Logo

অর্থনীতি

সরকারের ব্যাংক ঋণ লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে গেছে, বিনিয়োগে চাপের শঙ্কা

Icon

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২৩ জুন ২০২৫, ১৬:৪৭

সরকারের ব্যাংক ঋণ লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে গেছে, বিনিয়োগে চাপের শঙ্কা

প্রতীকী ছবি

চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছর শেষ হতে এখনও কয়েক সপ্তাহ বাকি থাকলেও সরকারের ব্যাংক খাত থেকে ঋণগ্রহণ নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে গেছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের হালনাগাদ তথ্যানুযায়ী, চলতি অর্থবছরে ব্যাংক খাত থেকে ৯৯ হাজার কোটি টাকা ঋণ নেওয়ার লক্ষ্য থাকলেও ১৫ জুন পর্যন্ত ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৯৯ হাজার ৫৯১ কোটি টাকা-লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ৫৯১ কোটি টাকা বেশি।

অর্থনীতিবিদ ও ব্যাংক খাত বিশ্লেষকরা বলছেন, সরকারের অতিরিক্ত ব্যাংক ঋণগ্রহণ বেসরকারি খাতে ঋণপ্রবাহে ব্যাঘাত ঘটাচ্ছে। এর ফলে বিনিয়োগে চাপ তৈরি হচ্ছে, যা সামগ্রিক অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিকে বাধাগ্রস্ত করতে পারে। তাদের মতে, আশানুরূপ রাজস্ব আদায় না হওয়া, সঞ্চয়পত্র বিক্রিতে স্থবিরতা এবং বৈদেশিক ঋণ ছাড়ে ধীরগতির কারণে অর্থবছরের শেষভাগে সরকারের ব্যাংক নির্ভরতা বেড়ে গেছে।

জানুয়ারি পর্যন্ত সাত মাসে সরকারের ব্যাংক ঋণের পরিমাণ ছিল মাত্র ১৩ হাজার ৫৭১ কোটি টাকা। তবে অন্তর্বর্তী সরকারের দায়িত্ব গ্রহণের পর ঋণগ্রহণের গতি বাড়তে শুরু করে এবং জুনে এসে তা লক্ষ্যমাত্রা অতিক্রম করে।

প্রস্তাবিত ২০২৫-২৬ অর্থবছরের বাজেটে ২ লাখ ২৬ হাজার কোটি টাকার রাজস্ব ঘাটতির পরিকল্পনা করা হয়েছে। এর মধ্যে অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে ১ লাখ ২৬ হাজার কোটি টাকা সংগ্রহের লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে, যার মধ্যে ১ লাখ ৪ হাজার কোটি টাকা আসবে ব্যাংক খাত থেকে-যা দেশের মোট জিডিপির ১.৬৭ শতাংশ।.

বাংলাদেশ ব্যাংকের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, ‘অর্থবছরের শেষদিকে সরকারের বিল পরিশোধসহ নানা ব্যয় বেড়ে যায়, যার কারণে ব্যাংক ঋণের ওপর নির্ভরতা বাড়ে। তাছাড়া দেশে এখনো পুঁজিবাজার কার্যকর বিকল্প অর্থায়ন উৎস হয়ে উঠতে পারেনি, ফলে সরকার ব্যাংক ব্যবস্থাকেই বেছে নেয়।’

অর্থনীতিবিদদের ভাষ্য অনুযায়ী, সরকারি ঋণ গ্রহণ বৃদ্ধির প্রভাব ইতোমধ্যেই বেসরকারি খাতে পড়তে শুরু করেছে। এপ্রিল মাসে বেসরকারি খাতে ঋণের প্রবৃদ্ধি দাঁড়িয়েছে মাত্র ৭.৫০ শতাংশ, যা আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় ২.৪০ শতাংশ কম। অথচ চলতি অর্থবছরের শুরুতে এই প্রবৃদ্ধি ১০ শতাংশের উপরে থাকার লক্ষ্য ছিল।

বিশ্ব ব্যাংকের ঢাকা অফিসের সাবেক মুখ্য অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেন বলেন, ‘মূল্যস্ফীতির সময়ে সরকারের ব্যাংক ঋণ গ্রহণ বেড়ে গেলে তা মুদ্রাস্ফীতিকে আরও উসকে দিতে পারে। এতে উৎপাদন ও বিনিয়োগে ব্যাঘাত ঘটবে, কর্মসংস্থান হ্রাস পাবে।’

তিনি আরও বলেন, “রাজস্ব আহরণ বাড়ানো ছাড়া সরকারের আর কোনো উপায় নেই। অনেক প্রভাবশালী ব্যক্তি এখনো আয়কর দেন না। তাদের করজালের আওতায় আনলে ব্যাংক ঋণের প্রয়োজনীয়তা অনেকাংশে কমে যাবে।”

বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, সামষ্টিক অর্থনীতির ভারসাম্য রক্ষায় কর ব্যবস্থার সংস্কার, অপচয় রোধ, বেসরকারি বিনিয়োগে উৎসাহ এবং পুঁজিবাজারকে সক্রিয় বিকল্প অর্থায়ন উৎস হিসেবে গড়ে তোলার এখনই উপযুক্ত সময়।

প্রাসঙ্গিক সংবাদ পড়তে নিচের ট্যাগে ক্লিক করুন

বাংলাদেশ ব্যাংক

Logo
সম্পাদকমণ্ডলীর সভাপতি মোস্তফা কামাল মহীউদ্দীন ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক সৈয়দ মেজবাহ উদ্দিন প্রধান, ডিজিটাল সংস্করণ হাসনাত কাদীর