
বাংলাদেশে মোবাইল ফিনান্সিয়াল সার্ভিস (এমএফএস) ‘নগদ’-এর কার্যক্রমে একের পর এক অনিয়ম, স্বচ্ছতার অভাব ও আর্থিক বিশৃঙ্খলার অভিযোগে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে বেশ কিছু গুরুতর অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে ইতোমধ্যে প্রশাসক নিয়োগসহ ফরেনসিক অডিট শুরু করেছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা।
রোববার (১ জুন) বাংলাদেশের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র আরিফ হোসেন খান এক খুদে বার্তায় ‘নগদ’ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ ব্যাংকের বক্তব্য তুলে ধরেন।
২০১৯ সালে ডাক বিভাগের নামে ‘নগদ’ সেবা চালু হলেও, তখন এটির জন্য কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কোনো অনুমোদন নেওয়া হয়নি। পরবর্তীতে একটি অন্তর্বর্তীকালীন চিঠির মাধ্যমে চালিয়ে যাওয়ার সুযোগ দেওয়া হলেও, নিয়মিত এমএফএস প্রতিষ্ঠার কাঠামোর আওতায় এটি কখনোই আসেনি। ডাক বিভাগ এবং নগদ লিমিটেডের মধ্যে কার্যকর কোনো এজেন্সি চুক্তিও নেই বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তদন্তে দেখা গেছে, নগদ অনুমোদনের বাইরে গিয়ে প্রায় ৬৪৫ কোটি টাকার অতিরিক্ত ই-মানি ইস্যু করেছে। আরও উদ্বেগের বিষয় হলো, সরকারি সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির আওতায় বরাদ্দকৃত প্রায় এক হাজার ৭১১ কোটি টাকা নগদ কর্তৃপক্ষ অননুমোদিত উপায়ে উত্তোলন করেছে, যা সরাসরি সরকারি অর্থ অপব্যবহারের শামিল।
নগদের পক্ষ থেকে কখনোই বাংলাদেশ ব্যাংকে অডিট রিপোর্ট, আর্থিক বিবরণী, পরিচালনা পর্ষদের তথ্য বা শেয়ারহোল্ডার কাঠামো উপস্থাপন করা হয়নি। ডাক বিভাগের নামে রেজিস্ট্রেশন থাকলেও, কার্যত নিয়ন্ত্রণে আছে থার্ড ওয়েভ টেকনোলজিস নামের একটি বেসরকারি কোম্পানি।
তথ্যানুসন্ধানে উঠে এসেছে, নগদের শেয়ারহোল্ডার হিসেবে যুক্ত হয়েছে ব্রিটিশ ভার্জিন আইল্যান্ডে নিবন্ধিত একাধিক অফশোর কোম্পানি, যার মধ্যে রয়েছে ‘পোর্টম্যান গ্রুপ হোল্ডিংস’। এতে মানিলন্ডারিং ও বৈদেশিক মুদ্রা নিয়ন্ত্রণ আইন লঙ্ঘনের ঝুঁকি তৈরি হয়েছে।
নগদের সার্ভার অবকাঠামো পুরোনো ও নিরাপত্তাহীন। গ্রাহক তথ্য ও লেনদেনের যথাযথ অডিট ট্রেইল সংরক্ষিত না থাকায় ঝুঁকি বহুগুণে বেড়েছে। এর ফলে গ্রাহক হয়রানি, অর্থ আটকে যাওয়া ও লেনদেন বিভ্রাট বেড়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে।
চলমান অনিয়ম প্রতিরোধে বাংলাদেশ ব্যাংক ইতোমধ্যে নগদে প্রশাসক নিয়োগ করেছে এবং কেপিএমজির মাধ্যমে আইটি, ফিনান্স ও লিগ্যাল ফরেনসিক অডিট কার্যক্রম শুরু করেছে। অডিট প্রতিবেদনের ভিত্তিতে পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া হবে বলে জানিয়েছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা।
বাংলাদেশ ব্যাংক এক বিবৃতিতে বলেছে, ‘আমরা মোবাইল ফিনান্সিয়াল সার্ভিস খাতের বিকাশে উৎসাহী। তবে কোনো প্রতিষ্ঠানের অস্বচ্ছতা, আর্থিক অনিয়ম ও আইনের ব্যত্যয়কে কোনোভাবেই প্রশ্রয় দেওয়া হবে না। নগদ-এর অনিয়মের তদন্ত চলছে এবং প্রমাণিত হলে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
এএইচএস/ওএফ