অপরাধজগতের দ্বন্দ্বে খুন হয় মামুন, গুলি করার চুক্তি হয়েছিল দুই লাখ টাকায় : পুলিশ
বাংলাদেশের প্রতিবেদক
প্রকাশ: ১২ নভেম্বর ২০২৫, ১৫:২০
ছবি : সংগৃহীত
অপরাধজগতের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে দ্বন্দ্বে পুলিশের তালিকায় থাকা শীর্ষ সন্ত্রাসী তারিক সাইফ মামুনকে প্রকাশ্যে গুলি করে হত্যা করা হয়। জামিনে মুক্ত হয়ে মামুন ফের অপরাধ জগতের নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার চেষ্টা করছিলেন। আরেক সন্ত্রাসী রনির নির্দেশে দুই লাখ টাকার বিনিময়ে মামুনকে গুলি করে হত্যা করেন ফারুক ও রবিন।
বুধবার (১২ নভেম্বর) দুপুরে এক সংবাদ সম্মেলনে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) গোয়েন্দা বিভাগের (ডিবি) অতিরিক্ত কমিশনার শফিকুল ইসলাম এসব কথা বলেন। রাজধানীর মিন্টো রোডের ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে এই সংবাদ সম্মেলন হয়।
মামুন হত্যার ঘটনায় এখন পর্যন্ত পাঁচ ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে বলে উল্লেখ করেন শফিকুল ইসলাম।
তিনি বলেন, গ্রেপ্তার ব্যক্তিদের মধ্যে দুজন শ্যুটার-ফারুক ও রবিন। অন্য তিনজন হলেন শামীম, রুবেল ও ইউসুফ। হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত মোটরসাইকেল, অস্ত্র, অব্যবহৃত গুলি ও নগদ ১ লাখ ৫৩ হাজার টাকা উদ্ধার করা হয়েছে। এই টাকা রবিন ও ফারুককে হত্যার পারিশ্রমিক হিসেবে দিয়েছিলেন রনি।
ডিএমপির ডিবির প্রধান বলেন, গতকাল রাতে ফারুক, রবিন, শামীম ও রুবেলকে নরসিংদী থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। হত্যার পর তারা ঢাকা থেকে সিলেট হয়ে ভারতে যাওয়ার চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু সিলেট থেকে ভারত প্রবেশ করতে না পেরে তারা সাতক্ষীরা হয়ে সীমান্ত পার হওয়ার পরিকল্পনা করছিলেন। সিলেট থেকে আসার পথে নরসিংদীতে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়।
শফিকুল ইসলাম বলেন, হত্যার পর ফারুক ও রবিন তাদের ব্যবহৃত অস্ত্রসহ অব্যবহৃত গুলি রনির নির্দেশে রুবেলের হেফাজতে রাখেন। রুবেল ভাড়ায় গাড়ির ব্যবসা করেন। পরে রুবেল অস্ত্র ও গুলি ইউসুফের হেফাজতে দেন। রুবেলকে ধরার পর তাকে সঙ্গে নিয়ে রাজধানীর রায়েরবাজারে গতকাল মঙ্গলবার রাতে অভিযান চালায় পুলিশ। অভিযানে ইউসুফ গ্রেপ্তার হন। ইউসুফ পেশায় একজন দরজি। পরে তার ঘরের মেঝে থেকে দুটি বিদেশি পিস্তল,৬টি গুলি ও দুটি ম্যাগাজিন উদ্ধার করা হয়।
হত্যার পরিকল্পনা সম্পর্কে ডিএমপির ডিবিপ্রধান বলেন, একসময়ের আন্ডারওয়ার্ল্ডের আলোচিত জুটি ইমন-মামুনের দ্বন্দ্ব প্রকট হয়ে ওঠে। বিগত কিছুদিন ধরে রনি একাধিকবার মামুনকে হত্যার পরিকল্পনা করেন। ফারুকের সহযোগিতায় করা এসব চেষ্টা ব্যর্থ হয়। রনি শীর্ষ সন্ত্রাসী সানজামুল ইসলাম ইমনের ঘনিষ্ঠ। সবশেষ গত সোমবার হিমেল হত্যা মামলায় হাজিরা দিতে আদালতে আসেন মামুন। মামুনকে হত্যার জন্য এই দিনটিকে বেছে নেওয়া হয়।
হত্যার বর্ণনা দিয়ে শফিকুল ইসলাম বলেন, পরিকল্পনা অনুযায়ী, ৯ নভেম্বর সন্ধ্যার দিকে রনি তার বাসায় রবিনকে ডেকে নেন। রনি তাকে জানান, তার সঙ্গে ফারুক, সুমন, কামালসহ আরও কয়েকজন থাকবেন। তারা মামুনকে মেরে ফেলবেন। তিনি রবিনকে সঙ্গে থাকতে বলেন। তাকে টাকা দেওয়ার প্রস্তাব দেন। এতে রবিন রাজি হন। ঘটনার দিন সকালে রনি ফোন দিয়ে সবাইকে আদালত এলাকায় যেতে বলেন। রবিন তার বন্ধু শামীমের সঙ্গে মোটরসাইকেলে করে আদালত এলাকায় গিয়ে হত্যায় অংশ নেন। অন্যরাও সেসময় আদালত এলাকায় অবস্থান করছিলেন। পরিকল্পনা অনুযায়ী প্রথমে সুমন ও ফারুকের গুলি করার কথা ছিল। কিন্তু শেষমুহূর্তে ফারুক ও রবিন গুলি করেন।
সংবাদ সম্মেলনে শফিকুল ইসলাম বলেন, মামুনের গতিবিধি অনুসরণ করে ফারুক ও রবিনকে খবর দেন কামাল। সংকেত পেয়ে তারা গুলি ছুড়ে মামুনের মৃত্যু নিশ্চিত করেন। হত্যার পর তারা বেড়িবাঁধ হয়ে রায়েরবাজার যান। সেখানে রনির নির্দেশে অস্ত্র ও গুলি ইউসুফের কাছে রাখা হয়। পরে রনির নির্দেশে ফারুক ও সুমনকে দুই লাখ টাকা দেন রুবেল। ফারুক ও সুমন এক লাখ টাকা করে ভাগ করে নেন।
- এমআই

