বাজেট ২০২৫-২০২৬
থাকছে না কালো টাকা সাদা করার ঢালাও সুযোগ
প্রকাশ: ৩১ মে ২০২৫, ০৮:২৩

গ্রাফিক্স : বাংলাদেশের খবর
আগামী অর্থবছরের বাজেটে থাকছে কালো টাকা সাদা করার সুযোগ। তবে সেটা অতীতের মতো ঢালাওভাবে নয়। নির্দিষ্ট কিছু খাতে এ সুযোগ থাকতে পারে। এজন্য বড় আকারের কর গুনতে হতে পারে, যার পরিমাণ হতে পারে বর্তমানের চেয়ে পাঁচগুণ পর্যন্ত বেশি। পাশাপাশি ওই অর্থের উৎস সম্পর্কে যে কোনো সংস্থার প্রশ্ন করার সুযোগও থাকবে।
জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) কর্মকর্তারা জানান, আগামী ২ জুন অর্থ উপদেষ্টা আগামী জাতীয় বাজেট প্রস্তাব উপস্থাপন করবেন। সেখানে এই প্রস্তাব দেবেন অর্থ উপদেষ্টা। এছাড়া অপ্রদর্শিত সম্পদ ট্যাক্স ডিপার্টমেন্টের হাতে ধরা পড়লে স্বাভাবিক করের বাইরে জরিমানা বিদ্যমান হারের চেয়ে বাড়তে পারে।
অর্থ উপদেষ্টার নেতৃত্বে কো-অর্ডিনেশন কাউন্সিল ও বাজেট ব্যবস্থাপনা-সংক্রান্ত সভায় জানানো হয়, আগামী ২০২৫-২৬ অর্থবছরের জন্য ৭ লাখ ৯০ হাজার কোটি টাকার বাজেট দেওয়ার পরিকল্পনা করছে অন্তর্বর্তী সরকার। নতুন অর্থবছরের বাজেটের আকার চলতি অর্থবছরের তুলনায় ৭ হাজার কোটি টাকা কম। স্বাধীনতার পর এই প্রথম আগের বছরের তুলনায় নতুন বাজেটের আকার ছোট হচ্ছে: স্বাধীনতার পর এবারই প্রথম আগের বছরের তুলনায় নতুন বাজেটের আকার ছোট হচ্ছে। মূলত মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে সংকুচিত মুদ্রানীতির সঙ্গে সমন্বয় করে সরকারি ব্যয় কমানো এবং বাজেট ‘বাস্তবায়নযোগ্য’ করতেই আকার কমানো হচ্ছে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে এনবিআরের একজন সিনিয়র কর্মকর্তা বলেন, বর্তমান সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর অপ্রদর্শিত অর্থ বিনিয়োগের বেশ কিছু সুযোগ বাতিল করা হয়েছে। এই সুযোগ রাখা হলেও তাতে এমন বিধিনিষেধ আসবে যে, তাতে অপ্রদর্শিত অর্থের মালিকরা উৎসাহ হারাবেন।
বিশ্লেষকরা মনে করছেন- কালো টাকা সাদা করার সুযোগ বৈষম্যমূলক। এই টাকা বিনিয়োগের সুযোগ দুর্নীতিকে সহায়তা করবে। তাই সুযোগ না দিয়ে দুর্নীতির উৎস বন্ধের ওপর জোর দিচ্ছেন তারা।
ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, ‘একই যুক্তিতে মোটামুটি সুযোগটা দেওয়া হয়। সেটা মনে রাখতে হবে এটা অসাংবিধানিক, সংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক, বৈষম্যমূলক এবং এটা দুর্নীতি সহায়ক। অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে আমাদের প্রত্যাশা থাকবে তারা একটা নতুন সংস্কৃতি সৃষ্টি করবে।’
এ বিষয়ে অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘এটি একেবারে বন্ধ করে দেওয়া যাবে না। তবে এটি ঢালাওভাবে থাকবে না, নির্দিষ্ট থাকবে। নির্দিষ্ট কিছু খাতে থাকবে। আগে ১৫ শতাংশ অর্থ দিয়ে কালো টাকা সাদা করার সুযোগ ছিল। এখন সেটি থাকছে না। তাছাড়া আগে তো কালো টাকা সাদা করলে আর কেউ জিজ্ঞেস করবে না, এবার ওইরকম হবে না।’
চলতি অর্থবছরের বাজেটে বিনা প্রশ্নে কালো টাকা সাদা করার সুযোগ রাখা হয়। এনবিআরের হিসেবে, ২০২৩ সাল পর্যন্ত মোট ১১ হাজার ৮৫৯ ব্যক্তি ৪৭ হাজার কোটি। কালো ট্রাকা সাদা করার সুযোগ নিয়েছেন। এতে সব মিলিয়ে অপ্রদর্শিত ৯৭ হাজার কোটি টাকা সাদা করা হয়েছে। বর্তমানে একজন নিয়মিত করদাতা সর্বোচ্চ ২৫ শতাংশ কর দিয়ে থাকেন। সেখানে কালো টাকার মালিক অতিরিক্ত মাত্র ১৫ শতাংশ কর দিয়ে বিনা প্রশ্নে সেই অর্থ বৈধ করার সুযোগ পান। প্রতিবার আবাসন খাত ও শেয়ারবাজারে কালো টাকা বৈধতার সুযোগ দেওয়া হলেও, প্রশ্নের ভয়ে দূরে থাকেন বিনিয়োগকারীরা। আসন্ন বাজেটেও করহার বাড়িয়ে এই খাতে কালো টাকা সাদা করার সুযোগ রাখা হচ্ছে বলে জানা গেছে।
আবাসন খাতের ব্যবসায়ীদের দাবি, কালো টাকা নয়, অপ্রদর্শিত অর্থ বিনিয়োগের সুযোগ চান তারা। এক্ষেত্রে মৌজা মূল্যে নিবন্ধন ফি রাখার দাবিও তাদের। এনবিআর সূত্র বলছে, জমি ও ফ্ল্যাট নিবন্ধনের কর কমানোর সুপারিশ করা হয়েছে। নতুন নিয়ম অনুযায়ী বাজারমূল্যে দলিল নিবন্ধন করার বিধানও রাখা হচ্ছে।
রিয়েল এস্টেট অ্যান্ড হাউজিং অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (রিহ্যাব) সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট লিয়াকত আলী ভূঁইয়া বলেন, ‘যে বিনিয়োগ করবে সেও যেন বোঝে, আমার কোনো ভয় নেই। যখন বুঝতে পারবে আমার কোনো অসুবিধা হবে না, তখন কিন্তু সে এখানে বিনিয়োগ করবে।’
ক্যাপিটাল মার্কেট ইনভেস্টরস ফোরামের সভাপতি এস এম ইকবাল হোসেন বলেন, ‘লুটের টাকা, চুরির টাকা, ডাকাতির টাকা এরকম অবৈধ টাকা পুঁজিবাজারে আসুক এইটা আমরা চাই না। আমরা বলছি অপ্রদর্শিত আয়, সেটার যদি সুযোগ থাকে।’
বিকেপি/আরকেএইচ/এমএইচএস