• বুধবার, ১৫ মে ২০২৪, ১ জৈষ্ঠ ১৪২৯
সেই গায়ত্রীর খোঁজে পিবিআই

ফাইল ছবি

অপরাধ

খোঁজ মেলেনি সেই মুসাসহ তিনজনের 

সেই গায়ত্রীর খোঁজে পিবিআই

  • ইমরান আলী
  • প্রকাশিত ২৬ মে ২০২১

চট্টগ্রামে আলোচিত মিতু হত্যার প্রধান আসামি সাবেক পুলিশ সুপার (এসপি) বাবুল আকতারের কথিত প্রেমিকার বিষয়ে জানতে জাতিসংঘের শরণার্থী সংস্থাকে (ইউএনএইচসিআর) চিঠি দিয়েছে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)। গত রোববার ভারতীয় বংশোদ্ভূত গায়ত্রী নামের ওই নারীর অবস্থান জানতে চিঠি দেওয়া হয়। এদিকে গতকাল মঙ্গলবার এ মামলায় মোখলেসুর রহমান নামের এক ব্যক্তি আদালতে সাক্ষ্য দিয়েছেন। তবে মামলার অন্যতম আসামি হিসেবে বিবেচিত মুসাসহ ৩ জনের এখনো কোনো খোঁজ মেলেনি। 

মামলার তদন্ত কর্মকর্তা পিবিআই পরিদর্শক সন্তোষ কুমার চাকমা বলেন, মামলার এজাহারে গায়ত্রী নামের এক নারীর তথ্য রয়েছে। এ ঘটনার সঙ্গে তার সম্পৃক্ততা রয়েছে বলে আমরা মনে করছি। এজন্য ইউএনএইচসিআর বাংলাদেশের প্রধানকে গত রোববার একটি চিঠি দেওয়া হয়েছে। চিঠিতে ওই নারীর বর্তমান অবস্থানসহ কয়েকটি বিষয় জানতে চাওয়া হয়েছে।

এর আগে বাবলুকে দেওয়া ওই নারীর দুটি বই ফরেনসিক পরীক্ষার জন্য পাঠাতে আবেদন করার কথা জানিয়েছে পিবিআই। তিনি জানান, ‘বই দুটি আমরা জব্দ করেছি। বইগুলোতে কিছু লিখিত বিষয় রয়েছে, যেগুলো পরকীয়ার সম্পর্ক নির্দেশ করে। মামলার তদন্তের স্বার্থে বই দুটির ফরেনসিক পরীক্ষা করা হবে। এজন্য আদালতের অনুমতি লাগবে। আমরা শিগগির পরীক্ষার জন্য আদালতে আবেদন করব।’

বই দুটি ভারতীয় ওই নারী উপহার হিসেবে বাবুলকে দিয়েছে বলে মিতু হত্যা মামলার এজাহারে উল্লেখ করেছেন মামলার বাদী ও মিতুর বাবা মোশাররফ হোসেন। বইগুলো হচ্ছে-আহমেদ রশিদ রচিত ‘তালিবান’ এবং জেফারি আরচারের ‘বেস্ট কেপেট সিক্রেট’।

এজাহারে উল্লেখ করা হয়, কক্সবাজার জেলায় অতিরিক্ত পুলিশ সুপার পদে কর্মরত থাকার সময় ২০১৩ সালে ইউএনসিসিআরের কর্মীর সঙ্গে বিয়েবহির্ভূত সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েন বাবুল। এই নিয়ে মিতুর সঙ্গে দাম্পত্য কলহ শুরু হয়। কলহের সময় মিতুকে শারীরিক ও মানসিকভাবে নির্যাতন করেন বাবুল।

এরই মধ্যে ২০১৪ সালের জুলাই মাস থেকে ২০১৫ সালের জুন পর্যন্ত সুদানে জাতিসংঘ শান্তি মিশনে ছিলেন বাবুল। এই সময় বাবুলের মোবাইল ফোনটি চট্টগ্রামের বাসায় ছিল। ওই মোবাইল ফোনে মোট ২৯ বার মেসেজ দেন তার কথিত প্রেমিকা।

আদালতে একজনের সাক্ষ্য : চট্টগ্রামের আলোচিত মাহমুদা খানম মিতু হত্যায় মামলায় সাক্ষ্য দিয়েছেন মোখলেছুর রহমানে নামে এক ব্যক্তি। গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে চট্টগ্রাম মহানগর হাকিম শফিউদ্দিনের আদালতে সাক্ষ্য দেন তিনি।

আদালতের প্রসিকিউশন শাখায় কর্মরত পাঁচলাইশ থানার জিআরও উপপরিদর্শক (এসআই) শাহীন ভূঁইয়া বলেন, মিতু হত্যায় মামলায় একজন সাক্ষ্য দিয়েছেন। সাক্ষ্য দেওয়া মো. মোখলেছুর রহমানের বাড়ি পাবনা জেলায় বলে জানা গেছে। তবে তিনি কীভাবে মামলার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সেই বিষয়ে বিস্তারিত জানাননি উপপরিদর্শক (এসআই) শাহীন ভূঁইয়া।

