Logo

অর্থনীতি

আটকে আছে নতুন টাকা বিতরণ, প্রশ্নের মুখে কেন্দ্রীয় ব্যাংক

আনোয়ার হোসাইন সোহেল

আনোয়ার হোসাইন সোহেল

প্রকাশ: ২৫ জুন ২০২৫, ১৬:২৯

আটকে আছে নতুন টাকা বিতরণ, প্রশ্নের মুখে কেন্দ্রীয় ব্যাংক

ঈদকে সামনে রেখে নতুন নোট বাংলাদেশি সংস্কৃতির একটি অংশ হয়ে দাঁড়িয়েছে। বিশেষত সালামি দেওয়ার জন্য নতুন টাকা সংগ্রহে জনসাধারণের আগ্রহ থাকে ব্যাপক। তবে এ বছরের ঈদুল আজহাকে ঘিরে বাংলাদেশ ব্যাংকের নতুন টাকা বিতরণ কার্যক্রম নিয়ে নানা অভিযোগ, বিতর্ক ও রাজনৈতিক চাপের প্রসঙ্গ উঠে এসেছে।

ঈদের আগেই বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আহসান হাবিব মনসুর ঈদের আগে নতুন নোট বাজারে ছাড়ার ঘোষণা দেন। তবে, প্রথম দফায় মোট ২০০ কোটি টাকার নতুন নোট ছাড়া হয়, যার মধ্যে ছিল মূলত ১০০০, ৫০ ও ২০ টাকার নোট। তবে সবচেয়ে বেশি চাহিদা ছিল ৫, ১০, ২০, ৫০ ও ১০০ টাকার নোটের, সেগুলোর বিতরণ সময়মতো শুরু হয়নি।

ব্যাংক সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, নতুন টাকা ছাপানোর কাজ নির্ধারিত সময়ের চেয়ে ধীরগতিতে হয়েছে। ফলে মে মাসের প্রথম সপ্তাহে বিতরণের ঘোষণা থাকলেও তা পিছিয়ে গিয়ে জুন মাসের প্রথমার্ধ পর্যন্ত কার্যকর হয়নি।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের টাকা ছাপানোর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সিকিউরিটি প্রিন্টার্স ডিপার্টমেন্টের কয়েকজন কর্মকর্তার ভাষ্য অনুযায়ী, অভ্যন্তরীণ সিদ্ধান্ত গ্রহণে অনিশ্চয়তা এবং নীতিনির্ধারকদের ভিন্নমতের কারণে ছাপার কাজ বারবার স্থগিত ও বিলম্বিত হয়েছে। কেউ কেউ বলছেন, নোটে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ছবি থাকবে কি না—এ নিয়ে সিদ্ধান্ত নিতে বিলম্ব হয়েছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, ঈদে নতুন নকশার পাশাপাশি শেখ মুজিবুর রহমানের ছবি যুক্ত পুরোনো নোটও ছাড়া হয়েছে। এর পেছনে বাংলাদেশের ব্যাংকের আওয়ামীপন্থী কর্মকর্তাদের চাপ ছিল।

অভিযোগ উঠেছে, একই সিন্ডিকেট নতুন টাকা ছাপানোর ক্ষেত্রে গড়িমসি করছে। যদিও বাংলাদেশ ব্যাংক এ বিষয়ে কোনো আনুষ্ঠানিক বক্তব্য দেয়নি।

নতুন ২০ টাকার নোটে কান্তজিউ মন্দিরের ছবি রয়েছে। এর আগে একই স্থানে ছিল বাগেরহাটের ষাটগম্বুজ মসজিদের ছবি। নতুন এই নকশা নিয়ে ঈদের আগে সামাজিক মাধ্যমে কিছু ধর্মীয় ও রাজনৈতিক বিতর্ক শুরু হয়। কেউ কেউ দাবি করেন, এটি মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশে ঈদের আগমুহূর্তে সংবেদনশীল একটি পদক্ষেপ।

বাংলাদেশ ব্যাংক এ বিষয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে কোনো ব্যাখ্যা দেয়নি। তবে নোটের নিরাপত্তা বৈশিষ্ট্য ও নান্দনিকতা রক্ষায় বিভিন্ন ঐতিহাসিক স্থাপনার ছবি ব্যবহারের নীতিই বরাবর অনুসৃত হয়ে আসছে।

নতুন ডিজাইনের টাকা পাওয়ার পর ভোগান্তির আরেক কারণ হয়ে দাঁড়ায় সিআরএম ব্যবস্থার ত্রুটি। অনেক গ্রাহক অভিযোগ করেন, নতুন নোট সিআরএম মেশিনে গ্রহণ করা যাচ্ছে না। এতে নগদ জমা ও উত্তোলন উভয় কার্যক্রমে বিঘ্ন ঘটে।

ইসলামী ব্যাংকের অতিরিক্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক ইঞ্জিনিয়ার মোহাম্মদ জামাল উদ্দিন মজুমদার বলেন, এটিএমে কোনো সমস্যা নেই। কিন্তু  সিআরএমের ক্ষেত্রে যে সমস্যা সেটার জন্য ভেন্ডরের সঙ্গে আমাদের যোগাযোগ হয়েছে। তারা জানিয়েছে এক সপ্তাহের ভেতরে এটা হয়তো সমাধান হবে।

যেখানে ব্যাংক থেকে নতুন টাকা পাওয়া যাচ্ছিল না, সেখানে বাংলাদেশ ব্যাংকের সামনের ফুটপাতে বা গুলিস্তান এলাকায় প্রতিটি হাজার টাকার বান্ডিলে ৮০০ থেকে ১০০০ টাকা পর্যন্ত অতিরিক্ত মূল্য দিয়ে বিক্রি হয়েছে। অনেকেই অভিযোগ করেন, নতুন টাকার কৃত্রিম সংকট তৈরি করে একটি সিন্ডিকেট অসাধু মুনাফা করেছে।

তবে বাংলাদেশ ব্যাংক বলছে, তারা বিষয়টি পর্যবেক্ষণ করছে এবং প্রয়োজনে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে জানানো হবে।

এই বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মো. আরিফ হোসেন খান বাংলাদেশের খবরকে বলেন, নতুন টাকা ছাপার কাজ নিয়মিত চলছে। জুলাইয়ের ২২ তারিখের মধ্যে ২০, ৫০ ও ১০০ টাকার নোট আর আগস্টে ১০ ও ৫ টাকার নোট পাওয়া যাবে।

তিনি আরও জানান, সিআরএম সংক্রান্ত সমস্যাও দ্রুত সমাধানের পথে আছে। আমরা চেষ্টা করছি যেন ঈদের সময় ও পরবর্তী সময়েও কোনো সংকট না থাকে।

সিআরএম মেশিনে নতুন টাকা ব্যবহারের বিষয়ে মুখপাত্র বলেন, এটিএমে নতুন নোট ব্যবহার সহজ হলেও সমস্যা হচ্ছে সিআরএম মেশিনে। এটা নিয়ে সিআরএম মেশিন সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে আলোচনা হয়েছে। যা আগামী ১০ থেকে ১৫ দিনের মধ্যে সমাধান হবে।

এএইচএস/ওএফ

প্রাসঙ্গিক সংবাদ পড়তে নিচের ট্যাগে ক্লিক করুন

বাংলাদেশ ব্যাংক

Logo
সম্পাদকমণ্ডলীর সভাপতি মোস্তফা কামাল মহীউদ্দীন ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক সৈয়দ মেজবাহ উদ্দিন প্রধান, ডিজিটাল সংস্করণ হাসনাত কাদীর