
সংগৃহীত ছবি
পরিবেশবান্ধব চামড়া শিল্প গড়ে তুলতে আসন্ন কোরবানির ঈদের পূর্বেই বিদ্যমান সংকট নিরসনের জন্য জরুরি সরকারি ও ব্যাংকিং সহায়তার দাবি জানিয়েছে বাংলাদেশ ফিনিশড লেদার, লেদারগুডস অ্যান্ড ফুটওয়্যার এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিএফএলএলএফইএ) ও বাংলাদেশ ট্যানার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিটিএ)।
সোমবার (৫ মে) বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরের সঙ্গে বৈঠক শেষে উপস্থিত সাংবাদিকদের কাছে দুই সংগঠনের প্রধান উপদেষ্টা রশিদ ভূঁইয়া বলেন, চামড়া শিল্প আমাদের দেশের একটি ঐতিহ্যবাহী, কাঁচামালনির্ভর ও ৮০ শতাংশ মূল্য সংযোজনকারী রপ্তানি খাত। প্রায় ২ কোটি মানুষ প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে এই খাতের সঙ্গে জড়িত। অথচ, এই খাত এখন অস্তিত্ব রক্ষার লড়াইয়ে রয়েছে।
তিনি বলেন, হাজারীবাগ থেকে সাভারে স্থানান্তর ও সিইটিপি চালু না হওয়াসহ বিভিন্ন অবকাঠামোগত সমস্যার কারণে ট্যানারি মালিকরা চরম অর্থসংকটে পড়েছে। এলডব্লিউজি সনদ না থাকায় আন্তর্জাতিক ব্র্যান্ডগুলো বাংলাদেশের চামড়া কিনছে না, ফলে চীনের বাজারে কম দামে রপ্তানি করতে বাধ্য হচ্ছেন রপ্তানিকারকরা।
এছাড়া, বৈশ্বিক রাজনৈতিক অস্থিরতা, ডলার সংকট, মুদ্রাস্ফীতি এবং উচ্চ সুদ হারের কারণে ব্যাংক ঋণ পরিশোধে অক্ষম হয়ে পড়েছেন অনেক ট্যানারি মালিক। অনেক প্রতিষ্ঠান এখন খেলাপিতে পরিণত হয়েছে। এই পরিস্থিতিতে ঈদের আগে সরকারের জরুরি হস্তক্ষেপ ছাড়া পরিস্থিতির আরও অবনতি হবে বলে সতর্ক করেন তিনি।
এ সময় তারা তিন দফা দাবি জানান। দাবিগুলোর মধ্যে রয়েছে- ২০১৭ থেকে ২০২৫ সাল পর্যন্ত সময়কে বিবেচনায় নিয়ে সকল আরোপিত ও অনারোপিত সুদ, অতিরিক্ত সুদ মওকুফ করে ২ বছরের মরেটোরিয়ামসহ ১২ বছরে মূল ঋণ পরিশোধের সুযোগ চাওয়া হয়েছে। এতে কোনো ডাউন পেমেন্ট ছাড়াই ঋণ পুনঃতফসিলের প্রস্তাব রাখা হয়েছে। এছাড়া, ঈদ মৌসুমে চামড়া সংগ্রহের জন্য জামানত ছাড়াই আগের নিয়মে রপ্তানিকারকদের জন্য অগ্রিম ঋণ প্রদানের জন্য বাংলাদেশ ব্যাংককে সার্কুলার জারি করার অনুরোধ জানানো হয়েছে। চামড়া শিল্পে ব্যবহৃত কেমিক্যাল ও অন্যান্য অপরিহার্য উপকরণ আমদানির জন্য এলসির মার্জিন পূর্বের ন্যায় ১০ শতাংশ এ ফিরিয়ে আনারও দাবি জানানো হয়েছে। একই সঙ্গে পরিবেশবান্ধব উৎপাদনের জন্য নবায়নযোগ্য জ্বালানি, কঠিন বর্জ্য ব্যবস্থাপনা, ক্রোম রিকভারি প্ল্যান্ট স্থাপনের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ ব্যাংকের ‘সবুজ অর্থায়ন নীতিমালা’র আওতায় সহজ শর্তে ঋণ প্রদানের জন্য ব্যাংকগুলোকে নির্দেশনার দাবি জানানো হয়।
রশিদ ভূঁইয়া বলেন, এই পদক্ষেপগুলো যদি কোরবানির আগেই বাস্তবায়ন করা যায়, তবে লাখ লাখ শ্রমিকের কর্মসংস্থান নিশ্চিত হবে, রপ্তানির পরিমাণ ২.৫ বিলিয়ন ডলার থেকে ৬ বিলিয়ন ডলারে উন্নীত করা সম্ভব হবে। একইসাথে, ঈদ মৌসুমে চামড়া সংগ্রহে শৃঙ্খলা নিশ্চিত করা যাবে।
তিনি আরও বলেন, বর্তমানে হাজারীবাগের জায়গা রেড জোন মুক্ত হলেও গেজেট প্রকাশ ও রাজউক-এর কার্যকর পদক্ষেপের অভাবে ট্যানারি মালিকরা জমি ব্যবহার করতে পারছেন না। এই অব্যবস্থাপনার দ্রুত সমাধান প্রয়োজন।
এএইচএস/ওএফ