Logo

সারাদেশ

হারিয়ে যাচ্ছে বেত ও বেতফল

Icon

এস এম সুমন রশিদ

প্রকাশ: ৩০ ডিসেম্বর ২০২৪, ১১:০৭

হারিয়ে যাচ্ছে বেত ও বেতফল

ছবি : বাংলাদেশের খবর

বেত গাছ এবং বেতফল আজকাল অতীতের স্মৃতি হয়ে উঠছে। একসময় যা ছিল গ্রামীণ জীবনধারার অঙ্গ, আজ তা দুঃখজনকভাবে হারিয়ে যাচ্ছে। বিশেষ করে বরগুনার আমতলী উপজেলায় বেত গাছের সংখ্যা দ্রুত কমে যাচ্ছে। 

এক সময়কার জনপ্রিয় ফল ও উপকরণ
বেত গাছের ফুল আসে আশ্বিন-কার্তিক মাসে এবং ফল পাকে চৈত্র , বৈশাখ ও জ্যৈষ্ঠ মাসে। এ গাছের ফল (বেতফল) যদিও অপ্রচলিত, তবু পুষ্টিকর, সুস্বাদু এবং ওষুধিগুণ সম্পন্ন এই ফল অনেকের কাছে অমূল্য। বেতফল প্রাকৃতিকভাবে মিষ্টি হলেও কখনো কখনো এটি টকও হয়ে থাকে, যা মরিচ দিয়ে চাটনি করে খাওয়া হয়।

দৈনন্দিন জীবনে বেত গাছ
বেত গাছ শুধুমাত্র ফলের জন্যই নয়, এর শাখা-প্রশাখা দিয়ে তৈরি হয় চেয়ার, টেবিল, ঝুড়ি, লাঠি, ফুলের টব, সোফা, দোলনা ইত্যাদি বিভিন্ন প্রয়োজনীয় হস্তশিল্প। এ ছাড়া বেত দিয়ে তৈরি যন্ত্রাংশ গ্রামীণ জীবনযাত্রার অপরিহার্য উপকরণ ছিল। বিশেষ করে খামারের কাজে, টুকরি, ঢুষি, চালোন ও অন্যান্য কৃষি সরঞ্জাম তৈরিতে বেতের ব্যবহার ছিল ব্যাপক।

শহুরে জীবন ও নগরায়ণের প্রভাব
কিন্তু আধুনিকতার সঙ্গে সঙ্গে, বিশেষ করে শহর এবং নগরায়ণের প্রভাবে বেত গাছের সংখ্যা কমে গেছে। একসময় যেখানে একটি ২০-২২ হাত লম্বা বেত ৩০-৪০ টাকায় বিক্রি হতো, বর্তমানে তা পাওয়াই যাচ্ছে না। এমনকি ২০০ টাকায়ও বেত পাওয়া দুষ্কর হয়ে দাঁড়িয়েছে। 

স্থানীয় বেত বিক্রেতা ঝালোবাড়ির মাধব ও পরান ঝালো জানান, কয়েক বছর আগেও বেত গাছের বাগান দেখা যেত। তবে বর্তমানে এসব বাগান হারিয়ে যাচ্ছে, কারণ মানুষের চাহিদা কমে গেছে। গৃহস্থালির দৈনন্দিন প্রয়োজনীয় উপকরণে প্লাস্টিকের আধিপত্য প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।

ক্রেতা জয়নুল আবেদিন জানান, ‘গত ১০ বছর আগেও বেত দিয়ে ঝুড়ি, ফুল গাছের টব, ছোফা, লাঠিসহ প্রয়োজনীয় বিভিন্ন আসবাবপত্র তৈরি করা হত। ঘরবাড়িতে রশি বা দড়ির প্রয়োজনীয়তা মেটাতে বেত ব্যবহার করা হতো। আজ বেত অনেকটাই দুষ্প্রাপ্য হওয়ায় তার স্থান দখল করেছে প্লাস্টিক। এতে প্রকৃতি থেকে যেমন হারিয়ে যাচ্ছে একটি প্রয়োজনীয় প্রজাতির লতানো গাছ, তেমনই হারাচ্ছে প্রকৃতির ভারসাম্য।’

আমতলী উপজেলা সিনিয়র  কৃষি কর্মকর্তা মো. ইছা বলেন, ‘বেত এক সময় গ্রামীণ জনজীবনের দৈনন্দিন ব্যবহার্য জিনিসপত্র তৈরির অন্যতম অনুষঙ্গ ছিল। শহুরে জীবনেও বেতের তৈরি জিনিসপত্র আভিজাত্যের প্রতীক। কিন্তু বর্তমানে মানুষ তার প্রয়োজনে ঝোঁপ-ঝাড়ের সংখ্যা কমিয়ে ফেলছে। ফলে দুঃখজনক হলেও সত্য যে, বেতও বেতফল হারিয়ে যাচ্ছে।’ 

ভবিষ্যতের জন্য উদ্যোগের প্রয়োজন
এই সংকট কাটিয়ে ওঠার জন্য নানা উদ্যোগ প্রয়োজন। বিশেষ করে স্থানীয় কৃষি বিভাগ এবং সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলো যদি বেত গাছের চাষ ও সংরক্ষণের জন্য কোনো উদ্যোগ নেয়, তাহলে আগামী দিনে এই গুরুত্বপূর্ণ প্রাকৃতিক সম্পদ পুনরুদ্ধার সম্ভব হতে পারে। এছাড়া গ্রামের মানুষদের মধ্যে সচেতনতা সৃষ্টি করা, বেতের প্রতি আগ্রহ বাড়ানো এবং এর ব্যবহারিক গুরুত্ব তুলে ধরা একান্ত প্রয়োজন।

এটিআর/

Logo
সম্পাদকমণ্ডলীর সভাপতি মোস্তফা কামাল মহীউদ্দীন ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক সৈয়দ মেজবাহ উদ্দিন প্রধান, ডিজিটাল সংস্করণ হাসনাত কাদীর