চামড়ার দরপতনে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীরা, সরকার বলছে ‘অপতথ্য’

ডিজিটাল ডেস্ক
প্রকাশ: ১১ জুন ২০২৫, ০৯:২৯
-6848f81c6354d.jpg)
ছবি : সংগৃহীত
ঈদুল আজহার পর দেশের বিভিন্ন স্থানে কাঁচা চামড়ার দরপতন ঘটেছে। মৌসুমি ব্যবসায়ীরা বলছেন, নির্ধারিত মূল্যের চেয়ে অনেক কম দামে বিক্রি করতে হয়েছে তাদের। কেউ কেউ আবার চামড়া ফেলেও দিয়েছেন রাস্তার ধারে। তবে সরকার বলছে, এটি ‘অপপ্রচার’ এবং বাজারে কোনো সংকট নেই।
দিনাজপুর সদর উপজেলার হিলি বাজারের মৌসুমি ব্যবসায়ী রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘প্রতি বছরই আমরা কিছুটা লোকসান মেনে চামড়া কিনি, কিন্তু এবার একেবারেই কেনার পর বিক্রি করতে পারিনি। ২০০ টাকা দিয়ে কেনা চামড়া বিক্রি করেছি মাত্র ৭০ টাকায়।’
গাইবান্ধার ফুলছড়ি উপজেলার আব্দুস সালাম বলেন, ‘যে দামে সরকার নির্ধারণ করেছে সেই দামে তো কেউ কিনছেই না। চামড়া রাখার জায়গা নেই, লবণ দিতেও খরচ লাগে। বাধ্য হয়ে অনেকে চামড়া ড্রেনে ফেলে দিয়েছে।’
তবে সরকারের ভাষ্য ভিন্ন। তাদের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, চামড়া নিয়ে ‘অপতথ্য’ ছড়ানো হচ্ছে। নির্ধারিত মূল্যের ভিত্তিতে জেলা প্রশাসনের তত্ত্বাবধানে সারাদেশে চামড়া সংগ্রহ হয়েছে। কোথাও কোথাও চামড়া পড়ে থাকলেও সেটা বড় আকারে নয়।
সরকার বলছে, এবারই সর্বোচ্চ দামে চামড়া বিক্রি হয়েছে। বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন নাটোরে বলেন, ‘গরুর চামড়ায় কোনো ব্যত্যয় হয়নি, ছাগলের চামড়ায় কিছু অনিয়ম হলেও তা বড় বিষয় না।’
বাজারের খারাপ অবস্থার দাবিকে ‘অপতথ্য’ বলেও অভিহিত করেছেন তিনি। মৌসুমি ব্যবসায়ীদের ভুলের কারণে এ বছরও অনেক চামড়া নষ্ট হয়েছে বলে দাবি করে তিনি বলেন, ‘পচা চামড়ার দামও যে পাওয়া যাচ্ছে, সেটাই অনেক কিছু।’
চামড়ার দরপতনের বিষয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ হাইড অ্যান্ড স্কিন মার্চেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সহ-সভাপতি মো. হাশেম আলী বলেন, ‘মূল সমস্যা হলো চামড়া সংরক্ষণের সুযোগ এবং আর্থিক জটিলতা। আমাদের কাছে পর্যাপ্ত লবণ না থাকায় অনেক মৌসুমি ব্যবসায়ী সময়মতো সংরক্ষণ করতে পারেননি। এতে ট্যানারিরাও চামড়া নিতে চায়নি।’
এদিকে ট্যানারি মালিকদের সংগঠন বাংলাদেশ ট্যানার্স অ্যাসোসিয়েশন-এর পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, ‘আমরা যেসব চামড়া নিচ্ছি তা মানসম্মত হলে তবেই নিই। অনেক সময় সংরক্ষণের অভাবে চামড়ার মান নষ্ট হয়ে যায়। তাছাড়া কাঁচা চামড়ার দাম নির্ধারণের সময় আমাদের সাথে আলোচনা হয়নি।’
বিশ্লেষক ও অর্থনীতিবিদ ড. মাহবুব হোসেন বলেন, ‘প্রতি বছর একই চিত্রের পুনরাবৃত্তি দেখে মনে হয়, সরকার কেবল কাগজে-কলমে প্রস্তুতি নেয়। চামড়াশিল্প আমাদের সম্ভাবনাময় খাত হলেও, এখানে কোনো দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা নেই।’
ঢাকার হেমায়েতপুরে সাভার ট্যানারি শিল্পনগরীর একটি ট্যানারির ব্যবস্থাপক নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘আমরা চামড়া কিনতে চেয়েছি, কিন্তু ব্যাংক ঋণের সংকটে অনেক সময় দাম আগেভাগে দিতে পারি না। এতে মৌসুমি ব্যবসায়ীরা ক্ষতিগ্রস্ত হয়। সেন্ট্রাল ইটিপি এখনো সম্পূর্ণ কাজ করছে না বলেও রপ্তানিতে সমস্যা হচ্ছে।’
অন্যদিকে, রংপুর জেলা প্রশাসনের এক কর্মকর্তার দাবি, ‘আমরা প্রতিটি উপজেলায় ভ্রাম্যমাণ টিম দিয়েছি যাতে নির্ধারিত দামে চামড়া সংগ্রহ হয়। কোথাও অভিযোগ এলে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।’
এমএইচএস