
- ওয়াসার সাবেক এমডি ও আজিজ খানের ব্যবসায়িক পার্টনার
- পরস্পর যোগসাজশে হাতিয়েছেন হাজার হাজার কোটি টাকা
- সরকারের প্রায় ৫০ হাজার কোটি টাকার প্রকল্প হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ
ইউনাইটেড ডেলকট ওয়াটার লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক দায়েম খন্দকারের বিরুদ্ধে তথ্যানুসন্ধান শুরু করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। তিনি ওয়াসার সাবেক এমডি তাসকিম আহম্মেদ খান ও সামিট গ্রুপের চেয়ারম্যান মুহাম্মদ আজিজ খানের ব্যবসায়িক পার্টনার ছিলেন। এছাড়া তিনি আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে সংযোগ তৈরি করে সরকারের বেশ কিছু বড় প্রকল্প বিদেশি প্রতিষ্ঠানকে পাইয়ে দিয়েছেন বলে জানা গেছে।
সূত্র জানায়, তারা পরস্পর যোগসাজশে ঢাকা ওয়াসার গুরুত্বপূর্ণ মেগা প্রজেক্ট হাতিয়ে নেওয়া সহ সড়ক ও জনপদ বিভাগের বেশ কিছু প্রকল্প বিদেশি প্রতিষ্ঠানকে পাইয়ে দেওয়ার মাধ্যমে হাজার হাজার কোটি টাকা আত্মসাৎ করেছেন।
সম্প্রতি দুদকের সহকারী পরিচালক (বিশেষ অনুবিভাগ ও তদন্ত-১) মোহাম্মদ মনিরুল ইসলাম দায়েম খন্দকারের বিরুদ্ধে থাকা অভিযোগের বিষয়ে দুদকে হাজির হওয়ার নোটিশ জারি করেন। কিন্তু দুদকের নোটিশের তিনি কোনো জবাব দেননি।
দুদকের সহকারী পরিচালক মোহাম্মদ মনিরুল ইসলাম বদলি হয়ে ঢাকার বাইরে চলে যাওয়ায় এ বিষয়ে তার বক্তব্য পাওয়া যায়নি। তবে দুদকের দেওয়া নোটিশে বলা হয়েছে, দায়েম খন্দকারের অভিযোগের সুষ্ঠু অনুসন্ধানের স্বার্থে তার বক্তব্য গ্রহণ করা একান্ত প্রয়োজন। এ জন্য ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২৫ তারিখ সকাল ১০টায় দুদকের ঢাকা অফিসে হাজির হওয়ার জন্য তাকে অনুরোধ করা হয়েছিল। তিনি উপস্থিত হননি।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একটি সূত্র জানায়, ইউনাইটেড ডেলকট ওয়াটার লিমিটেড সরকারের অনেক গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্প হাতে নিয়ে কাজ করায় অনেক অনিয়ম হয়েছে। এখন দুদক অনুসন্ধানকারী কর্মকর্তা নিয়োগ দেবে এবং বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে তথ্য চেয়ে চিঠি পাঠাবে।
দায়েম খন্দকারের সঙ্গে ফোন ও হোয়াটসঅ্যাপে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
সূত্র জানায়, ইউনাইটেড ডেলকট ওয়াটার লিমিটেড যে মেগা প্রকল্পগুলো বাস্তবায়ন করেছে, সেগুলো হলো :
১. ঢাকা স্যানিটেশন ইমপ্রুভমেন্ট প্রজেক্ট (ডিএসআইপি)– ৫১৮৮ কোটি টাকা ব্যয়ে। ঢাকা মহানগরীর নির্ধারিত এলাকায় নিরাপদ পয়ঃসেবা বৃদ্ধি করে ঢাকা ওয়াসার পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থা সম্প্রসারণ। বিদ্যমান পাগলা পয়ঃশোধনাগার উন্নতকরণের মাধ্যমে প্রায় ১.৫ মিলিয়ন লোক উপকৃত হবে।
২. ঢাকা ওয়াটার সাপ্লাই নেটওয়ার্ক ইমপ্রুভমেন্ট প্রজেক্ট (ডিডব্লিউএসএনআইপি)– ৩৯৮০ কোটি টাকা ব্যয়ে। ঢাকা শহরবাসীকে সার্বক্ষণিক নির্ভরযোগ্য পানির সরবরাহ এবং ঢাকা ওয়াসার সেবার মান ও সক্ষমতা বৃদ্ধি। প্রকল্প বাস্তবায়নের মাধ্যমে ঢাকা ওয়াসার ৭টি জোনে পানি সরবরাহ নেটওয়ার্ক ও গ্রাহক সংযোগ পুনর্বাসন এবং ডিস্ট্রিক্ট মিটারিং এরিয়া (ডিএমএ) প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। অগ্রগতি ৯৫ শতাংশ।
৩. সায়েদাবাদ ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্লান্ট (ফেস-৩)– ১৬,০১৫ কোটি টাকা ব্যয়ে। নারায়ণগঞ্জ জেলার সোনারগাঁ উপজেলাধীন হাড়িয়ায় পাম্পিং স্টেশন স্থাপন করে মেঘনা নদী থেকে দৈনিক প্রায় ৯৫ কোটি লিটার অপরিশোধিত পানি শোধনাগারে সরবরাহ এবং অতিরিক্ত ৪৫ কোটি লিটার পানি ঢাকা মহানগরবাসীকে প্রদান। অগ্রগতি ১৫ শতাংশ।
৪. ঢাকা ইনভারমেন্টালি সাসটেনেবল ওয়াটার সাপ্লাই প্রজেক্ট (ডিইএসডব্লিউএসপি)– ১০,৯৭৪ কোটি টাকা ব্যয়ে। ৫০০ এমএলডি পানি পরিশোধন ও সরবরাহের মাধ্যমে ঢাকা মহানগরীর পানি সরবরাহ ব্যবস্থা নির্বিঘ্ন ও নিশ্চিত করা। অগ্রগতি ৯১ শতাংশ।
৫. দাসেরকান্দি সুয়ার ট্রিটমেন্ট প্লান্ট– ৩,৭১২ কোটি টাকা ব্যয়ে। ঢাকা ওয়াসার একটি আধুনিক পয়ঃশোধনাগার, যা ৫০ কোটি লিটার পয়ঃবর্জ্য পরিশোধনের মাধ্যমে ঢাকার নদীগুলোর দূষণ রোধে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। এটি বাংলাদেশের প্রথম এবং দক্ষিণ এশিয়ার সর্ববৃহৎ স্যুয়ারেজ ট্রিটমেন্ট প্লান্ট।
৬. ওয়েল ফিল্ড ইন ভাকুরটা-তেতুলহারা (সাভার) এরিয়া।
এছাড়া দায়েম খন্দকার যেসব কোম্পানিকে সরকারি প্রকল্প পাইয়ে দিয়েছেন, সেগুলো হলো :
১. সুইজ অটোভি ভিওলা (ফ্রান্স)
২. চাইনিজ কোম্পানি সিনো হাইড্রো
৩. চাইনিজ কোম্পানি সি এম এ সি
৪. চাইনিজ কোম্পানি পাওয়ার চায় না
৫. চাইনিজ কোম্পানি ইউনাইটেড ওয়াটার গ্রুপ
আরকেএইচ/এমএইচএস