ প্রাথমিক সব কাজ আমি করি। এই চাষে সংসারের আয় বেড়েছে, নিজের আত্মবিশ্বাসও অনেক বেড়েছে।”

তিনি আরও বলেন, “আগে অন্যের অধীনে কাজ করতে হতো, এখন নিজের জমিতে কাজ করি। নারীরা চাইলে কৃষিকাজে সফল হতে পারে।”

এই দম্পতির সংসারে চার কন্যা সন্তান রয়েছে। কৃষিকাজই এখন তাদের আয়ের প্রধান উৎস। কৃষি থেকে অর্জিত অর্থ দিয়ে সন্তানদের পড়াশোনা ও সংসারের ব্যয় নির্বাহ করছেন তারা। এক সময় আক্তারুজ্জামান রাজমিস্ত্রির কাজ করতেন। তখন সংসারে অভাব-অনটন লেগেই থাকত। এখন কৃষিকাজে স্বাবলম্বী হয়ে জমি কেনার পরিকল্পনাও করছেন তারা।

সরেজমিনে দেখা গেছে, কনকনে শীতের মধ্যেও স্বামী-স্ত্রী একসঙ্গে বাগানের পরিচর্যায় ব্যস্ত। আক্রান্ত লাউ ও শুকনো পাতা কেটে ফেলছেন, নিয়মিত জৈব সার প্রয়োগ করছেন। বাঁশের মাচায় ঝুলছে জৈব বালাইনাশক ফেরোমন ফাঁদ, আর নিচে ঝুলছে শত শত লাউ। তাদের সাফল্য দেখে এলাকার অন্য কৃষকরাও সবজি চাষে আগ্রহী হচ্ছেন।

আক্তারুজ্জামানের চাচাতো ভাই মনিরুজ্জামান বলেন, ‘শুরুতে ছোট পরিসরে শুরু করলেও এখন বড় পরিসরে সফলভাবে লাউ চাষ করছেন তারা। তাদের দেখে অনেকেই উৎসাহ পাচ্ছেন।’

শ্রীপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সুমাইয়া সুলতানা বন্যা বলেন, ‘ডাইনা ও মেটাল জাতের লাউ শ্রীপুর অঞ্চলের জন্য উপযোগী। আধুনিক পদ্ধতিতে জৈব সার ও ফেরোমন ফাঁদ ব্যবহার করলে খরচ কমে এবং লাভ বেশি হয়। এ ধরনের সফল কৃষক ও নারী উদ্যোক্তারা অন্যদের জন্য অনুপ্রেরণা।’

লাউ চাষে এই সাফল্যের গল্প প্রমাণ করে, পরিকল্পিত উদ্যোগ, পরিশ্রম ও পারিবারিক সহযোগিতা থাকলে কৃষিই হতে পারে স্বপ্নপূরণের সবচেয়ে শক্ত ভিত্তি।

এআরএস

Logo
সম্পাদকমণ্ডলীর সভাপতি মোস্তফা কামাল মহীউদ্দীন ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক সৈয়দ মেজবাহ উদ্দিন প্রধান, ডিজিটাল সংস্করণ হাসনাত কাদীর