চামড়ার বাজারে হতাশা, ক্রেতা-বিক্রেতা কেউই খুশি নন

বাংলাদেশের প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৭ জুন ২০২৫, ২২:১৪
-6844656aee655.jpg)
ছবি : সংগৃহীত
কোরবানির ঈদের পর রাজধানীসহ বিভিন্ন এলাকায় কাঁচা চামড়া সংগ্রহ শুরু হলেও বাজারে সেই চাহিদার প্রতিফলন দেখা যাচ্ছে না। সরকারি দামের সঙ্গে বাস্তব পরিস্থিতির মিল নেই। ব্যবসায়ীরা বলছেন, নির্ধারিত দামে বিক্রি করা সম্ভব হচ্ছে না। আড়তদার ও ট্যানারি মালিকরাও অভিযোগ করছেন মান ও সরবরাহ সংকটের। ফলে চামড়ার বাজারে বিরাজ করছে অস্থিরতা।
গত সোমবার থেকে রাজধানীর মোহাম্মদপুর, গুলশান-২, পোস্তা, সায়েন্সল্যাবসহ বিভিন্ন এলাকায় মৌসুমি ব্যবসায়ীরা কাঁচা চামড়া কিনছেন। তবে অধিকাংশ ব্যবসায়ী জানাচ্ছেন, তারা লোকসানের আশঙ্কায় আছেন। গরুর একটি চামড়া ৮০০ টাকায় কেনার পর তা বিক্রি করতে হচ্ছে ৭০০ টাকারও কম দামে। অনেকক্ষেত্রে ৫০০–৬০০ টাকার নিচেও নামতে হয়েছে।
রাজধানীর মোহাম্মদপুরে চামড়া কিনতে আসা ব্যবসায়ী কবির বলেন, ‘৮০০ টাকা দিয়ে কিনেছি, এখন বিক্রি করতে পারছি না। আড়তে নিচু দামে নিতে চাইছে।’ আরেকজন মৌসুমি ব্যবসায়ী জাফর আহমেদ বলেন, ‘৭৫০ টাকায় বিক্রি করেছি। দাম বেশি উঠছে না। সবখানেই কম। বাজারে রেট নাই।’
চামড়ার মান নিয়ে অভিযোগ তুলেছেন আড়তদাররা। রাজধানীর পোস্তার আড়তদার শেখ বাবুল বলেন, ‘এবার অনেক চামড়ার মধ্যে দাগ, ছিদ্র রয়েছে। ভালো মানের চামড়া কম। দাম তাই কমে গেছে। খরচও বেড়েছে।’
গরুর চামড়ার জন্য সরকার নির্ধারিত মূল্য প্রতি বর্গফুট ঢাকায় ৬০–৬৫ টাকা এবং ঢাকার বাইরে ৫৫–৬০ টাকা হলেও বাজারে বাস্তবে তা কার্যকর হয়নি। অনেক ব্যবসায়ী বলছেন, এই দরে বিক্রি সম্ভব হচ্ছে না। কিছু আড়তদার ৫০–৫৫ টাকাতেও কিনতে চাইছেন না।
ছাগলের চামড়ার পরিস্থিতি আরও খারাপ। অনেক এলাকায় ছাগলের চামড়া বিক্রি হচ্ছে মাত্র ১০–২০ টাকায়। কোথাও কোথাও বিক্রি না হওয়ায় রাস্তায় ফেলে দিতেও দেখা গেছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা।
আড়তদার ও ট্যানারি মালিকদের বক্তব্য, গরুর চামড়া সংরক্ষণে লবণ, শ্রমিক ও পরিবহন খরচ গড়ে ৪০০ টাকা পড়ে যায়। মান খারাপ হলে সেটি নেয়ার আগ্রহ কম থাকে। ট্যানারি মালিকদের কেউ কেউ সরাসরি মাঠ পর্যায় থেকে চামড়া কিনে নিচ্ছেন, ফলে আড়তের ওপর চাপও কমেছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, চামড়ার বাজারে অস্থিরতার কারণ হিসেবে কয়েকটি বিষয় কাজ করছে—গরুর আমদানি হ্রাস, সংরক্ষণের উপযুক্ত অবকাঠামোর অভাব, লবণের সংকট এবং মধ্যস্বত্বভোগীদের প্রভাব।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্র বলছে, সরকার নির্ধারিত মূল্যে কেনা-বেচা নিশ্চিত করতে মাঠ পর্যায়ে মনিটরিং দল কাজ করছে। তবে বাস্তবতায় তা কতটা কার্যকর হচ্ছে, তা নিয়ে সংশয় রয়েছে।
চামড়ার বাজার নিয়ে হতাশা প্রকাশ করেছেন ব্যবসায়ীরা। তারা বলছেন, বারবার একই পরিস্থিতির শিকার হলে মৌসুমি ব্যবসা ধরে রাখা কঠিন হয়ে পড়বে।
ডিআর/এমএইচএস