-68410915001f1.jpg)
ছবি : সংগৃহীত
ঈদুল আজহা সামনে রেখে কোটি কোটি টাকার চামড়া সংগ্রহে অর্থ সংকটে পড়েছেন দেশের ট্যানারি ব্যবসায়ীরা। খেলাপি ঋণের অজুহাতে অধিকাংশ ব্যাংক ঋণ বিতরণে আগ্রহ দেখাচ্ছে না। ফলে হুমকির মুখে পড়তে পারে চামড়া খাত।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, দেশের ৬১টি ব্যাংকের মধ্যে মাত্র ৬-৭টি ব্যাংক এ বছর চামড়া ব্যবসায়ীদের জন্য ২৩২ কোটি টাকা ঋণ বিতরণের পরিকল্পনা করেছে, যা গত বছরের চেয়ে প্রায় ৩৮ কোটি টাকা কম।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ঋণ বিতরণে এমন অনীহার প্রধান কারণ খাতটিতে বিপুল পরিমাণ খেলাপি ঋণ। চামড়া খাতে বর্তমানে বিতরণ করা ঋণের স্থিতি প্রায় ৫ হাজার ৩০০ কোটি টাকা, যার মধ্যে খেলাপি ঋণ ৪ হাজার ৫০০ কোটি টাকার মতো। অর্থাৎ প্রায় ৮৫ শতাংশ ঋণই খেলাপি।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যমতে, ২০১৯ সালে চামড়া খাতে ঋণ বিতরণ হয়েছিল প্রায় ১ হাজার ৮০০ কোটি টাকা, যা ২০২৪ সালে নেমে আসে ২৭০ কোটিতে। আর চলতি বছর সেই অঙ্ক আরও কমে দাঁড়ায় ২৩২ কোটিতে।
বাংলাদেশ ট্যানার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিটিএ) চেয়ারম্যান মো. শাহীন আহমেদ বাংলাদেশের খবরকে বলেন, ‘চামড়া একটি পচনশীল পণ্য হওয়ায় দ্রুত সংগ্রহ ও সংরক্ষণ করতে হয়। ঈদ মৌসুমে চামড়া সংগ্রহের জন্য বড় অঙ্কের নগদ অর্থ প্রয়োজন হয়, যা আসে ব্যাংক ঋণের মাধ্যমে। কিন্তু এ বছর ব্যাংকগুলোর অনাগ্রহের কারণে চামড়া সংগ্রহ ব্যাহত হওয়ার শঙ্কা রয়েছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘ঘোষিত ২৩২ কোটি টাকার মধ্যে তিন ধাপে ১২৫ কোটি টাকা বিতরণ করা হবে। বাকি অর্থ পুনঃতফসিল করা হবে। তবে এত কম অর্থ বরাদ্দে চাহিদা পূরণ সম্ভব নয়।’
জনতা ব্যাংকের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, ‘ট্যানারি ব্যবসায়ীরা দুই শতাংশ জমা দিয়ে ঋণ নবায়ন করতে চান না। ফলে বরাদ্দ থাকলেও ঋণ বিতরণ সম্ভব হয় না।’ তিনি আরও বলেন, ‘চামড়া খাতে ব্যাংকের বিতরণ করা ঋণের প্রায় ৯০ শতাংশই রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোর, যার বড় অংশই খেলাপি।’
বাণিজ্য মন্ত্রণালয় জানায়, চামড়া সংরক্ষণে সহায়তা দিতে এবারের ঈদে এতিমখানা, লিল্লাহ বোর্ডিংসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে বিনা মূল্যে ৩০ হাজার টন লবণ সরবরাহ করবে সরকার।
ঈদুল আজহার সময় দেশের চামড়া শিল্পে অর্থনীতির বড় সঞ্চালক হিসেবে কাজ করে। অথচ ঋণ বিতরণে ব্যাংকের এমন উদাসীনতা এবং কাঙ্ক্ষিত সহায়তা না পেলে এ খাত আরও ক্ষতির মুখে পড়তে পারে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র আরিফ হোসেন খান বলেন, ‘চামড়া আমাদের অন্যতম একটা রপ্তানি পণ্য। কিন্তু যেসব কোম্পানি চামড়া সংগ্রহ করবে তারা যদি ব্যাংক থেকে পর্যাপ্ত অর্থ না পায় তাহলে চামড়া পাচার হয়ে যাবে। এজন্য ২৩২ কোটি টাকার একটা ফান্ড গঠন করা হয়েছে। আমার বিশ্বাস ট্যানার্স হয়ত এবার চামড়ার দাম প্রতি স্কয়ার ফুটে কিছু বাড়াবে। এতে চামড়া পাচার ও নষ্ট করার প্রবণতা হ্রাস পাবে।’
চামড়া খাতে ঋণ বিতরণের ব্যাংকগুলো উদাসীন কেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এটা ব্যাংকগুলোর নিজস্ব নীতিমালার ব্যাপার। প্রতিযোগিতামূলক বিশ্বে আমাদের চামড়া শিল্প পুরোনো যন্ত্রপাতি এখানো ব্যবহার করছে। সেকারণে ব্যাংকগুলো ঋণ বিতরণে আগ্রহ কম। পাশাপাশি ঋণ খেলাপিও একটা বড় কারণ।’
চলতি বছর ঢাকায় গরুর প্রতি বর্গফুট লবণযুক্ত চামড়ার দাম নির্ধারণ করা হয়েছে ৬০ থেকে ৬৫ টাকা, যা গত বছর ছিল ৫৫ থেকে ৬০ টাকা। অন্যদিকে ঢাকার বাইরে গরুর প্রতি বর্গফুট লবণযুক্ত চামড়ার দাম নির্ধারণ করা হয় ৫৫ থেকে ৬০ টাকা, যা গত বছর ছিল ৫০ থেকে ৫৫ টাকা।
ঢাকায় কাঁচা চামড়ার সর্বনিম্ন দাম ১ হাজার ৩৫০ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। ঢাকার বাইরে ১ হাজার ১৫০ টাকা। আর খাসির চামড়ার ক্রয়মূল্য প্রতি বর্গফুট ২২ থেকে ২৭ টাকা এবং বকরির চামড়ার দাম ২০ থেকে ২২ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে।
এএইচএস/এমআই/এমএইচএস