বান্দরবানে ৩০ কোটি টাকার সড়ক প্রকল্পে অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ
সোহেল কান্তি নাথ, বান্দরবান
প্রকাশ: ৩১ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৬:১১
ছবি : বাংলাদেশের খবর
বান্দরবান জেলা স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি) অর্থায়নে প্রায় ৩০ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মাণাধীন সাড়ে ৭ কিলোমিটার সড়ক প্রকল্পে ভয়াবহ অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে।
অভিযোগ রয়েছে, নিয়ম-নীতির তোয়াক্কা না করে নিম্নমানের নির্মাণসামগ্রী ব্যবহার, কাজের পুরুত্ব ও মানে চরম অবহেলা এবং নামেমাত্র তদারকির মাধ্যমে প্রকল্পটি ঠিকাদারি লুটপাটের অনন্য উদাহরণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
স্থানীয়দের দাবি, রেইছা বাজার থেকে গোয়ালিয়াখোলা পর্যন্ত সাড়ে ৭ কিলোমিটার তিন প্যাকেজের সড়ক নির্মাণে নিম্নমানের ইট, অপরিষ্কার বালু ও পুরাতন অনুপযোগী পাথর ব্যবহার করা হচ্ছে। কর্তৃপক্ষের পর্যাপ্ত তদারকি না থাকায় ঠিকাদার নিজ ইচ্ছামতো কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন। এতে ৩০ কোটি টাকা ব্যয়ের সড়ক নির্মাণ নিয়ে এলাকাবাসীর মধ্যে তীব্র ক্ষোভ দেখা দিয়েছে।
অভিযোগ উঠেছে, প্রকল্পের দায়িত্বে থাকা এলজিইডির তদারকি কর্মকর্তারা মাঠে নিয়মিত উপস্থিত না থেকে অফিসে বসেই বিল ছাড় দিচ্ছেন। ফলে ঠিকাদার নির্বিঘ্নে সরকারি অর্থ অপচয় করছে।
স্থানীয় বাসিন্দা মনছুর আলম বলেন, ‘এটা উন্নয়ন নয়, জনগণের টাকায় প্রকাশ্য তামাশা।’ নির্মাণসামগ্রীর নিম্নমানের কারণে সড়কের স্থায়িত্ব নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করেছেন স্থানীয়রা।
বান্দরবান সদর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান অংসাহ্লা মার্মা বলেন, ‘এলজিইডি কর্তৃপক্ষকে একাধিকবার অনিয়মের বিষয়ে জানানো হয়েছে, কিন্তু কার্যকরী পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। যদি এভাবে কাজ চলতে থাকে, কোটি কোটি টাকা ব্যয়ে তৈরি সড়ক এক বছরও টিকবে না।’
এদিকে, মিল্টন ট্রেডার্সের ঠিকাদার আজম দাবি করেন, ‘বান্দরবানে কোন ইটভাটা নেই। দূর থেকে ইট আনা হচ্ছে, তাই এ ধরনের ইট ব্যবহার করা হচ্ছে।’
বান্দরবান সদর এলজিইডির উপজেলা প্রকৌশলী অনুপম বলেন, ‘রাস্তার কিছু জায়গায় নিম্নমানের ইটের খোয়া ব্যবহার করা হয়েছে। সেগুলো সরিয়ে ভালো মানের খোয়া ব্যবহারের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।’
বান্দরবান এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌশলী প্রতিপদ দেওয়ান বলেন, ‘কোনো অনিয়ম পাওয়া গেলে ঠিকাদারের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
এলজিইডি সূত্রে জানা যায়, রেইছা বাজার থেকে গোয়ালিয়াখোলা সড়ক নির্মাণের কাজ করছে মিল্টন ট্রেডার্স ও এস অনন্ত নামের দুটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান।
সচেতন মহল দাবি করেছে, প্রকল্পটিতে উচ্চপর্যায়ের তদন্ত, দায়ীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা এবং কাজের মান পুনরায় যাচাই করা না হলে ৩০ কোটি টাকার এই প্রকল্প বান্দরবানের ইতিহাসে আরেকটি ব্যর্থ ও কলঙ্কিত প্রকল্প হিসেবে চিহ্নিত হবে।
এআরএস

