কর্মবিরতি চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা এনবিআর কর্মকর্তাদের

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক
প্রকাশ: ২৫ মে ২০২৫, ১৮:০২
-683306d2922ac.jpg)
‘রাজস্ব নীতি ও রাজস্ব ব্যবস্থাপনা অধ্যাদেশ ২০২৫’ বাতিল না হলে কর, কাস্টমস ও ভ্যাট বিভাগের দপ্তরগুলোতে পূর্ণাঙ্গ কর্মবিরতি অব্যাহত থাকবে বলে জানিয়েছেন জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) সংস্কার ঐক্য পরিষদের নেতারা।
রোববার (২৫ মে) বিকাল ৪টায় এনবিআর কার্যালয়ের নীচ তলায় পুলিশ-বিজিবির কঠোর নিরাপত্তার বলয়ের মধ্যে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এনবিআর কর্মকর্তারা এই ঘোষণা দেন।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন উপকমিশনার আব্দুল কাইয়ুম ও মিজ রইসুন নেসা। উপস্থিত ছিলেন এনবিআরের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।
লিখিত বক্তব্যে রইসুন নেসা বলেন, জুলাই অভ্যুত্থানের শহীদ ও আহত ছাত্র-জনতার প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে এক যৌথ বিবৃতিতে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) সংস্কার ঐক্য পরিষদ জানিয়েছে, ‘রাজস্ব নীতি ও রাজস্ব ব্যবস্থাপনা অধ্যাদেশ ২০২৫ বাতিল না হলে কর, কাস্টমস ও ভ্যাট বিভাগের দপ্তরগুলোতে পূর্ণাঙ্গ কর্মবিরতি অব্যাহত থাকবে।
গত ১২ মে দিবাগত রাতে প্রণীত এই অধ্যাদেশের মাধ্যমে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের কাঠামো ভেঙে দিয়ে দুইটি পৃথক বিভাগ গঠনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এনবিআরের কর্মকর্তারা বলছেন, এটি একটি অপরীক্ষিত ও অকার্যকর মডেল, যা রাজস্ব আহরণে দীর্ঘমেয়াদে মারাত্মক ব্যাঘাত ঘটাবে।
সংগঠনটি তাদের চারটি দাবিতে জানিয়েছে-
- অধ্যাদেশ অবিলম্বে বাতিল করতে হবে।
- এনবিআরের বর্তমান চেয়ারম্যানকে অপসারণ করতে হবে।
- রাজস্ব সংস্কার বিষয়ক পরামর্শক কমিটির সুপারিশ প্রকাশ করতে হবে।
- অংশীজনদের মতামত নিয়ে টেকসই সংস্কার বাস্তবায়ন করতে হবে।
গত ২০ মে অর্থ উপদেষ্টাসহ পরামর্শক কমিটির কয়েকজন সদস্য এবং এনবিআরের সাবেক কর্মকর্তাদের উপস্থিতিতে এক আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। তবে, এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদের দাবি অনুযায়ী, আলোচনা ফলপ্রসূ হয়নি।
সংগঠনটি অভিযোগ করেছে, রাজস্ব খাতের সংস্কার প্রক্রিয়ার শুরু থেকে বর্তমান চেয়ারম্যান ‘চরম অসহযোগিতা’ করে আসছেন এবং কর্মকর্তাদের মতামত সরকার পর্যন্ত পৌঁছাতে ‘প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করছেন’।
বিবৃতিতে এনবিআর চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে গুরুতর অভিযোগ আনা হয়েছে। বলা হয়েছে, ‘ফ্যাসিস্ট সরকারের আমলে সুবিধাভোগী প্রশাসনের অংশ হিসেবে ব্যাংকিং খাতে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির পাশাপাশি জুলাই পরবর্তী সময়ে কর ফাঁকির সুবিধা দিতে গুরুত্বপূর্ণ অডিট কার্যক্রম বন্ধ করেন তিনি। এছাড়া, অযৌক্তিকভাবে ভ্যাট হার বৃদ্ধি করে অর্থনীতিতে অস্থিতিশীলতা সৃষ্টি করেছেন।’
সংগঠনটি জানিয়েছে, ২৬ মে সোমবার থেকে আন্তর্জাতিক যাত্রীসেবা ব্যতীত ট্যাক্স, কাস্টমস ও ভ্যাট বিভাগের সব দপ্তরে পূর্ণাঙ্গ কর্মবিরতি চলবে। তবে, ওষুধ ও জীবনরক্ষাকারী সরঞ্জামের আমদানি এ কর্মবিরতির আওতামুক্ত থাকবে।
আন্দোলনের ফলে করদাতা ও সেবাপ্রার্থীদের সাময়িক অসুবিধার জন্য দুঃখ প্রকাশ করেছে সংগঠনটি। তারা জানিয়েছে, ‘দাবি পূরণ হলে অফিস সময়ের বাইরে অতিরিক্ত সময় দিয়ে অনিষ্পন্ন কার্যক্রম সম্পন্ন করা হবে।’
বিশ্বের উন্নত দেশগুলোর রাজস্ব সংস্থার উদাহরণ তুলে ধরে বলা হয়েছে, আইআরএস (যুক্তরাষ্ট্র), এইচএমআরসি (যুক্তরাজ্য), সিআরএ (কানাডা), এনটিএস (দক্ষিণ কোরিয়া)-এর মতো সংস্থাগুলো স্বাধীন ও বিশেষায়িত এজেন্সি হিসেবে কাজ করে। বাংলাদেশেও এনবিআরকে এভাবেই শক্তিশালী ও দক্ষ প্রতিষ্ঠান হিসেবে গড়ে তোলার দাবি জানানো হয়েছে।
এনবিআর কর্মকর্তাদের প্রশ্ন ‘সরকার সময়োপযোগী এই যৌক্তিক দাবিগুলো বাস্তবায়ন করছে না কেন? কোন ব্যক্তি বা গোষ্ঠীর প্রভাবে তা আটকে আছে?’
এএইচএস