Logo

অর্থনীতি

এনবিআর কর্মকর্তাদের ‘কলম বিরতি’ কর্মসূচি অব্যাহত রাখার ঘোষণা

Icon

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১৫ মে ২০২৫, ১৬:৪৪

এনবিআর কর্মকর্তাদের ‘কলম বিরতি’ কর্মসূচি অব্যাহত রাখার ঘোষণা

ছবি : বাংলাদেশের খবর

এনবিআর কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলোচনা ছাড়া কোনো সংস্কার করা হলে তা মানা হবে না। শনিবার ১৭ মের মধ্যে দাবি না মানা হলে ‘কলম বিরতি’ কর্মসূচি অব্যাহত রাখার ঘোষণা দিয়েছেন এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিশোধের নেতারা। 

বৃহস্পতিবার (১৫ মে)  এনবিআর ভবনে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন উপ কর কমিশনার মোস্তাফিজুর রহমান, অতিরিক্ত কর কমিশনার সিফাত-ই-মরিয়ম, সহকারী কর কমিশনার নিপুণ চাকমা। 

পরে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে কর কমিশনার মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ‘সংস্কার কমিশন যেসব সুপারিশ করেছিলো সেগুলোকে পাশ কাটিয়ে রাতের আধারে এনবিআরকে সংস্কারের নামে দুই ভাগ করা হয়েছে।  যেখানে এনবিআর সংশ্লিষ্টদের কোনো মতামতই নেয়া হয়নি। এটা আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল আইএমএফের প্রেসক্রিপশন হয়েছে কিনা তাও আমরা কেউ জানতে পারিনি।’ 

সংস্কারের পক্ষে বিপক্ষে স্লোগানের বিষয়ে উপ কর কমিশনার মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ‘বাইরে এনবিআরের সংস্কারের পক্ষে-বিপক্ষে যে আলোচনা ও স্লোগান হচ্ছে এর সঙ্গে আমাদের কোনো সম্পর্ক নেই।  এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিশোধ দীর্ঘদিন ধরেই এ আন্দোলন করে আসছে। এতে কোনো গোষ্ঠী স্বার্থ হাসিলের উদ্দেশ্য আছে কিনা তাও আমাদের জানা নেই।’

রাজস্ব প্রশাসনে এনবিআরের কাঠামোগত পরিবর্তন ও বিলুপ্তি নিয়ে গভীর উদ্বেগ ও অসন্তোষ প্রকাশ করেছে এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদ।

সংগঠনটি এক বিবৃতিতে জানায়, অবিলম্বে তিন দফা দাবি পূরণ না হলে আন্দোলন অব্যাহত থাকবে।

তাদের প্রধান দাবি তিনটি হলো:

১. জারিকৃত রাজস্ব অধ্যাদেশ অবিলম্বে বাতিল করা,

২. রাজস্ব সংস্কার সংক্রান্ত পরামর্শক কমিটির প্রতিবেদন জনসমক্ষে প্রকাশ করা এবং

৩. সংশ্লিষ্ট সকল অংশীজনের অংশগ্রহণে সমন্বিত ও টেকসই সংস্কার পরিকল্পনা গ্রহণ করা।

সংগঠনটির অভিযোগ, এনবিআর বিলুপ্তি ও রাজস্ব নীতি পৃথককরণ সংক্রান্ত সিদ্ধান্তটি গোপনে, অতি দ্রুততার সঙ্গে এবং সংশ্লিষ্ট অংশীজনদের সঙ্গে কোনো প্রকার আলোচনা ছাড়াই বাস্তবায়ন করা হয়েছে। তারা একে ‘আকস্মিক’ এবং ‘অস্বচ্ছ’ পদক্ষেপ হিসেবে আখ্যায়িত করেছে।

বিবৃতিতে বলা হয়, স্বাধীনতার পর থেকে এনবিআর দেশের অভ্যন্তরীণ রাজস্ব আয়ের প্রায় ৮৬ শতাংশ আহরণ করে আসছে এবং বার্ষিক গড় প্রবৃদ্ধি ১৬.৪৪ শতাংশ। স্বল্প বিনিয়োগ ও কাঠামোগত সীমাবদ্ধতা থাকা সত্ত্বেও এই অর্জন এনবিআরের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের পেশাদারিত্ব ও নিষ্ঠার প্রতিফলন।

তবে পরিষদের অভিযোগ, "সংস্কারের নামে এনবিআরের সাংগঠনিক স্বাতন্ত্র্য ক্ষুণ্ন করে, বাইরের অনভিজ্ঞ নেতৃত্ব দিয়ে রাজস্ব প্রশাসন পরিচালনার পথ উন্মুক্ত করা হয়েছে। এতে প্রতিষ্ঠানের কার্যকারিতা হুমকির মুখে পড়েছে।"

পরিষদের দাবি, রাজস্ব নীতি ও বাস্তবায়নের পৃথককরণ সংক্রান্ত পরামর্শক কমিটির রিপোর্ট এখনো প্রকাশ করা হয়নি। এটি পুরো প্রক্রিয়ার স্বচ্ছতা ও গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন তুলছে। ব্যবসায়ী সংগঠন, সুশীল সমাজ ও সংশ্লিষ্ট অংশীজনদের মতামত ছাড়াই অধ্যাদেশ জারি করা হয়েছে।

তারা আরও বলেছে, “রাজস্ব প্রশাসনের মূল সংকট যেমন স্বল্প মেয়াদে নেতৃত্ব, অনুমোদন জটিলতা, বিনিয়োগের ঘাটতি — সেসব সমস্যার কোনো সমাধান অধ্যাদেশে নেই।”

এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদ উল্লেখ করেছে, এনবিআরকে ভেঙে পৃথক দুই বিভাগ গঠন আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত রাজস্ব সংস্কার মডেলের সঙ্গে সাংঘর্ষিক। ভারত, পাকিস্তান, যুক্তরাজ্যসহ অনেক দেশে এমন মডেল অনুসরণ করা হয় না

সংগঠনটি একটি আধুনিক, দুর্নীতিমুক্ত ও হয়রানিমুক্ত রাজস্ব প্রশাসনের দাবি জানিয়েছে, যেখানে প্রযুক্তির ব্যবহার, অটোমেশন এবং মানবসম্পদ উন্নয়নে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হবে।

এনবিআরের সর্বস্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সংহতি এবং আন্দোলনে সক্রিয় অংশগ্রহণের জন্য কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছে সংগঠনটি। পাশাপাশি করদাতা ও সেবাগ্রহীতাদের সাময়িক অসুবিধার জন্য আন্তরিক দুঃখও প্রকাশ করেছে।

এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিশোধের নেতারা বলেন, এই আন্দোলনের পেছনে রয়েছে দেশের বৃহত্তর স্বার্থ রক্ষার লক্ষ্য। রাজস্ব সংস্কার হতে হবে স্বচ্ছ, গণতান্ত্রিক ও কল্যাণমুখী দর্শনে ভিত্তি করে।”

এএইচএস/এমআই

Logo
সম্পাদকমণ্ডলীর সভাপতি মোস্তফা কামাল মহীউদ্দীন ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক সৈয়দ মেজবাহ উদ্দিন প্রধান, ডিজিটাল সংস্করণ হাসনাত কাদীর