Logo

অপরাধ

হঠাৎ বেড়েছে খুনোখুনি : জনমনে আতঙ্ক

রেজাউল করিম হীরা

রেজাউল করিম হীরা

প্রকাশ: ১৯ নভেম্বর ২০২৫, ০৮:৪৬

হঠাৎ বেড়েছে খুনোখুনি : জনমনে আতঙ্ক

রাজধানীর পুরান ঢাকার আদালত পাড়ার কাছেই প্রকাশ্যে খুন হন এক সময়ের শীর্ষ সন্ত্রাসী তারিক সাইফ মামুন। এর দুই দিন পর হাইকোর্টের সামনে ড্রামে ২৬ টুকরা লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। এ ঘটনার রেশ কাটতে না কাটতেই গত সোমবার রাতে পল্লবীতে যুবদল নেতা গোলাম কিবরিয়াকে খুন করে দুর্বৃত্তরা। একের পর এক নৃশংস ও ফিল্মি স্টাইলে খুনের ঘটনা জনমনে দেখা দিয়েছে আতঙ্ক। 

পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাবাহিনী দাপ্তরিক কাজে ফিরলেও অপরাধ দমন কার্যক্রমে ঘাটতি রয়েছে বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা। তারা বলছেন, দ্রুত আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতি ঘটাতে না পারলে সুষ্ঠু নির্বাচন আয়োজন প্রক্রিয়ায়ও এর প্রভাব পড়তে পারে। 

ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) হিসাব মতে, চলতি বছরের গত ১০ মাসে ঢাকায় ১৯৮টি হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। সেই হিসাবে মাসপ্রতি গড়ে প্রায় ২০টি খুনের ঘটনা ঘটেছে। বেশির ভাগ হত্যাকাণ্ডের রহস্য উদঘাটন করার দাবি পুলিশের। 

গত ১১ নভেম্বর রাজধানীতে একই দিনে জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের দুই নেতার মরদেহ উদ্ধার করা হয়। একজনের মরদেহ গুলশানে, অন্যজনের মোহাম্মদপুরে পাওয়া যায়। নিহতরা হলেন- পটুয়াখালীর বাউফল উপজেলার সূর্যমনি ইউনিয়ন ছাত্রদলের সদস্য সৌরভ এবং মোহাম্মদপুর থানা ছাত্রদলের যুগ্ম আহ্বায়ক সাব্বির আহমেদ। 

এর পরদিন ভোরে রাজধানীর বাড্ডার কমিশনার গলিতে মামুন শিকদার (৩৯) নামে এক ব্যক্তিকে গুলি করে হত্যা করা হয়। এদিন রাতে রাজধানীর যাত্রাবাড়ীতে চোর সন্দেহে মো. বাপ্পি (১৭) নামে এক কিশোরকে পিটিয়ে হত্যার ঘটনা ঘটে। 

অপহরণের পর হত্যা করা হয় ক্যামব্রিয়ান কলেজের শিক্ষার্থী সুদীপ্ত রায়কে। গত মঙ্গলবার ভোরে শাহআলী থানার দিয়াবাড়ী এলাকার একটি ভাড়া বাসা থেকে পুলিশ তার মরদেহ উদ্ধার করে। তার পরিবারের সদস্যরা জানান, গত ৭ নভেম্বর রাতে অপহরণের শিকার হন সুদীপ্ত। পরে তার পরিবারের কাছে ৮০ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করে অপহরণকারীরা।

পুলিশ সদর দপ্তরের অতিরিক্ত আইজিপি (ক্রাইম অ্যান্ড অপারেশন) খন্দকার রফিকুল ইসলাম বলেন, সাম্প্রতিক সময়ে হত্যাকাণ্ডের ঘটনাগুলোর কারণ বিশ্লেষণে দেখা যায়, রাজনৈতিক কারণে কিছু খুনের ঘটনা ঘটলেও অন্য ঘটনাগুলোর কোনোটি প্রেম, কোনোটি আর্থিক দেনা-পাওনা কিংবা প্রতিটি খুনের ঘটনাই পৃথক কারণে ঘটেছে। যা সার্বিক আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতির ইঙ্গিত বহন করে না। এগুলোর সবই সামাজিক অপরাধ বা অবনতির ইঙ্গিত দিচ্ছে। 

তবে পুলিশের পক্ষ থেকে যে কারণেই এসব অপরাধ সংঘটিত হোক না কেন, সব ঘটনাই গুরুত্বের সঙ্গে দেখা হচ্ছে এবং যত দ্রুত সম্ভব অপরাধীদের গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় আনা হচ্ছে। অপরাধ বিশেষজ্ঞ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজ বিজ্ঞান ইনস্টিটিউটের সহযোগী অধ্যাপক ড. তৌহিদুল হক বলেন, দুটি কারণে পারিবারিক, সামাজিক, রাজনৈতিক কিংবা অন্য যেকোনো কারণে হত্যাকাণ্ডের মতো ঘটনাগুলো বৃদ্ধির প্রধানত দুটি কারণ থাকে। 

প্রথমত এসব ঘটনা যারা ঘটায় তারা যখন বুঝতে পারে কাউকে হত্যা করলেও তার কিছু হবে না, পুলিশ তাকে গ্রেপ্তার করতেও পারে, নাও পারে। আবার গ্রেপ্তার করলেও তার শাস্তি হতেও পারে, নাও পারে। এমন মনস্তাত্ত্বিক অবস্থা তাকে খুনের মতো ভয়ঙ্কর অপরাধ করতে সাহস জোগায়।

দ্বিতীয়ত, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সংশ্লিষ্টরা কতটুকু প্রস্তুত আছে বা তাদের সক্ষমতা কতটুকু আছে। 

তাদের সোর্সিং এবং দক্ষতার ঘাটতি, অপরাধের বিরুদ্ধে কঠোর মনোভাবের অভাব, অপরাধীদের অপরাধ করতে প্রলুব্ধ করে বা সাহস জোগায়। এ ছাড়া এসব অপরাধের ঘটনায় অতীতে খুব বেশি দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি না হওয়াটাও সমাজে অপরাধপ্রবণ মানুষদের বেপরোয়া হতে উৎসাহিত করে।

বিকেপি/এমএইচএস

প্রাসঙ্গিক সংবাদ পড়তে নিচের ট্যাগে ক্লিক করুন

হত্যা / খুন অপরাধ

Logo
সম্পাদকমণ্ডলীর সভাপতি মোস্তফা কামাল মহীউদ্দীন ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক সৈয়দ মেজবাহ উদ্দিন প্রধান, ডিজিটাল সংস্করণ হাসনাত কাদীর