বাংলাদেশের অর্থনীতিতে বিপুল সম্ভাবনা থাকলেও তা সঠিকভাবে কাজে না লাগালে বড় ধরনের ক্ষতির আশঙ্কা রয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর। তিনি বলেন, “বাংলাদেশের মুদ্রার মান দেশের ভেতরেই ঠিক হবে। বিদেশে বসে এর দর নির্ধারণ কেউ করলে তা মেনে নেওয়া হবে না।”

মঙ্গলবার (২৪ জুন) রাজধানীর একটি হোটেলে গুগল পে সেবার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর।

তিনি বলেন, “দেশের অর্থনৈতিক ভিত্তি মজবুত। তবে সবার একসঙ্গে কাজ না করলে মধ্যস্বত্বভোগীরা ফায়দা তুলে নেবে। বাংলাদেশের সম্ভাবনা অসীম, তবে তা নষ্ট হয়ে যাওয়ার সুযোগও সীমাহীন।”

মুদ্রানীতিতে কঠোর অবস্থানের ইঙ্গিত দিয়ে আহসান এইচ মনসুর বলেন, “আন্তর্জাতিক চাপে পড়ে কিংবা বাজারের ওঠানামায় পড়ে মুদ্রার অবমূল্যায়ন করা হবে না। অতীতে কৃত্রিমভাবে ডলারের দর নির্ধারণ করে যেভাবে বিশৃঙ্খলা তৈরি হয়েছিল, তা আর হবে না।”

ব্যাংক খাতে শৃঙ্খলা ফেরানো বাংলাদেশ ব্যাংকের অন্যতম অগ্রাধিকার জানিয়ে তিনি বলেন, “আগামী জানুয়ারি থেকে ঝুঁকিভিত্তিক তদারকি কার্যক্রম পুরোদমে চালু হবে। ইতিমধ্যে ২০টি ব্যাংকে পরীক্ষামূলকভাবে এটি চালানো হয়েছে।”

গভর্নর আরও জানান, কয়েকটি ব্যাংককে একীভূত করার উদ্যোগ চলছে এবং ডিসেম্বরের মধ্যেই তা বাস্তবায়নের লক্ষ্য রয়েছে। তিনি আশ্বস্ত করেন, “আমানতকারীদের আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই। তাদের স্বার্থ নিরাপদ থাকবে।”

মূল্যস্ফীতি পরিস্থিতি সম্পর্কে তিনি বলেন, “বর্তমানে তা অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে এসেছে। পুরোপুরি স্থিতিশীলতা পেতে আরও কিছু সময় লাগবে। তবে ইতিবাচক অগ্রগতি হচ্ছে।”

বন্দর ব্যবস্থাপনা নিয়ে বিভ্রান্তি ছড়ানো থেকে বিরত থাকার আহ্বান জানিয়ে গভর্নর বলেন, “বিদেশি প্রযুক্তি ও অংশীদারিত্ব গ্রহণ করে ভবিষ্যতে আমরাও বিশ্বের বন্দর পরিচালনায় অংশ নিতে পারব।”

অনুষ্ঠানে ‘গুগল পে’ ডিজিটাল পেমেন্ট সেবার আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন হয়। সিটি ব্যাংকের উদ্যোগে এবং গুগল, মাস্টারকার্ড ও ভিসার সহযোগিতায় এই সেবা চালু হয়েছে। প্রাথমিকভাবে সিটি ব্যাংকের ভিসা ও মাস্টারকার্ড গ্রাহকরা তাদের কার্ড গুগল ওয়ালেটে যুক্ত করে মোবাইলে গুগল পে ব্যবহার করতে পারবেন।

স্মার্টফোনে ফোন ট্যাপ করে যেকোনো দোকান বা রেস্তোরাঁয় লেনদেন করা যাবে এই সেবার মাধ্যমে। এতে ‘টোকেনাইজেশন’ প্রযুক্তির কারণে নিরাপত্তা নিশ্চিত হয় এবং অতিরিক্ত কোনো ফি দিতে হয় না।

অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন—মার্কিন দূতাবাসের ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রদূত ট্র্যাসি এন জ্যাকবসন, সিটি ব্যাংকের ভাইস চেয়ারম্যান হোসেন খালেদ, ব্যবস্থাপনা পরিচালক মাসরুর আরেফিন, গুগলের শাম্মী কুদ্দুস, মাস্টারকার্ড বাংলাদেশের মোহাম্মদ কামাল এবং ভিসার সাব্বির আহম্মেদ।

এএইচএস/এএ