পাচার হওয়া অর্থ ফেরাতে যুক্তরাজ্যকে টিআইবিসহ তিন সংস্থার আহ্বান

বাংলাদেশের প্রতিবেদক
প্রকাশ: ১১ জুন ২০২৫, ১১:০৭
-68490f0822dee.jpg)
যুক্তরাজ্যে থাকা পাচারকারীদের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে তাদের পাচার করা অবৈধ অর্থ বাংলাদেশে ফিরিয়ে আনার জন্য দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানিয়েছে দুর্নীতিবিরোধী তিনটি সংস্থা। ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি), স্পটলাইট অন করাপশন এবং ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল-ইউকে মঙ্গলবার (১০ জুন) এক যৌথ বিবৃতিতে এ দাবি জানায়।
অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের যুক্তরাজ্যে সফরের দিনে সংস্থাগুলো এ লক্ষ্যে ‘কার্যকর পদক্ষেপ’ নেওয়ার দাবি জানায়।
সংস্থাগুলো তাদের যৌথ বিবৃতিতে উল্লেখ করেছে, যুক্তরাজ্যে অবস্থানরত সন্দেহভাজন অর্থ পাচারকারী বাংলাদেশি অলিগার্কদের বিরুদ্ধে জরুরি ও কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা প্রয়োজন। এদের মধ্যে অনেকে দুর্নীতি ও অর্থ পাচারের সঙ্গে জড়িত থাকার যথেষ্ট প্রমাণ রয়েছে। তারা যুক্তরাজ্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানায় পাচার হওয়া সম্পদ পুনরুদ্ধারে আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোর কার্যক্রম জোরদার করতে।
টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, ‘বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক উত্তরণ ও জবাবদিহিমূলক সুশাসনের পথে অগ্রযাত্রার এই সুবর্ণ সুযোগের সর্বোচ্চ সদ্ব্যবহার করতে যুক্তরাজ্য সরকারের জরুরি পদক্ষেপ দরকার। পাচার হওয়া সম্পদ ফিরিয়ে আনা দুর্নীতির বিরুদ্ধে কার্যকর নিয়ন্ত্রণের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্র।’
তিনি আরও বলেন, ‘অর্থপাচারকারীদেরকে শুধু বাংলাদেশে নয়, পাচারের গন্তব্য যুক্তরাজ্যেও জবাবদিহি করতে হবে। এর মাধ্যমে শক্তিশালী বার্তা যাবে।’
স্পটলাইট অন করাপশনের নির্বাহী পরিচালক সুসান হাওলি বলেন, ‘সময়ের অপচয় না করে বাংলাদেশ থেকে পাচারকৃত অর্থ জব্দে যুক্তরাজ্য সরকারকে তাৎক্ষণিক পদক্ষেপ নিতে হবে। একইসঙ্গে প্রয়োজনীয় আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ ও আইন প্রয়োগকারী সংস্থার প্রচেষ্টা জোরদার করতে হবে।’
ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল ইউকের পলিসি ডিরেক্টর ডানকান হেমস বলেন, ‘যুক্তরাজ্য সরকার অর্থপাচারের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেছে। তাই বাংলাদেশের ক্ষমতাচ্যুত সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ঘনিষ্ঠজনদের বিরুদ্ধে দুর্নীতি ও পাচার হওয়া প্রায় ৪০০ মিলিয়ন পাউন্ড সম্পদের তথ্যের যথাযথ অনুসন্ধান করে তা জব্দ করতে হবে।’
তিনি যোগ করেন, ‘ইউকে সরকারের প্রতিশ্রুতি যেন শুধু কথার মধ্যে সীমাবদ্ধ না থাকে, বরং বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক পুনরুদ্ধারের প্রচেষ্টায় কার্যকর সহযোগী ভূমিকা পালন করতে হবে।’
দ্য অবজারভার ও ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল ইউকের তদন্তে প্রকাশ, যুক্তরাজ্যে শেখ হাসিনার ঘনিষ্ঠজনদের মালিকানাধীন কমপক্ষে ৪০ কোটি পাউন্ড মূল্যের সম্পত্তি রয়েছে। এ থেকে ইতিমধ্যেই যুক্তরাজ্যের ন্যাশনাল ক্রাইম এজেন্সি (এনসিএ) ৯ কোটি পাউন্ডের সম্পদ জব্দ করেছে।
অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস দুর্নীতি নির্মূল এবং ১৫ বছরের শাসনামলে পাচার হওয়া অর্থ ফিরিয়ে আনার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। তার সরকার গঠনের শ্বেতপত্র কমিটির অনুমান অনুযায়ী, ২০০৯ থেকে ২০২৩ সালের মধ্যে বাংলাদেশ থেকে বছরে গড়ে ১৬ বিলিয়ন ডলারের হার অনুসারে মোট ২৩৪ বিলিয়ন ডলার অর্থ পাচার হয়েছে।
এদিকে, বাংলাদেশে নিযুক্ত ব্রিটিশ হাইকমিশনার দেশটিতে শান্তি পুনরুদ্ধার ও জবাবদিহি নিশ্চিত করার জন্য অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি সর্বাত্মক সহযোগিতার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। একই সময়ে, ব্রিটিশ পররাষ্ট্রসচিব মন্তব্য করেছেন, ‘অর্থ পাচারের স্বর্ণযুগ শেষ হয়েছে।’
ডিআর/এমএইচএস