বিদ্যুৎবিচ্ছিন্ন ডিইপিজেড, ৯০ কারখানা ছুটি
ইউনাইটেড পাওয়ারের গ্যাসের লাইন কাটল তিতাস
প্রকাশ: ২৯ এপ্রিল ২০২৫, ০১:১০

রাজধানীর আশুলিয়ায় ঢাকা রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চলে (ডিইপিজেড) সোমবার দুপুর থেকে বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ রয়েছে। এর জেরে, ডিইপিজেডের সব কারখানার শ্রমিকদের ছুটি দিয়েছে কারখানা কর্তৃপক্ষ।
ডিইপিজেড কর্তৃপক্ষ জানায়, ডিইপিজেডের জন্য নিরবচ্ছিভাবে বিদ্যুৎ সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান ইউনাইটেড পাওয়ারের গ্যাস সংযোগ বিচ্ছিন্ন করায় এ সংকট তৈরি হয়েছে।
আর ইউনাইটেড পাওয়ারের কর্মকর্তাদের দাবি, তিতাস কর্তৃপক্ষ কোনো ধরনের পূর্ব ঘোষণা ছাড়াই গ্যাস সংযোগ বিচ্ছিন্ন করায় ডিইপিজেডের সকল প্রতিষ্ঠানের উৎপাদন কার্যক্রম বন্ধ হয়ে গেছে। আর তিতাস বলছে, গ্যাস বিল বকেয়া থাকায় গ্যাস সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়েছে। এদিকে এ কারণে বিপাকে পড়েন সংশ্লিষ্টরা।
বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন ডিইপিজেড, কারখানা ছুটি
ডিইপিজেড কর্তৃপক্ষ জানায়, সোমবার দুপুর ১টা ১০ মিনিটের দিকে ডিইপিজেডের বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ হয়ে যায়। বিদ্যুৎ না থাকায় পরবর্তীতে সব কারখানা ছুটি দেওয়া হয়।
তথ্য বলছে, তিতাস গ্যাস কর্তৃপক্ষ ডিইপিজেডের জন্য নিরবচ্ছিভাবে বিদ্যুৎ সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান ইউনাইটেড পাওয়ারকে গ্যাস সরবরাহ বন্ধ করে দেওয়ায় তাদের বিদ্যুৎ উৎপাদন বন্ধ হয়ে যায়। এরই জেরে ডিইপিজেডে বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ হয়ে যায়।
ডিইপিজেডের নির্বাহী পরিচালক মো. শরীফুল ইসলাম বলেন, ইউনাইটেড পাওয়ারকে ডিইপিজেডে বিদ্যুৎ সরবরাহের প্রকল্পটিতে গ্যাস সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেয় তিতাস গ্যাস কর্তৃপক্ষ। আর গ্যাস সংযোগ বিচ্ছিন্ন হওয়ায় বিদ্যুৎ উৎপাদন বন্ধ হয়ে যায়। এ কারণে ডিইপিজেডে বিদ্যুৎ সরবরাহ করতে পারছে না ইউনাইটেড পাওয়ার। এর জেরে, ৯০টি কারখানার প্রায় ১ লাখ শ্রমিককে ছুটি দেওয়া হয়।
এই কর্মকর্তা বলেন, বিদ্যুৎ সংযোগ না থাকায় বড় ধরনের বিপর্যয়ের মুখে পড়তে হয়েছে। মঙ্গলবারও যদি এমনটি চলমান থাকে, তাহলে সংকট আরও বৃদ্ধি পাবে। শ্রমিকরা কাজ না করতে পেরে বিক্ষুব্ধ হলে বিষয়টি আরও জটিল হয়ে উঠবে।
তিনি বলেন, কোনো নোটিশ ছাড়া গ্যাস বিচ্ছিন্নের ঘটনায় বিদেশি প্রতিষ্ঠানগুলো নানাভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে। তিতাস বলছে, ইউনাইটেড পাওয়ারের কাছে বিল বকেয়া রয়েছে। তারা বকেয়া পরিশোধ করেনি। এ ব্যাপারে আদালতে দীর্ঘদিন ধরে মামলা চলছে। কিন্তু আমাদের কথা হচ্ছে বেপজাকে কোন ধরনের পূর্ব নোটিশ না দিয়ে হঠাৎ করে এ ধরনের পদক্ষেপ নিয়েছেন।
কেন গ্যাস নেই, জানে না ইউনাইটেড পাওয়ার
এদিকে গ্যাস বিচ্ছিন্নের কারণ বলতে পারেনি ইউনাইটেড পাওয়ার প্লান্ট কর্তৃপক্ষ। তারা বলছে, কোনো কারণ ছাড়াই তিতাস গ্যাস বিচ্ছিন্ন করেছে।
ইউনাইটেড পাওয়ার প্লান্টের ব্যবস্থাপক মো. মমতাজ হাসান বলেন, গ্যাসের কোনো চাপ নেই। প্রেসার শূন্য। কিন্তু কেন তিতাস কর্তৃপক্ষ এমনটি করলেন, সে ব্যাপারে এখানকার (আশুলিয়া অঞ্চলের) তিতাসের লোকজন কিছু বলতে পারেননি। আমরা নিজেরাও বিষয়টি নিয়ে জানি না।
তিনি বলেন, আমার জানা মতে বকেয়া নিয়ে কোনো ধরনের মামলা নেই। তিতাস কেন গ্যাস সরবরাহ বন্ধ করে দিল সেটি জানা নেই।
তিতাসের আশুলিয়া আঞ্চলিক কার্যালয়ের ব্যবস্থাপক প্রকৌশলী আবু ছালেহ মুহাম্মদ খাদেমুদ্দীন বলেন, গ্যাস বিল বকেয়া থাকায় গ্যাস সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়। এটি সরকারের ঊর্ধ্বতন মহলের সিদ্ধান্ত। দুপুরের দিকে গ্যাস সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়েছে।
এদিকে নিরাপত্তা ঝুঁকি এড়াতে পল্লী বিদ্যুতের সহায়তায় ইপিজেডের ভেতরের সড়ক বাতিসহ আলো জ্বালিয়ে রাখা হয়েছে। বর্তমানে ঢাকা ইপিজেডের ৪৫ মেগাওয়াট বিদ্যুতের চাহিদা রয়েছে পল্লী বিদ্যুতের পক্ষ থেকে ২৫ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ সরবরাহের আশ্বাস মিলেছে বলে নিশ্চিত করেছে ঢাকা ইপিজেড কর্তৃপক্ষ।
উল্লেখ্য, ঢাকার সাভার উপজেলার আশুলিয়া থানাধীন এলাকায় ঢাকা রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চলের অবস্থান। এখানে পোশাক কারখানাসহ বিভিন্ন পণ্য উৎপাদনকারী অন্তত ৯০টি কারখানা চালু রয়েছে। এসব কারখানায় শ্রমিকের সংখ্যা প্রায় ১ লাখ।
আরিফ/এইচকে