বাবুল আকতারের আইনজীবী অ্যাডভোকেট আরিফুর রহমান বলেন, মিতু হত্যা মামলায় মঙ্গলবার আদালতে একজন সাক্ষ্য দিয়েছেন। আমি বিস্তারিত তথ্য পাইনি। তবে এ বিষয়ে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তাও কিছু বলতে রাজি হননি।

মুসাসহ তিনজন পলাতক : গত ১২ মে মিতুর বাবার করা মামলায় বাবুল আকতরসহ আটজনকে আসামি করা হয়। তাদের মধ্যে মুসাসহ পলাতক রয়েছেন তিনজন। অন্য ‍দুজন হলেন তিন নম্বর আসামি এহতেশামুল হক ওরফে হানিফুল হক ওরফে ভোলাইয়্যা এবং ছয় নম্বর আসামি খায়রুল ইসলাম ওরফে কালু ওরফে কসাই কালু।

এ মামলার গুরুত্বপূর্ণ এ তিন আসামির এখন পর্যন্ত খোঁজ মেলেনি। বিশেষ করে মুসাকে খুবই গুরুত্বপূর্ণ আসামি। কারণ বাবুল আকতারের সঙ্গে তার ফোনালাপ মামলার মোড় ঘুরিয়ে দেয়। 

মামলার তদন্ত কর্মকর্তা পিবিআইয়ের পরিদর্শক সন্তোষ কুমার চাকমাও বলেন, মিতু হত্যার প্রথম মামলায় গ্রেপ্তার হয়েছিলেন তিনজন। তারা হলেন মোতালেব মিয়া অরফে ওয়াসিম, আনোয়ার হোসেন ও শাহজাহান মিয়া। আর নতুন মামলা হওয়ার পর বাবুল আকতার ও সাইদুল ইসলাম সিকদার গ্রেপ্তার হয়েছেন। মুসাসহ পলাতক তিন আসামিকে গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে বলে জানান সন্তোষ কুমার।

প্রসঙ্গত, ২০১৬ সালের ৫ জুন ভোরে ছেলেকে স্কুলে পৌঁছে দিতে বের হওয়ার পর চট্টগ্রাম শহরের জিইসি মোড়ে কুপিয়ে ও গুলি করে হত্যা করা হয় মিতুকে। ঘটনার পর তৎকালীন এসপি বাবুল আকতার পাঁচলাইশ থানায় অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিদের আসামি করে হত্যা মামলা করেন। মামলায় তিনি অভিযোগ করেন, তার জঙ্গিবিরোধী কার্যক্রমের জন্য স্ত্রীকে হত্যা করা হয়ে থাকতে পারে।

তবে বাবুলের শ্বশুর সাবেক পুলিশ কর্মকর্তা মোশাররফ হোসেন ও শাশুড়ি সাহেদা মোশাররফ এই হত্যার জন্য বাবুল আকতারকে দায়ী করে আসছিলেন।

শুরু থেকে চট্টগ্রাম পুলিশের গোয়েন্দা শাখা (ডিবি) মামলাটির তদন্ত করে। পরে ২০২০ সালের জানুয়ারিতে আদালত মামলাটির তদন্তের ভার পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনকে (পিবিআই) দেয়। এরপর আস্তে আস্তে জট খুলতে থাকে দেশজুড়ে তোলপাড় সৃষ্টিকারী চাঞ্চল্যকর এই মামলার।

গত ১১ মে বাবুল আকতারকে হেফাজতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করে পিবিআই। তদন্তে বাবুল আকতারের সম্পৃক্ততা পাওয়ায় তার বিরুদ্ধে মামলা দায়েরের লক্ষ্যে ১২ মে ওই মামলার ৫৭৫ পৃষ্ঠার চূড়ান্ত প্রতিবেদন আদালতে জমা দেয় পিবিআই।

একই দিন দুপুরে মিতুর বাবা মোশাররফ হোসেন বাদী হয়ে নগরীর পাঁচলাইশ থানায় বাবুল আকতারসহ আট জনকে আসামি করে হত্যা মামলা দায়ের করেন। মামলার বাকি সাত আসামি হলেন-মো. কামরুল ইসলাম শিকদার মুসা, এহতেশামুল হক প্রকাশ হানিফুল হক প্রকাশ ভোলাইয়া, মো. মোতালেব মিয়া ওয়াসিম, মো. আনোয়ার হোসেন, মো. খাইরুল ইসলাম কালু, মো. সাইদুল ইসলাম সিকদার সাক্কু এবং শাহজাহান মিয়া।

 

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads